রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
পাবনা প্রতিনিধি:
পাবনার চাটমোহর উপজেলার বরদানগর দক্ষিণপাড়া গ্রামে এক গৃহবধূর সাথে অনৈতিক কাজের অভিযোগ উঠেছে একই গ্রামের মনিরুল ইসলাম মনি (৩২) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। ওই গৃহবধূর স্বামী তাদের এক ঘরের মধ্যে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পরে আশপাশের লোকজন এসে তাদের দু’জনকে আটক করে।
খবর পেয়ে গৃহবধূ ও অভিযুক্ত যুবককে উদ্ধার করে নিজ হেফাজতে নেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মনছুর রহমান বাবুল। কিন্তু এ বিষয়ে বিচারের আশ্বাস দিয়েও গত চারদিন ধরে কালক্ষেপন করছেন তিনি। অভিযোগ, বাবুল মেম্বার ও রেজাতুন্নেছা মেম্বার মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অভিযুক্ত যুবক মনিকে বাঁচানোর অপচেষ্টা করছেন ইউপি সদস্য ও তার স্বজনরা।
অন্যদিকে, কৌশল করে এলাকার কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় উল্টো জিডি করেছে অভিযুক্ত মনির স্বজনরা। আর বিচার না পেয়ে মেয়ে নিয়ে অসহায়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ওই গৃহবধূর বাবা।
গত ১২ জুন রাত আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত মনিরুল ইসলাম মনি বরদানগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত তোরাপ আলীর ছেলে। ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা সবাই একই গ্রামের বাসিন্দা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের বরদানগর দক্ষিনপাড়া গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালকের সংসারে স্ত্রী ও পৌনে দুই বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। সাথে তার বৃদ্ধ বাবাও দিনমজুরের কাজ করে সহযোগিতা করেন।
গত ১২ জুন ভ্যান চালিয়ে রাত আটটার দিকে বাড়িতে ফেরেন ভ্যানচালক যুবক। সেখানে ঘরের দরজা বন্ধ পেয়ে স্ত্রীকে ডাকাডাকি করেন। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলেই স্বামীকে আইসক্রিম কিনে আনতে জোড়াজুড়ি শুরু করেন স্ত্রী। তখন সন্দেহ হলে স্বামী লাইট মেরে ঘরের চৌকির নিচে মনিরুল ইসলাম মনি কে দেখতে পান। তাকে ধরে চিৎকার চেঁচোমেচি করে আশপাশের লোকজনকে ডাকা শুরু করেন।
এ সময় ভ্যানচালককে মারপিট করে হাত কামড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করে অভিযুক্ত মনি। পরে এলাকাবাসী এসে তাকে আটক করে উত্তম মাধ্যম দেয়। খবর পেয়ে জনরোষ থেকে বাঁচাতে গৃহবধূ ও অভিযুক্ত মনিকে নিজ হেফাজতে নেন স্থানীয় ৮ নম্বর ইউপি সদস্য মনছুর রহমান বাবুল ও ৭,৮,৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য রেজাতুন্নেছা।
ওইদিন রাতেই গ্রাম্য প্রধানদের নিয়ে বাবুল মেম্বারের বাড়িতে উভয়পক্ষকে নিয়ে মীমাংসার জন্য শালিশ বৈঠকে বসেন। কিন্তু গৃহবধূর স্বামী পক্ষের কেউ শালিসে উপস্থিত না হওয়ায় গৃহবধূকে মহিলা মেম্বারের হেফাজতে রাখা হয়। আর অভিযুক্ত যুবক মনি অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় তাকে চাটমোহর হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন উপস্থিত গ্রাম্য প্রধান ও ইউপি সদস্যরা।
পরদিন ১৩ জুন ওই গৃহবধূকে তার স্বামীর বাড়িতে জোরপূর্বক তুলে দেবার চেষ্টা করেন মহিলা মেম্বার রেজাতুন্নেছা। কিন্তু এতে রাজী হয়নি গৃহবধূর স্বামী ও তার পরিবার। এর মধ্যে অভিযুক্ত মনিকে বাঁচানোর কৌশল হিসেবে গ্রামের সাধারণ যুবকদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন মনির চাচাতো ভাই লিটন। এতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে।
এদিকে আপোষ মীমাংসার কথা বলে সময় নিয়ে কালক্ষেপন করে ঘটনা আড়ালের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে দুই ইউপি সদস্য মনছুর রহমান বাবুল ও রেজাতুন্নেছার বিরুদ্ধে। তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অভিযুক্ত যুবক মনিকে অভিযোগ থেকে বাঁচানোর নানা অপচেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর। ঘটনার চারদিন পার হয়ে গেলেও এখনও ঘটনার কোনো মীমাংসা করতে পারেননি তারা।
এলাকার ভুক্তভোগী কয়েকজন যুবক জানান, ‘চিৎকার শুনে আমরা ওই বাড়িতে গিয়ে ঘর থেকে মনিকে আটক করি। আমরা প্রতিবেশির বিপদ দেখে তো বসে থাকতে পারি না। তাদের ধরেই এখন আমরা যেন বিপদে পড়ে গেছি। মনির স্বজনরা আমাদের সাতজনের নামে থানায় উল্টো জিডি করে পুলিশ দিয়ে আমাদের হয়রানী করছে। এ বিষয়ে মেম্বার অপরাধীর পক্ষ নিয়েছেন।’
ভুক্তভোগী ভ্যানচালক বলেন, ‘আমি এই বউ নিবো না। কিন্তু মেম্বাররা আমাকে জোর করে চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। আবার আপোষ মীমাংসার কথা বলে শুধু ঘোরাচ্ছে। অভিযুক্ত ওই যুবককে ডেকে এনে বিচার শালিস করার কথা বলা হলেও মেম্বার তা করছেন না। বরং তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে নানাভাবে। আগে আমরা ওই ছেলের বিচার চাই।’
ওই গৃহবধূ বলেন, ‘গ্রামের একজনের দোকান থেকে বাকিতে সিট কাপড় কিনেছিলাম। সেইদিন সেখানে ওই ছেলে অভিযুক্ত মনি ছিল। টাকা পড়ে দেবে বলে চলে আসি। এরপর ঘটনার দিন দুপুরে ওই ছেলে মনি ফোন করে বলে টাকা দিয়ে যান। তখন আমি বলছিলাম, বিকেল চারটার দিকে বাড়িতে এসে টাকা নিয়ে যান। আর ছেলেটা সন্ধ্যার সাতটার পর বাড়িতে আসে। তখনও আমি তাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলি যে সমস্যা হবে, লোকজন সন্দেহ করবে। টাকা দেবার আগেই আমার স্বামী বাড়িতে আসার আওয়াজ পাই। তখন ওই ছেলে ভয়ে চৌকির নিচে পলায়। এছাড়া কিছু হয় নাই।’
অভিযুক্ত গৃহবধূর পিতা বলেন, ‘ঘটনার রাতে মেম্বারের বাড়িতে শালিসে গিয়ে দেখি শালিসকারক মেম্বার সহ কয়েকজন নিজেদের মধ্যে কওয়া বলা করছে এরকম যে, অভিযুক্ত ছেলে মনিকে এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তা না হলে মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। এভাবে সুস্থ্য ছেলেকে অসুস্থ্য কথা বলে নৌকায় করে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করছে তারা। আর এখন আমার মেয়েকে আমার ঘরে রেখে গেছে। অথচ যে দোষ করলো সেই ছেলের কিছুই হলো না। এখন আমার মেয়ের কি হবে। মেম্বার তো শুধু আজ কাল করে ঘুরাচ্ছে, কোনো সমাধান করলো না।’
এ বিষয়ে ৮ নম্বর ইউপি সদস্য মনছুর রহমান বাবলু বলেন, ‘আমরা শান্তির লক্ষ্যে ঘটনার পর থেকে আপোষ মীমাংসার চেষ্টা করে যাচ্ছি। সুবিধা নিয়ে অভিযুক্তকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ঘটনার রাতেই শালিসে বসেছিলাম কিন্তু মেয়েটার স্বামী ও তার স্বজনরা এবং ঘটনার স্বাক্ষীদের ডাকা হলেও তারা আসেনি। আর ছেলেটাও অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয় সবার সিদ্ধান্তে। এখানে কোনো সুবিধা নেওয়া বা কাউকে হুমকি ধামকি দেয়া হয়নি।’
চাটমোহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নয়ন কুমার সরকার বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো পক্ষ আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর থানায় জিডি করা বা কাউকে হয়রানী করার বিষয়েও কেউ কিছু জানায়নি। তবে যাতে কেউ হয়রানী না হয় সে বিষয়টি দেখা হবে। এ ঘটনার সাথে পুলিশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’