চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী আজ

আপডেট: আগস্ট ১০, ২০১৭, ১:২৯ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক


চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান-সংগৃহীত

বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার। বরেণ্য এই গুণী শিল্পী ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মেছের আলী, মা মাজু বিবি। রাজমিস্ত্রী পিতা মেছের আলীর নান্দনিক সৃষ্টির ঘঁষামাজার মধ্য দিয়ে ছোট বেলার লাল মিঞার (সুলতান) চিত্রাংকনে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ হয়।
রাজমিস্ত্রী বাবার সংসারে দরিদ্রতার মাঝেও ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন এসএম সুলতান। লেখাপড়ার অবসরে বাবার রাজমিন্ত্রী কাজে সহযোগিতার করার ফাঁকে ছবি আঁকতে শুরু করেন। এ সময় তার আঁকা ছবি স্থানীয় জমিদারদের দৃষ্টি আর্কষণ করে। জমিদার শ্যামাপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৩৩ সালে নড়াইলের জমিদার ব্যারিস্টার ধীরেন রায়ের আমন্ত্রণে ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল পরিদর্শনে আসলে তার একটি পোট্রেট আঁকেন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র এসএম সুলতান। মুগ্ধ হন শ্যামাপ্রাসাদসহ অন্যরা। লেখাপড়া ছেড়ে ১৯৩৮ সালে কলকাতায় গিয়ে ছবি আঁকা ও জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন সুলতান। সে সময় চিত্র সমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে তার পরিচয় হয়। সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ১৯৪১ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তির সুযোগ পান এসএম সুলতান। ১৯৪৪ সালে আর্ট স্কুল ত্যাগ করে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। এ সময় কাশ্মীরের পাহাড়ে উপজাতীয়দের সাথে বসবাস শুরু করেন এবং তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে চিত্রাংকন শুরু করেন। ১৯৪৫-৪৬ সালে ভারতের সিমলায় তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে লাহোরে সুলতানের চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানের জন্য তিনি আমেরিকা যান। এরপর ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের একক ও যৌথ চিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লী প্রমুখ খ্যাতিমান শিল্পীদের ছবির পাশে সুলতানই এশিয়ার একমাত্র শিল্পী যার ছবি এসব প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হবার সুযোগ লাভ করে। ১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসেন সুলতান। শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই নড়াইলে ‘দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে স্থপন করেন ‘শিশুস্বর্গ’। এদিকে, সুলতান তার সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ১৯৯২ সালে ৯ লাখ মতান্তরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট দ্বিতলা নৌকা (ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ) নির্মাণ করেন। সুলতানের শিল্পকর্ম ছিল বাংলার কৃষক-কৃষাণী, জেলে, তাঁতি, কামার, কুমার, মাঠ, নদী, হাওড়, বাওড়, জঙ্গল, সবুজ প্রান্তর ইত্যাদি। চিত্রাংকনের পাশাপাশি বাঁশি বাজাতে পারতেন তিনি। পুষতেন সাপ, বেজি, বানর, খরগোস, মদনটাক, ভলুক, ময়না, গিনিপিগ, মুনিয়া,ষাঁড়সহ বিভিন্ন পশু-পাখি। চিত্রাপাড়ের লালমিয়া শিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে পেয়েছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’ নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার। এছাড়া ১৯৮২ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট হিসেবে স্বীকৃতি এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা পান। সুলতানের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য শিল্পীর মৃত্যুর পর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শিল্পীর বাসভবন সংলগ্ন ২একর ৫৭ শতক জমির ওপর নির্মিত হয়েছে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা।
দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভোগার পর ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। প্রিয় জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রামের নিজ বাড়ির আঙিনায় তাকে সমাধিত করা হয়।
তথ্যসূত্র: বাসস