রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
পাবনা প্রতিনিধি
পাবনার চাটমোহর উপজেলার এনায়েতুল্লাহ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইসহাককে প্রকাশ্য দিবালোকে জোরপূর্বক মাদ্রাসা থেকে বের করে দেবার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল দশটার দিকে তার কক্ষে গিয়ে বাক বিতণ্ডার এক পর্যায়ে চাবি ও ফাইলপত্র কেড়ে নিয়ে তাকে জোরপূর্বক মাদ্রাসা থেকে বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর ও বিএনপি সমর্থিত কিছু লোকজন।
এ সময় একই মাদ্রাসার সহকারি অধ্যাপক রবিউল করিম বাচ্চুর গলায় ফুলের মালা পরিয়ে তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে চেয়ারে বসিয়ে উল্লাস করেন তারা। পরে তারা মিষ্টি মুখ করেন। এ সময় মাদ্রাসার কিছু শিক্ষক সেখানে উপস্থিত থাকলেও তারা ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করেননি।
ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইসহাক।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইসহাক তার অভিযোগে জানান, ’বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মাহাতাব হোসেন, চাটমোহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোকলেছুর রহমান বিদ্যুৎ, স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম সরকারের নেতৃত্বে এলাকার কিছু লোকজন আমার কক্ষে আসেন। তারা আমাকে আওয়ামীলীগের দোসর, আওয়ামীলীগের লোকজনকে নিয়ে কমিটি করেছি, বালুচরের মানুষকে কমিটিতে রাখি নাই কেন, আমি কোন ক্ষমতাবলে চেয়ারে আছি এমন বিভিন্নরকম প্রশ্ন করেন। এক পর্যায়ে তারা যাকে খুশি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বানাবে বলে আমাকে চেয়ার ছেড়ে দিতে বলেন এবং চাবি বুঝিয়ে দিয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। আমি তাদের নানাভাবে আমার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকার বৈধতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করলেও তারা কোনো কথাই শোনেননি। তখন আমি সম্মান রক্ষোর্থে চলে আসছি। পরে তারা মাদ্রাসায় তালা ঝুলিয়ে দেন।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবিদার রবিউল করিম বাচ্চু বলেন, ‘নিয়োগকালীন সময়ে ম্যানেজিং কমিটি রেজুলেশন করে আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু মাওলানা ইসহাক সাহেবকে বারবার বলার পরও তিনি আমাকে কখনও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। আজ এলাকাবাসী তাকে সরিয়ে আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছেন।’
ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত ও রেজুলেশন ছাড়া কেউ কি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জোরপূর্বক বের করে দিয়ে আপনাকে চেয়ারে বসিয়ে দিতে পারে কি না এবং আপনি বসতে পারেন কি না-এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি রবিউল করিম বাচ্চু। চেয়ার বসার আগে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইউএনও সাহেব জানতেন না বলেও স্বীকার করেন তিনি।
জানতে চাইলে ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া চাটমোহর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোকলেছুর রহমান বিদ্যুৎ বলেন, বালুচর সমাজের মানুষের হাতে গড়া মাদ্রাসাটি। সমাজের লোকজনই এটা করছে। আমিও সমাজের মানুষের মধ্যে পড়ি। মাওলানা ইসহাক সাহেবের বৈধ কাগজপত্র নাই। এজন্য তাকে চলে যেতে বলা হয়েছে। রেজুলেশনে রবিউল করিমের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব রয়েছে।’
আপনি কি সেই রেজুলেশনটি পড়েছেন, সেখানে কি লেখা আছে জানতে চাইলে বলেন, ’পড়ি নাই। আমাকে বলছে। যার কাগজ আছে তাকেই বসাবো। একজনকে সরিয়ে আরেকজনকে চেয়ারে বসাতে পারেন কি না জানতে চাইলে বলেন, তা পারি না। সমাজের মানুষ বসিয়েছে।’
মাদ্রাসাটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেদুয়ানুল হালিম বলেন, ‘এ বিষয়ে সামনে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির একটি সভা আহবান করবো। সেখানে কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
একজন জৈষ্ঠ শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানকে দিনে-দুপুরে অপমান করে বের করে দেয়া হলো এ বিষয়ে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে তার উত্তর না দিয়ে একই সুরে কথা বলেন ইউএনও।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন মাদ্রাসার সিনিয়র আরবী শিক্ষক মাওলানা আবু ইসহাক। মাদ্রাসার নিয়োগ কার্যক্রমের জন্য ম্যানেজিং কমিটি মিটিংয়ের মাধ্যমে একই মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক রবিউল করিম বাচ্চুকে নিয়োগকালীন সময়ের জন্য সাময়িক সাচিবিক দায়িত্ব পালন করতে বলেন এবং মাওলানা আবু ইসহাককে মাদ্রাসার সমস্ত প্রশাসনিক কাজ করতে বলেন। পরবর্তীতে সরকারি এক ঘোষণায় নিয়োগের সকল কার্যক্রম বাতিল হয়ে যায়।
তারপর বিগত ৯ থেকে ১০ মাস মাদ্রাসার প্রশাসনিক সহ সকল কার্যক্রম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে মাওলানা আবু ইসহাক দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
কিন্তু নিয়োগকালীন সময়ের ওই রেজুলেশনের কথা বলে হঠাৎ করেই কিছুদিন ধরে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি শুরু করেন রবিউল করিম বাচ্চু। একইসাথে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইসহাকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অপপ্রচার চালান তিনি। তাতেও কুলিয়ে উঠতে না পেরে অবশেষে দ্বারস্থ হন স্থানীয় কাউন্সিলর সহ কিছু বিএনপি সমর্থক লোকজনের কাছে।