বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
ইমতিয়ার ফেরদৌস সুইট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রচার প্রচারণায় জমে উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাচন। আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে ঘিরে জেলার পাঁচ উপজেলার চার পৌরসভা ও ৪৫টি ইউনিয়ন চষে বেড়াচ্ছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। প্রচারণায় গিয়ে ভোটারদের শোনাচ্ছেন তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা।
ভোটাররাও ভাবতে শুরু করেছেন কাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করলে তাদের এলাকার উন্নয়ন হবে এবং সুখে দুঃখে তাদের পাশে থাকবে। এছাড়া জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ১৫টি ওয়ার্ডের সদস্য ও ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য প্রার্থীরাও। এবারের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মঈনুদ্দীন মন্ডল (জীপগাড়ি প্রতিক), আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান তোতা (চশমা প্রতিক), সাবেক বিএনপি নেতা চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ (তালগাছ প্রতীক), গোমস্তাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম বাচ্চু (আনারস প্রতীক) ও জেলা জাতীয় পাটির সিনিয়র সহসভাপতি মো.আলাউদ্দিন টিপু (মোটরসাইকেল প্রতীক)।
নির্বাচনী মাঠ ঘুরে জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মঈনুদ্দীন মন্ডলের সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার কথা থাকলেও পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মঈনুদ্দীন মন্ডলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান তোতা। ভোটাররা বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মঈনুদ্দীন মন্ডলের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তোতা। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচন অংশ নিয়েই আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির দুই সাবেক নেতা আবদুল ওয়াহেদ ও খুরশিদ আলম বাচ্চু। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ উপজেলা পরিষদ, ৪ পৌরসভা ও ৪৫টি ইউনিয়নে বিএনপি ও জামায়াত থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটকে টার্গেট করেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন এই দুই সাবেক বিএনপি নেতা। এছাড়া আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মঈনুদ্দীন মন্ডল বিরোধী ভোটগুলো নিজেদের বাক্সে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন ওয়াহেদ, তোতা ও বাচ্চু। তবে খুব একটা আলোচনায় নেই অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী জাতীয় পাটি নেতা আলাউদ্দিন টিপু। অন্যদিকে দলের মনোনয়নে নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীদের ভোট পাবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মঈনুদ্দীন মন্ডল। পাশাপাশি উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগের বাইরে থাকা জনপ্রতিনিধিরাও তাকে ভোট দিবেন বলে আশা করছেন তিনি। জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী মঈনুদ্দীন মন্ডল জানান বিদ্রোহী প্রার্থী তোতা তার বিজয়ে কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না। জেলার চরাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো অবহেলিত। পর্যাপ্ত রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে কোন কোন ইউনিয়নে ইউপি ভবন পর্যন্ত নেই। তাই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে অবহেলিত ইউনিয়নগুলোয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়নমুলক কর্মকান্ড শুরু করবেন তিনি।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জিয়াউর রহমান তোতা বলেন, গত ৫ বছরে জেলা পরিষদের প্রশাসক থাকা কালে মঈনুদ্দীন মন্ডল কোন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন নি। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে মঈনুদ্দীন মন্ডল বিগত পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যে জড়িয়ে অযোগ্যদের দলের মনোনয়ন দেয়ায় অধিকাংশ জায়গায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এসব বিষয়গুলো নিয়ে ভোটাররা তার ওপর বিরক্ত। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে ভোটাররা তাকেই নির্বাচিত করবেন বলে দাবি করেন তিনি। তিনি জানান, নির্বাচিত হলে সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার নদী ভাঙন কবলিত চরাঞ্চলের উন্নয়ন ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের বিষয়গুলোর ওপর নজর দিবেন।
অন্যদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক বিএনপি নেতা চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্র্রির সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ জানান, এই নির্বাচনের ভোটাররা জনপ্রতিনিধি হওয়ায় সৎ ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই তারা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন। তিনি দাবি করে বলেন, অবাধ ও নিরেপক্ষ পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিতে পারলে এবং নির্বাচনের ফলাফল সুষ্ঠু হলে তার বিজয় সুনিশ্চিত। তিনি নির্বাচিত হলে অবহেলিত এলাকাগুলোর উন্নয়নের পাশাপাশি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী গোমস্তাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম বাচ্চুও জয়ের ব্যাপারে দারুন আশাবাদী। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে জেলার প্রতিটি উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়নে সুসম উন্নয়ন করবেন তিনি। এছাড়া বরেন্দ্র এলাকায় বিরাজমান খাবার পানির সঙ্কট ও বেকারত্ব দূরিকরণেও কাজ করার কথা জানান তিনি।
আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৫টি কেন্দ্রে জেলার পাঁচটি উপজেলা পরিষদ, চার পৌরসভা ও ৪৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত ৬৫৯ জন জনপ্রতিনিধি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাড়াও ১৫টি ওয়ার্ডে ৪৫ জন ও ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।