নিজস্ব প্রতিবেদক:
পবা ও বোয়ালিয়া ছিল রাজশাহী-২ আসন। ২০০৮ সালে তা ভেঙে শুধু সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে করা হয় রাজশাহী-২। ২০০৮ সালে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মিজানুর মিনুকে ভোটে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন ফজলে হোসেন বাদশা। টানা চতুর্থবারের মতো এই আসন থেকে ১৪ দলের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা। এবার এই প্রার্থী ছাড় দিতে নারাজ জোট প্রার্থীকে।
এই আসন থেকে সাতজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তারা হলেনÑ ১৪ দলের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা, স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, জাসদ (ইনু) প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন, বিএনএম প্রার্থী কামরুল হাসান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মারুফ শাহরিয়ার ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী ইয়াসির আলিফ বিন হাবিব।
অন্য চার প্রার্থীর প্রচারণা চোখে না পড়লেও নৌকা ও কাঁচি প্রতীকের প্রচারণা ছিল সবচেয়ে বেশি। এই দুই প্রার্থীর মতো দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট প্রার্থনা করেছেন জাসদ প্রার্থী। তিনিও এই নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন শুধু প্রচারণা চালিয়ে। তবে জনসমর্থনে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা। চকিত জরিপে অংশ নেয়া ৭০ শতাংশ মনে করছেন এবার এই আসনে পরিবর্তন দরকার।
গেল পাঁচদিন থেকে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় চালানো হয় চকিত জরিপ। জরিপের তথ্য বলছে, এই নির্বাচনে কাঁচির জনসমর্থন ভালো থাকলেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে নৌকা প্রার্থীর সাথে। নৌকা প্রার্থী এই আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়ে ভালো সাড়া ফেলেছে কাঁচি প্রতীক। তবে চূড়ান্তভাবে শেষ হাসি কে হাসবেন ভোটের ফলাফলে জানা যাবে।
চকিত জরিপে অংশ করা হয় রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার ৯৮০ জনকে। নগরীর সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, নওদাপাড়া, ভদ্রা, তালাইমারী, কোর্ট, কাশিয়াডাঙ্গা, মেহেরচণ্ডি, বিনোদপুর, কাজলাসহ বিভিন্ন এলাকায় এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে অংশ করা হয় বিভিন্ন বয়সের ভোটারদের। এর মধ্যে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী ছিল সবচেয়ে বেশি। সংখ্যায় তাদের অংশগ্রহণ ছিল ৩৮০ জনের মতো। ৩০ থেকে ৪০ বছরের ছিল ২২০। ৪০ থেকে ৫০ বছরের ছিল ২১০ জন ও ৫০ থেকে ৬০ বছর ছিল ১৭০ জন। এর শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, গৃহিণীসহ নানা পেশার মানুষ।
জরিপে অংশ নেয়া বেশিরভাগই ভোটারই চেয়েছে এই আসনে পরিবর্তন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দীর্ঘদিন থেকে যিনি এই আসনে সংসদ সদস্য হয়ে আছেন। তিনি সংসদ থাকা অবস্থায় নিষ্ক্রিয়তার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি নিজেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে থেকেছেন। সাধারণ মানুষের সাথে সম্পর্কোন্নয়নেও তাকে আগ্রহী দেখা যায়নি।
জরিপে অংশ নেয়া অর্ধেকেরও বেশি ভোটার বলেছেন, এবার কাঁচি প্রতীক বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। এই প্রতীকের প্রার্থী অল্প সময়ে এসে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তবে জরিপের ৩০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, এ আসনে আবারও নৌকা জিতবে। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, বর্তমান উন্নয়নে নৌকা প্রতীকের বিকল্প দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করলে অন্য প্রার্থী জয়ী হলে হয়তো উন্নয়নে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এই জরিপে অংশ নেয়া নতুন ও তরুণ ভোটারদের চাওয়া কর্মসংস্থান। নতুন ও তরুণ ভোটাররা বলেছেন, কর্মসংস্থানের দিক থেকে পিছিয়ে রাজশাহী। এই জেলায় যদি ভালোভাবে কর্মসংসংস্থান সৃষ্টি হয় তাহলে আর কেউ বেকার থাকবে না। কোন প্রার্থী কর্মসংস্থানের উপরে জোর দিচ্ছে তাও লক্ষ্য করেছেন এই ভোটাররা। সে দিক থেকে নৌকা প্রতীকের চেয়ে কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা জানিয়েছেন। এছাড়াও যারা উদ্যোক্তা হতে চাচ্ছেন তাদের সহায়তার বিষয়টি এসছে জরিপে। নতুন ও তরুণদের ভোটও বেশিরভাগ কাঁচির দিকে যাবে বলে মনে করেছেন অংশগ্রহণকারীরা।
মধ্যে বয়সী ভোটাররা বলেছেন, রাজশাহী মহানগরী পরিবর্তনের কারিগর সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এই আসনে সংসদ সদস্যদের তেমন কাজ থাকে না। তবুও এখানে সংসদ সদস্য আছেন। সিটি মেয়রের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে মহানগরী আরও পরিবর্তন হবে। একজন টানা ১৫ বছর এমপি ছিলেন। এবার পরিবর্তন হয়ে অন্য কেউ আসলে হয়তো আরও ভালো হবে। এখানে বেশ কিছু প্রকল্পও পাওয়া যাবে।
তবে এর মধ্যে ভোট দিতে যাবেন না অনেকেই। তারা বলছেন, এই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের মতো দল নেই। এই দলগুলো থাকলে নির্বাচন আরও জমে উঠতো। প্রতিটি আসনে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যেত। এবারের প্রার্থী আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ। নির্বাচন সুষ্ঠু নাও হতে পারে বলে মনে করেন তারা।
জরিপে ৭০ শতাংশই বলছেন নতুন প্রার্থী হিসেবে অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা জয়লাভ করবেন। বর্তমানে তার বিকল্পও দেখা যাচ্ছে না। মূল লড়াইটা নৌকার সাথে কাঁচির হলেও প্রচারণায় নজর কেড়েছে জাসদের মশাল প্রতীক।
এর আগে ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে নির্বাচনি প্রচারণা। এই প্রচারণা শেষ হয়েছে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ৮ টায়। এ আসনে প্রার্থীরা বিরামহীনভাবে গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নির্বাচনি মাঠে প্রচারে এগিয়ে এবং ভোটারদের মধ্যে গণজোয়ার সৃষ্টি করার লক্ষে মাঠে তৎপর হয়ে উঠেছেন সব প্রার্থী।
উল্লেখ্য, জরিপটি দৈনিক সোনার দেশের নিজস্ব।