বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু এই অধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে নানা সংকট ও অপ্রতুলতা রয়েছে। সম্প্রতি চিকিৎসা উপকরণ উৎপাদন ও আমদানির ওপর ডলার সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে চিকিৎসা উপকরণ ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অধিক মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এই উদ্বেগ যেন দীর্ঘস্থায়ী কোন সংকটে পরিণত না হয়, এবিষয়ে নজরদারি রাখতে হবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ডলার স্বল্পতায় সাত মাস ধরে চিকিৎসা উপকরণের এলসি খোলা ও আমদানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এতে ওষুধ আমদানির পাশাপাশি উৎপাদনও কমেছে। বিশেষ করে আমদানিনির্ভর জীবন রক্ষাকারী ওষুধসহ বিভিন্ন ক্রনিক রোগের ওষুধ দুর্লভ হয়ে উঠেছে। এরমধ্যে আছে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য। এতে অস্ত্রোপচার কক্ষে ব্যবহৃত জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম, হৃৎপিন্ডের ভাল্ব ও পেসমেকারসহ বিভিন্ন মেডিকেল ডিভাইসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি রক্ত পরিসঞ্চালনের বিভিন্ন উপকরণেরও চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা যাচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল হওয়ায় সবকিছুর দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির রোগী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তি এখন চরমে।
দেশে অনেক নামিদামি বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। বিত্তবানরা অসুখে-বিসুখে এসব হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। অনেকে আবার দেশের বাইরেও পাড়ি জমান। তবে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের এ সক্ষমতা নেয়। এক সমীক্ষায় জানা যায়, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে দেশে অন্তত ৬৭ শতাংশ মানুষ বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে প্রতিবছর কমপক্ষে ৫ শতাংশ মানুষ সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়ছে। যা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিপন্থি। বলার অপেক্ষা রাখে না, ডলার সংকটজনিত পরিস্থিতিতে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি শুধু দুর্ভোগই নয়, মৃত্যুঝুঁকিও বহুগুণ বেড়েছে। এ অবস্থায় আমদানি নির্ভর জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মূল্য সমন্বয় করা জরুরি।
প্রত্যাশা থাকবে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের পথকে কিছুটা হলেও সুগম করবে। সরকার স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য দিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গসমতা, শিক্ষা, মাতৃস্বাস্থ্যসেবা, শিশুমৃত্যু হ্রাস, পরিবার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করলেও দেশের সামগ্রীক স্বাস্থ্যসেবাকে এখনো যুগোপযোগী ও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হয় নি। এ কারণে প্রত্যাশিত মানের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশনির্ভরতা কমছে না। এ বিষয়েও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বদ্বিচ্ছা আরও যুগপোযোগী হওয়া প্রয়োজন।