চার দেয়ালে বন্দি দুই প্রতিবন্ধী, অর্থাভাবে জোটেনি চিকিৎসা

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৫, ১২:০৬ অপরাহ্ণ

নওগাঁ প্রতিনিধি :


নওগাঁর রাণীনগরের কাশিমপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর প্রাথমিক স্কুলপাড়ায় দুইজন প্রতিবন্ধীর জীবন চার দেয়ালের মাঝে বন্দি। সরকারের কাছ থেকে শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া কিছুই জোটেনি এদের ভাগ্যে। গরীব পরিবারের সন্তান হওয়ায় অর্থাভাবে সন্তানের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করাতে পারেনি পরিবার। তাই এই দুই প্রতিবন্ধীর জীবন এখন চারদেয়ালের মাঝে বন্দি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কাশিমপুর স্কুল পাড়ার দিনমজুর নয়ন কুমার প্রামাণিকের প্রতিবন্ধী ছেলে আকাশ কুমার প্রামাণিক। আকাশের জন্ম ১৯৯৬ সালে। জন্মের পর থেকেই প্রতিবন্ধী আকাশ। অর্থাভাবে ছেলের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে পারেনি আকাশের পরিবার।

তাই ২৮টি বছরের বেশি সময় একটি পরিত্যক্ত ঘরেই জীবন কাটছে আকাশের। ঘরেই প্রসাব-পায়খানাসহ খাবার গ্রহণ সবই করতে হয় আকাশের। শুধুমাত্র ঘরের একটি ছোট্ট জানালা দিয়ে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে বাহিরের আকাশ ও পরিবেশকে দেখে।

আকাশের মা অলোকা রাণী বলেন হয়তোবা উন্নত চিকিৎসা পেলে আকাশ সুস্থ হয়ে উঠতো। কিন্তু আমরা গরীব মানুষ পরিবারের অন্য সদস্যদের পেটের ভাত জোটাবো নাকি আকাশের উন্নত চিকিৎসা করবো। শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ভাতাটুকুই পায় আকাশ। এছাড়া শীতের কম্বল কিংবা অন্য কোন সহায়তাই আমার ছেলের ভাগ্যে জোটে না। যদি আকাশের উন্নত চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা পেতাম তাহলে ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করতাম।

আকাশের বাড়ির পশ্চিম দিকে আরেক প্রতিবন্ধী ছেলে দীপনম সূত্র। সেও জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ২০০৬ সালে জন্ম নেয়া দীপের বাবা ভ্যানচালক। দীপনম সূত্রকে হুইল চেয়ার করে একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়া যায়। দীপও শুধুমাত্র চেয়ে চেয়ে দেখে। হয়তোবা উন্নত চিকিৎসা পেলে দীপও সুস্থ হয়ে উঠতে পারে এমনটিই মনে করছে দীপের পরিবার।

দীপনম সূত্রের মা চন্দনা নমসূত্র বলেন দীপ প্রথম সন্তান। দীপ প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেওয়ার পর গরীব মানুষ হিসেবে চেষ্টা করেছি চিকিৎসা করাতে। কিন্তু ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ আমাদের পক্ষে যোগানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই উন্নত চিকিৎসার আশা ছেড়ে দিয়েছি।

অনেক কষ্টে প্রতিবন্ধী ভাতাটুকু পায় দীপ। এছাড়া সরকারের অন্য কোন সহযোগিতা আজ পর্যন্ত দীপের ভাগ্যে জোটেনি। তাই সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পেলে ছেলের উন্নত চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করতাম। উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো দীপ কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠতো।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম কচি জানান ওই দুইজন প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। এছাড়া আগামীতে উন্নত চিকিৎসার কোন সুযোগ আসলে তাদের জন্য সেই সুযোগ প্রদান করার চেষ্টা করবো। আগামীতে আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে নানা সময়ে আসা বিভিন্ন সুবিধা ওদের দিতে চেষ্টা করবো।

Exit mobile version