বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নজরুল ইসলাম বাচ্চু, চারঘাট
শীতের আগমনী বার্তায় রাজশাহীর চারঘাটে জমে উঠেছে শীতের পুরাতন কাপড় বিক্রির হিড়িক। রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত স্থানে ও বিভিন্ন বন্ধ দোকানের সামনে পুরাতন কাপড়ের পসরা বসিয়েছেন দোকানিরা। এছাড়াও অনেকে পরিত্যক্ত স্থানে বাশের চাটায় দিয়ে ঘিরে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
আর এসব দোকানদের সারা বছর দেখা না মিললেও শীতের আগমনী বার্তায় দেখা মেলে এদের। বছরের বেশির ভাগ সময় তারা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও শীতের প্রায় ৪/৫ মাস তারা ফুটপাতে পুরাতন কাপড় বিক্রি করে সংসার চালান। আর এসব ফুটপাতের কাপড় বিক্রেতাদের কদর সব চেয়ে বেশি ছিন্নমূল মানুষের কাছে। ছিন্নমূল মানুষেরা বড় বড় মার্কেটে তাদের চাহিদা মোতাবেক কাপড় কিনতে না পারায় তারা ভীড় জমায় এসকল ফুটপাতের দোকানে। ফলে বছরের প্রায় ৪/৫ মাস এসব ফুটপাতের কাপড় ব্যবসায়ীরাও স্বচ্ছলতার সঙ্গে তাদের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে সুখেই দিন পার করে থাকেন।
উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ বাজারে বসেছে পুরাতন কাপড় বিক্রির দোকান। বছরের ৪/৫ এ ব্যবসা করে ভালো ভাবেই সংসার চলে। উপজেলার চারঘাট ও হলিদাগাছী বাজারের ফুটপাতের কাপড় বিক্রেতা আশরাফ আলী বলেন, বছরের অন্য সময় আমি রিক্সা চালিয়ে সংসার চালায়। কিন্তু শীতের আগমন টের পেলেই আমি নাটোর থেকে পুরাতন কাপড় কিনে এনে ভ্যানে করে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে থাকি। এতে আমি শীতের ৪/৫ মাস সময় ভালোভাবে সংসার চালাতে পারি। সকাল নয়টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় বেচা বিক্রি করে আবার সন্ধ্যা লাগার আগেই বাড়ি ফিরে যায়। এতে আমার তেমন একটা কষ্ট লাগে না। তাছাড়া এ ব্যবসায় বেশি পূজি বিনিয়োগ করতে হয় না। অল্প টাকা পূজি লাগালেই ব্যবসা করা যায়। তার মতো অনেকেই বলেন এমন কথা। বছরের প্রায় সময় বিভিন্ন কাজে থাকলেও শীতের সময় এই ব্যবসা অনেকটা লাভজনক। তাছাড়া লোকসান হওয়ার ভয় থাকে কম।
সারদা বাজারে পুরাতন কাপড় কিনতে আসা চক গোচর গ্রামের রিক্সা চালক মতিন বলেন, আমরা গরীব মানুষ। তাই বড় বড় বাজারে গিয়ে কাপড় কিনতে পারি নি। তাই ফুটপাতে এসে বাচ্চাদের শীত নিবারণের কাপড় কিনছি। বড় বাজারে শীতের পোষাক যে দাম তাতে আমাদের মতো গরীব মানুষের শীত নিবারণ করা কঠিন। শুধু এই পুরাতন কাপড় বিক্রি দোকান আছে বলে আমার মতো অনেক গরীব মানুষ আজ শীত নিবারণের কাপড় কিনতে সক্ষম হচ্ছেন। তা না হলে শীতের চরম কষ্ট পেতে হতো।
চারঘাটে বাজারে আসা এক গৃহিনী আফরোজা জানান, পুরাতন কাপড় বিক্রি দোকানেও ভালো ভালো পোষাক পাওয়া যায়। যেসকল দোকানদার চট্রগাম থেকে পুরাতন কাপড় কিনে আনেন, তাদের নিকট আধুনিক পোষাকও কম দামে কেনা যায়। তাই এসব দোকানে ভিড় থাকে শীতের সময় বেশি। তার মেয়ে ছোটমনি নিশিতা বলেন, প্রতি বছরই পুরাতন শীতের কাপড় বিক্রি দোকানে বিকেল থেকে ভীড় হয় অনেক বেশি। আমার মা ও আমি শীতের কাপড় নিতে এসেছি। সব মিলিয়ে শীতের আগমনী বার্তায় চারঘাটে জমে উঠেছে পুরাতন কাপড় বিক্রি।