চাঁপাই সীমান্তে দুই দেশের নাগরিকদের সংঘর্ষ, নিয়ন্ত্রণ হলো সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর, উত্তেজনা চলছে বিএসএফের দুঃখ প্রকাশ

আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২৫, ১০:১৭ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক


ফসল ও গাছ কাটা নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরনগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় ও বাংলাদেশিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চৌকা-কিরণগঞ্জ সীমান্তে দিনভর উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ছিলো। তবে সীমান্ত এলাকায় এখন উত্তেজনা চলছে। বিকেল সাড়ে ৪টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)- ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী (বিএসএফ) পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে কাজ করেছে।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের চৌকা ও কিরণগঞ্জ বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ির মাঝামাঝি এলাকায় এ উত্তেজনা দেখা দেয়। দুপুর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতীয় সীমান্তে দুই দেশের নাগরিকেরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন।

এ সময় ভারতীয় নাগরিকদের হামলায় পাঁচ বাংলাদেশি আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতরা হলেন- উপজেলার কালিগঞ্জ মালোপাড়ার গ্রামের ফারুক (৩৫), বিশ্বনাথপুর গ্রামের ঝাইটনের ছেলে আসমাউল (১৬) ও একই গ্রামের রনি, বিনোদপুর ইউনিয়নের কালীগঞ্জ নামোটোলা এলাকার যুবক মেসবাহুল হক ও কালিগঞ্জ গ্রামের জিন্নুরের ছেলে তরিকুল (৫৫)।

সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, আজ দুপুরে সীমান্তের শূন্যরেখার পাশে বাংলাদেশের ভেতরের জমিতে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন দুই যুবক। এসময় ফসলি জমি বিনষ্টের অভিযোগ তুলে তাদের মারধর করেন ভারতীয়রা। পরে তারা বাংলাদেশের ভেতরের কয়েকটি আমগাছ কেটে দেন এবং ফসলি জমি বিনষ্ট করেন। এতে ক্ষিপ্ত বাংলাদেশিরা সীমান্তে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এসময় বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। ভারতীয় নাগরিকদের হাঁসুয়ার আঘাতে ও তাদের ছোড়া পাথরে পাঁচ বাংলাদেশি আহত হয়েছেন।

এর আগে চৌকা সীমান্তের ওপারে ভারতের সুখদেবপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করেছিল। তখন চৌকা সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছিল। বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. বাদশা জানান, সীমান্তে গম কাটা নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। ভারতীয় লোকজন বাংলাদেশ অংশে ঢুকে পড়লে উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়।

ভারতীয়দের হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হয়েছেন বিনোদপুর ইউনিয়নের কালীগঞ্জ নামোটোলা এলাকার যুবক মেসবাহুল হক। তিনি বলেন, তিনিসহ মোট চারজন আহত হয়েছেন। অন্য দুজনের মধ্যে বিশ্বনাথপুর গ্রামের মো. রনি ভারতীয়দের ছোড়া পাথরের আঘাতে ও মো. ফারুক হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হয়েছেন।

এদিকে, বিকেলে পতাকা বৈঠক হয়েছে বিজিবি ও বিএসএফ মধ্যে। পতাকা বৈঠকের পর পরিস্থিতি এখন থমথমে। বিজিবির ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বিকেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, চৌকা ও কিরণগঞ্জ ক্যাম্পের মাঝামাঝি সীমান্ত পিলার ১৭৭ বরাবর বাংলাদেশের ভেতরে কিছু আমগাছ ছিল। ওই আমগাছ কাটা নিয়ে ভারতীয় নাগরিক ও বাংলাদেশি নাগরিকের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

তখন শূন্যরেখা বরাবর দুই দেশের নাগরিকেরা দাঁড়িয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বিজিবির জনবল বাড়ানো হয় এবং তারা ঘটনাস্থলে চলে আসেন। পরে বিকেল চারটা ১০ মিনিটে বিজিবি ও বিএসএফের কমান্ডার পর্যায়ে একটি পতাকা বৈঠক হয়। যেখানে এ ঘটনার জন্য বিএসএফের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করার পাশাপাশি গাছ কাটার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

বর্তমানে বিজিবি সদস্যরা সীমান্তে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন। এই ঘটনায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমাদের চৌকা এবং কিরণগঞ্জ দুটি বিজিবি ক্যাম্পের মাঝামাঝি স্থানে ১৭৭ এর ৩এস বরাবর বাংলাদেশি কিছু আমগাছ ছিল। বাংলাদেশের আমগাছ কাটাকে নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দুই দেশের মানুষ শূন্যরেখা বরাবর দাঁড়িয়ে যায়।’

বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল বলেন, ‘আমরা বিজিবির জনবল বৃদ্ধি করেছি। বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে বিজিবি ও বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছে। বিএসএফের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে, যে গাছগুলো কাটা হয়েছে, অন্যায় হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে তারা এটা ব্যবস্থা নেবে। সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে আছি। কেউ যেন শূন্যরেখা অতিক্রম না করে, উত্তেজনাকর পরিবেশ প্রশমিত করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। বিজিবির পাশাপাশি দেশপ্রেমিক জনগণ আমাদের পাশে আছে।পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।

অভিযোগ উঠেছে বিজিবি সদস্যসহ কয়েকজন আহত হয়েছে এবং বিএসএফ বোমা নিক্ষেপ করেছেÑগণমাধ্যমকর্মীরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এটা হচ্ছে আমাদের মব কন্ট্রোল করার জন্য উল্লেখযোগ্য আহত হওয়ার পরিসংখ্যান নেই। বিএসএফের কেউ আহত বা নিহত হয়েছে কি না আমরা এখনো জানতে পারিনি।

মব কন্ট্রোল করার জন্য ওরা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে। আমি বিজিবি মহাপরিচালককে বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করেছি। আশা করি, বিজিবি ও বিএসএফ সদর দপ্তর উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করবেন,’ যোগ করেন তিনি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ