শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
সকল প্রকার জুলুম-নির্যাতনের অবসান, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ও হারানো চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১১ টায় জয়পুরহাট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন অবৈধভাবে চাকুরী হারানো মাদ্রাসার সুপার মাসুদ মোস্তফা দেওয়ান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, তাকে পদচ্যুত করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত, বেআইনী ও এখতিয়ারহীনভাবে থানা নির্বাহী অফিসার স্বারক-৭২৩ তাং-৬ ডিসেম্বর ১৯৯৯ তারিখে কোন প্রকার তদন্ত বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই ৭ দফা ভিত্তিহীন অভিযোগে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এ বিষয়ে ২২৪/২০০০ নং রীট মোকদ্দমা দায়ের করলে সে বহিস্কারাদেশ মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে স্থগিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো দাবি করা হয়, একটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাকে ১২ এপ্রিল ২০০১ তারিখে জেল-হাজতে নেওয়ার কারণ দেখিয়ে ১৫ এপ্রিল ২০০১ তারিখের এডহক কমিটির মিটিং-এর বরাতে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু এই বহিস্কারাশের কোন কপি অভিযুক্তকে দেওয়া হয়নি। মূলত, ১২ এপ্রিল ২০০১ তারিখ ছিল কথিত কমিটির প্রথম মিটিং। যা ৬ মাসের জন্য অনুমোদন লাভ করেছিল মাদ্রাসা বোর্ডের স্মারক-১০২৭/৬/জয়-৮২ তারিখ-২ মে ২০০১-এর মাধ্যমে। এই কমিটি ভূয়া ও জালিয়াতিমূলক। মূলত, আমার রীট মোকদ্দমার প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের তদানীন্তন রেজিষ্ট্রার তমিজ উদ্দীন, তদানীন্তন জয়পুরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ফজলুল করিম এবং মাদ্রাসার সহ-সুপার আয়োজ উদ্দীন যোগসাজসে। এই ভূয়া কমিটি গঠনের মাধ্যমে তাকে চাকরিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র ও তা বাস্তবায়ন করেন। মাদ্রাসায় এখন পর্যন্ত কোন বৈধ কমিটি নেই বলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেছেন।
২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৬ তারিখে সন্ত্রাসী সহ-সুপার নেতৃত্বে কতিপয় সন্ত্রাসীরা তাকে প্রকাশ্য দিবালোকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় এবং শারীরিকভাবে ব্যাপক নির্যাতন করে চাকুরী থেকে ইস্তাফাপত্র, কতিপয় স্ট্যাম্প, ডেমি ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে গুরুতর যখন অবস্থায় রাস্তায় ফেলে যায়। সহ-সুপারের বর্ণচোরা দলবাজী ও সব সময় ক্ষমতাসীনদের সাথে সখ্যতার কারণেই তিনি এতোদিন প্রকৃত সত্য কারো কাছে প্রকাশ করতে পারেন নি। এরপর ০৬ সেপ্টেম্বর ২০০১ তারিখে তাকে পদত্যাগ দেখিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর ২০০১ তারিখের মাদ্রাসার কথিত (ভূয়া ও জাল-জালিয়াতিমূলক) এডহক কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসের স্বারক নং ৬১২ তাং ১২ সেপ্টেম্বর ২০০১ মূলে তার পদ শূণ্য ঘোষণা করা হলেও বিষয়টি তাকে জানানো হয়নি। এমনকি এই পদত্যাগ পত্র গ্রহণের সিদ্ধান্ত বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষকদের চাকুরীবিধি অনুযায়ি হয়নি।
বেসরকারি মদ্রাসা শিক্ষকগণের চাকুরীবিধি, ১৯৭৯-এর ধারা ৫ (চাকরিতে ইস্তাফা দান)-এ সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘একজন নিয়মিত শিক্ষকতার চাকুরী থেকে (১) যেকোন শিক্ষাবর্ষের প্রথম ৬ মাসের মধ্যে এক মাস পূর্বে নোটিশের মাধ্যমে ইস্তাফা দিতে পারেন, (২) কোন শিক্ষাবর্ষের শেষ ৬ মাসের মধ্যে ইস্তাফা দিতে হলে তিনি পূর্বে লিখিত আবেদন পেশ করবেন’। তার কথিত পদত্যাগ পত্র শিক্ষাবর্ষের শেষ ৬ মাসের মধ্যে হওয়ায় ৩ মাস আগে লিখিত নোটিশ পেশ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও মাত্র ৫ দিনের মধ্যেই তা গ্রহণ করে আইনের গুরুতর ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। এছাড়া সে সময় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে চাকুরী সংক্রান্ত তার একটি রীট মোকদ্দমা বিচারাধীন ছিল। সর্বোপরি তার পদত্যাগ গ্রহণ করার পরও তাকে বকেয়া বেতন-ভাতা এবং কল্যাণ তহবিলের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। তিনি কারো কাছে দায়িত্বও হস্তান্তর করেন নি।
যে কমিটিতে তার ইস্তাফাপত্র গ্রহণ করা হয়েছে সে কমিটিও ছিল জাল জালিয়াতিমূলক ও অবৈধ। তার দাবি মতে, দখলদার ও তথাকথিত সুপার আয়েজ উদ্দীনের নেতৃত্বে একটি দখলদার ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাদ্রাসাটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দখলে রেখেছে। তারা তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে জোরপূর্বক চাকুরী থেকে বিতাড়ন করার কারণে ১০ সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি বিপর্যস্ত জীবন যাপন করছেন। এমতাবস্থায় অনতিবিলম্বে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে পুরো মাদ্রাসার ওপর তদন্ত, দখলদার ও অবৈধ সুপার আয়েজ উদ্দীন সহ তার সন্ত্রাসী সহযোগীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং তাকে চাকুরীতে পুনর্বহালের বিনীত আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় প্রশাসন সহ মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা ও মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, জনগণের আশা-আখাংকার এই বিপ্লবী সরকার ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ও আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।