চাঞ্চল্যকর সোহাগ হত্যা মামলায় এবার ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই গ্রেপ্তার

আপডেট: এপ্রিল ৪, ২০২৪, ১১:৫৩ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:যশোরের চাঞ্চল্যকর সোহাগ হোসেন (২২) হত্যা মামলায় এবার রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ঝিকড়া ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ভাই আসাদুল ইসলামকে (৪৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‌্যাব-৫ এর একটি দল বুধবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করে।

নিহত সোহাগের বাবা আদালতে করা হত্যা মামলায় যে আর্জি দিয়েছিলেন তাতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম এক নম্বর আসামি। এছাড়া তার ভাই আসাদুলকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। এ হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত পুলিশ দুজনকে ও র‌্যাব তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। আর গ্রেপ্তার হওয়া এ পাঁচজনই নিহত সোহাগের বাবার দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

সোহাগ যশোরের মনিরামপুর উপজেলার আড়শিংগাড়ী গ্রামের শরীফ উদ্দিনের ছেলে। তবে সোহাগ থাকতেন ঢাকায়। সোহাগ হত্যাকাণ্ডে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ঝিকড়া ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে মামলায় এক নম্বর আসামি হলেও তিনি এখনও গ্রেপ্তার হননি। এর মধ্যেই গত ৩০ মার্চ এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাগমারার যোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক নয়ন হোসেন রফিকুল ইসলামকে পাশে বসিয়ে ইফতার করেন। আর পুলিশ ফাঁড়িতেই ওই ইফতারের আয়োজন করা হয়েছিল।

র‌্যাবের কাছে গ্রেপ্তার সোহাগ হত্যা মামলার আসামি আসাদুল ইসলাম বাগমারা উপজেলা বি.এন.পি’র সাবেক-সভাপতি আবদুল হামিদ মরু হত্যা মামলারও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তবে উচ্চ আদালতে আপিল করার পর জামিনে বাইরে ছিলেন তিনি। এছাড়া বাগমারা দুগুলপাড়া গ্রামের ওমর আলী হত্যা মামলারও তিনি আসামি। ২০০৬ সালে ওমর আলীকে হত্যা করা হয়েছিলো। মামলাটি এখন বিচারাধীন। এছাড়া মারামারি-চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে তার নামে।

র‌্যাব-৫-এর রাজশাহীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় র‌্যাব সদস্যরা আসাদুলকে গ্রেপ্তারের জন্য তার বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় আসাদুল পাশের ভুট্টাক্ষেত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে তাকে ধাওয়া করে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত রাতেই তাকে বাগমারা থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, খুন হয়ার আগে ঢাকায় থাকতেন সোহাগ। সেখানে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মরুগ্রাম-ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মনোয়ার ইসলামের সাথে বন্ধুত্ব হয় তার। গত ২ ফেব্রুয়ারি সকালে নজরুলের লিজ নেয়া পুকুরপাড়ে নিজেদের সরিষাক্ষেতে যায় মনোয়ার। এ নিয়ে প্রতিপক্ষ আসাদুলের লোকজন মনোয়ারের সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তারা মনোয়ারকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেন।

আর বন্ধুর আহত হওয়ার খবর পেয়ে ঢাকা থেকে সোহাগ তার আরও দুই বন্ধুকে নিয়ে মনোয়ারকে দেখতে আসেন বাগমারায়। এ সময় গ্রামে ‘ভাড়াটে সন্ত্রাসী’ আনা হয়েছে অভিযোগ তুলে আসাদের লোকজন ওই তিন তরুণের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুজন পালিয়ে প্রাণে বাঁচলেও মাঠের মধ্যে পিটিয়ে ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে সোহাগকে হত্যা করা হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।

এ ঘটনার পর রাতেই নিহত সোহাগের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম সাগর বাগমারায় আসেন। সেদিন পুলিশ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে তাকে দিয়ে একটি হত্যা মামলা করায়। ওই মামলায় আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ না করে জড়িত অনেককে বাঁচানোর চেষ্টার অভিযোগ তোলেন নিহত সোহাগের বাবা শরীফ উদ্দিন। পরে ২ ফেব্রুয়ারি তিনি ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে হত্যা মামলার আর্জি জমা দেন। আদালত তার আর্জি গ্রহণ করেন। তবে একই ঘটনায় দুজন বাদী হয়ে আলাদা মামলা করা হয় না বলে আদালত আগের মামলাটির সঙ্গেই নতুন মামলাটির তদন্ত করে একসঙ্গেই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ