চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি:
রাজশাহীর চারঘাটে ফসলি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন থামছেই না। কয়েক বছর ধরে চলছে এই অবৈধ কার্যক্রম। অজ্ঞাত কারণে পুকুর খননর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না। ফলে অবৈধ পুকুর খনন উৎসাহিত হচ্ছে।
নির্বিচার পুকুর খননের ফলে ফসলি জমির পরিমাণ যেমন কমছে, তেমনই বাড়ছে সামাজিক বিরোধ। পুকুর খনন বন্ধে ভুক্তভোগী কৃষকরা সব সময় সোচ্চার থেকেছেন। জমি রক্ষায় তারা দফায় দফায় অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা ও জেলা প্রশাসনে।
কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। ব্যতিক্রম দু’একটি ক্ষেত্রে লোক দেখানো অভিযান করে খননকারীদের জরিমানাতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে প্রশাসন। কিন্তু দিন শেষে পুকুরখনন ঠেকানো যায়নি। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এক পর্যায়ে পুকুরখনন সম্পন্্ন হয়েছে। এখনো চলছে অব্যাহতভাবে পুকুরখনন। প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আল মামুন হাসান বলেন, কৃষি জমিতে পুকুরখনন বন্ধে জেলা প্রশাসনের সভায় নিয়মিত কথা উত্থাপন হয়। কৃষি জমির শ্রেণি বদল করে পুকুরখনন পুরোপুরি বেআইনি। কিন্তু কেনোভাবেই পুকুরখনন বন্ধ হয়নি। ফলে কৃষি প্রধান এ অঞ্চলে দিনেদিনে কৃষি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমছে।
ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, কোনো একটি এলাকায় পুকুরকাটা হলে তার আশপাশের কয়েকশো বিঘা কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে জমি পরিত্যক্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে পরিবেশে এবং ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, পুকুরখননে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এসি-ল্যান্ড থেকে শুরু করে থানাপুলিশ ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে পুকুরখনন বন্ধের ব্যবস্থার জন্য গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে অভিযোগকারীদের বিদায় করা হয়। পরে জানা যায়, স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চারঘাটে বাধাহীনভাবে চলছে পুকুরখনন। শেষ পর্যন্ত পুকুরখনন আর বন্ধ হয় না।
বরং একজনের দেখাদেখি অন্যরাও পুকুরখননে উৎসাহিত হচ্ছে। চারঘাট উপজেলাসহ আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলায় পুকুরখননে গড়ে উঠেছে দালাল সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেট পুকুর খননকারী ও স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও প্রভাবশালীদের মাঝে লেনদেনের দরদাম ও বন্দোবস্ত করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে চারঘাটে দিনদিন আবাদি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। এক সময় যে জমিতে আবাদ করা হতো ধান, গমসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল। আজ সেখানে শুধুই পুকুর আর পুকুর। যে মাঠের দিকে তাকালে সবুজ ফসলে কৃষকদের প্রাণ জুড়ে যেত, সেখানে এখন তাকালে শুধুই চোখে পড়বে পুকুর।
তিনি বলেন,এ অঞ্চলে পুকুরখননের মৌসুম শুরু হয় নভেম্বর থেকে জুন-জুলাই-বর্ষার আগ পর্যন্ত। শুধু চারঘাটেই নয়, পুকুরখনন হচ্ছে আশেপাশের পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা, দুর্গাপুর ও বাগমারায়। এসব উপজেলার যেদিকে তাকানো যায়, চোখে পড়ে শুধু পুকুর আর পুকুর। যেখানে এক সময় ফসলের সমারোহ দেখা যেত।
জানা গেছে, কৃষিজমি, খাল-বিল, নালা-ডোবার জমি নামমাত্র টাকায় ইজারা নিয়ে পুকুর খনন করছে প্রভাবশালী মহল। পুকুরখনন করে মাছচাষের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা যেমন পুকুরখননে ঝুঁকেছেন তেমনি জেলার বাইরের টাকাওয়ালা লোকজন পুকুরখননে কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন। ফলে চারঘাটে পাট, গম ও ধান চাষ কমেছে।
সরেজমিনে চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের জোতকার্ত্তি¦ক হিন্দুপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েক ব্যক্তির তিন ফসলি সাড়ে ১১ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন বিএনপির কয়েকজন নেতা। সেখানে করা হবে পুকুর। ফলে পুকুরখনন বন্ধ করতে এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।
এরই মধ্যে গত দুইদিন আগে সেখানে শুরু হয়েছে পুকুরখনন। সেই পুকুরখননকে কেন্দ্র করে গত দুইদিন আগে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। তারপরেও সেখানে অবাধে চলছে অবৈধ পুকুরখনন। পুকুরখননকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
এ দিকে জোতকার্ত্তিক হিন্দুপাড়ার পাশে নন্দনগাছী রেল লাইনের উত্তরে আরো একটি পুকুরখনন চলছে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে। সেই পুকুরখনন বন্ধে স্থানীয়রা একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করলেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
এদিকে চারঘাট সদর ইউনিয়নের তালবাড়িয়া, পাঁচবাড়িয়া, ভায়ালক্ষি¥পুর ইউনিয়ন সরদহ ইউনিয়ন , শলুয়া ইউনিয়ন ও নিমপাড়া ইউনিয়নের ফসলের মাঠ জুড়ে খনন কাজ অব্যাহত রেখেছে অবৈধ পুকুর খননকারীরা। এতে প্রশাসনের ভূমিকা এলাকাবাসীর কাছে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব এলাকায় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পুকুরখনন অব্যাহত থাকলেও প্রশাসনের নজরে থাকলেও প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়ায় অব্যাহত রয়েছে পুকুরখনন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমি সবে মাত্র যোগদান করেছি। এখনও কোন অভিযোগ আমার চোখে পড়েনি। তবে এমন অভিযোগ ও অবৈধভাবে পুকুরখনন করলে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।