নজরুল ইসলাম বাচ্চু, চারঘাট (রাজশাহী):
শনিবার চারঘাট গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালে ১৩ এপ্রিল অস্ত্রে সজ্জিত বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অতর্কিত হামলা ও গুলিবর্ষণে চারঘাটের কয়েকটি গ্রামের দুই শতাধিক নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ শহীদ হন। আহত হয় আরও কয়েকমো মানুষ। পাকিস্তানি বর্বরেরা শুধু গুলি করে ক্ষান্ত হয়নি, পেট্রুল ঢেলে মৃতদেহে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। সেই থেকে প্রতি বছর ১৩ এপ্রিল থানাপাড়াবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেয় একাত্তরের ভয়ানক দিনগুলির কথা। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপজেলা শাখা, থানাপাড়া সোয়ালোজ ও উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ শহিদদের স্মৃতি সংবলিত শহিদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে সম্মান জানাবে।
প্রত্যক্ষদর্শী থানাপাড়া গ্রামের রায়হান আলী জানান, পাক হানাদ্বার বাহিনীর কাছ থেকে জীবন রক্ষার্থে গ্রাম ছেড়ে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু সীমান্তবর্তী পদ্মানদীর তীরে আশ্রয় গ্রহণ করে। হানাদার বাহিনী তৎকালীন পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার সংলগ্ন পদ্মা নদীতীরে গিয়ে এসকল নারী-পুরুষ ও শিশুর উপস্থিতি দেখে তাদেরকে ঘেরাও করে। অবশেষে নারী ও শিশুদের ছেড়ে দিলেও পুরুষদের আটকে রেখে তাদের উপর গুলিবর্ষণ করেন। শুধু গুলি করেও ক্ষান্ত হননি হানাদার পাকবাহিনী, মৃত্যু নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী জেনোসাইড শুরু করেন। নিহত হন থানাপাড়া, কুঠিপাড়া, গৌরশহরপুর, বাবুপাড়া ও তৎকালীন পুলিশ ট্রেনিং এ কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রায় ২শো নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষ।
এসময় প্রতিটি পরিবারের উপার্জনক্ষম বাবা, ভাই অথবা স্বামী কেউ না কেউ এই গণহত্যার শিকার হন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ‘বিধবার গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত পাওয়া থানাপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের জন্য তৎকালীন ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী শহিদ কামরুজ্জামানের সুপারিশে দ্য সোয়ালোজ, সুইডেন নামে বিদেশি সংস্থা আত্ম-কর্মসংস্থান সুযোগ করে দেয় যা আজ অবধি চলমান রয়েছে। যেখানে এখনও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে শহিদ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কয়েকশো নারী ও পুরুষ।
বীরমুক্তিযোদ্ধা মোকাররম হোসেন বলেন, এই গণহত্যা দিবসটি সরকারি হিসেবে জাতীয় স্বীকৃতি এখন জনদাবি। তাছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সরকারিভাবে কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতাও পায় না। কোনো কোনো সময় নামমাত্র কিছু বরাদ্দ থাকলেও সকল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার পাচ্ছে না বলে তিনি জানান। দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন ও শহিদদের প্রতি জানাতে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শহিদ মিনারে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পন করবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম।