চিন-সৌদি আরব ঘনিষ্ঠতায় যুক্তরাষ্ট্রের কী?

আপডেট: এপ্রিল ১, ২০২৩, ৮:০৯ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক:


চিন নেতৃত্বাধীন একটি এশীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ব্লকে যোগদানের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে সৌদি আরব। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) নামের সেই ব্লকের সংলাপ অংশীদারের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে দেশটিকে। বিশ্বজুড়ে সংস্থাটি তার প্রসার ঘটাচ্ছে।
এসসিও মূলত সাবেক সোভিয়েতভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর একটি জোট, যেখানে রাশিয়া ও চিন ছাড়াও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভারত-পাকিস্তানও রয়েছে। সৌদি আরব শেষ পর্যন্ত এর পূর্ণ সদস্যপদ পেতে
সিএনএন জানিয়েছে, ইদানিং মধ্যপ্রাচ্যে চিনের ক্রমবর্ধমান ভূমিকায় শঙ্কিত ওয়াশিংটন। কেবল মার্চেই পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি যুগান্তকারী চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছে বেইজিং, যা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে গত ২৭ মার্চ চিনের রোংশেং পেট্রোকেমিক্যালের ১০ শতাংশ শেয়ার কিনতে ৩৬০ কোটি ডলারের চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে সৌদির আরব। চুক্তির আওতায় ২০ বছর মেয়াদে দিনে ৪ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল চিনা ওই কোম্পানির কাছে বিক্রি করবে সৌদি আরামকো। এর মাধ্যমে চীনের সঙ্গে জ্বালানি সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করছে দেশটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান বিভাজনের বিশ্বে চিন ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সৌদি আরব ও অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাদের বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব বৈচিত্র্যময় করার পথ বেছে নিচ্ছে। তবে এখনও বেইজিং সে অঞ্চলে মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার পথ থেকে অনেকটা দূরেই রয়েছে।
সৌদি বিশ্লেষক ও লেখক আলি শিহাবি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এত দিনের একমুখী সম্পর্ক এখন শেষ হয়ে গেছে। আমরা আরও বৈচিত্র্যময় সম্পর্কের মধ্যে চলে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী; কিন্তু চিন, ভারত, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং অন্যদের সঙ্গেও সম্পর্ক এখন সমান শক্তিশালী।”
সিএনএনকে তিনি বলেন, “ওই মেরুকরণের কারণেই বিভিন্ন দল বিভিন্ন ধরনের প্রভাব নিয়ে আলোচনার টেবিলে হাজির হয়। সৌদি আরবের জন্য স্মার্ট বিষয়টি হল, কৌশলগত সম্পর্কের একটি পোর্টফোলিও গড়ে তোলা, যাতে সকলেই বিভিন্ন উপায়ে সৌদির আরবের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে।”
যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত প্রিন্সেস রীমা বিনতে বান্দার আল সৌদ অক্টোবরে সিএনএন এর বেকি অ্যান্ডারসনকে বলেছিলেন, মার্কিন-সৌদি সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন একটি ‘ইতিবাচক বিষয়’।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রিতা বিস্তৃত ও শক্তিশালী উল্লেখ করে সেসময় তিনি বলেন, “সৌদি আরব এখন আর পাঁচ বছর বা ১০ বছর আগের দেশ নয়। সুতরাং আগের সব বিশ্লেষণ এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়।”
বৃহস্পতিবার সিএনএন-এর বেকি অ্যান্ডারসনের সঙ্গে আলাপে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (এসএআইএস) এর মধ্যপ্রাচ্যের অধ্যয়ন এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক ভ্যালি নাসর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এখন তার মধ্যপ্রাচ্য নীতি পুনর্নিরীক্ষণ করতে হবে। কারণ এটি সৌদি আরবের সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ধারণার উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে।”
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতিভিত্তিক কার্যক্রমে মনোযোগ এবং আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ে খেলার প্রতি বেইজিংয়ের অনীহার কারণে মধ্যপ্রাচ্য চিন-যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠার সম্ভাবনা কম। ফলে সৌদি-চীন সম্পর্কও পূর্ণাঙ্গ জোটে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা কম।
চিনে জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী সৌদি আরব। সৌদির তেল রপ্তানির সব থেকে বড় গন্তব্যও চিন। তথাপি সৌদি আরবের অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবদ্ধ; কারণ তেলের বাণিজ্য ডলারের সঙ্গে যুক্ত এবং তেল বিক্রিও হয় ডলারে। সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা অবকাঠামোও আমেরিকান সমরাস্ত্রের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।
আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র অনাবাসিক ফেলো জোনাথন ফালটন বলেন, চিনের একটি কঠোর ‘নিরপেক্ষ’ নীতি আছে। এই নীতির কারণে চীন মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে জড়াতে চায় না।
“একজন মিত্র সাধারণত হয় এমন একজন, যার সঙ্গে আপনি তৃতীয় দেশ বা তৃতীয় দেশের একটি ব্লকের বিরুদ্ধে সংগঠিত হনৃ আর চীন সেটি করতে চায় না।”
সিএনএনকে ফালটন বলেন, “তারা (চিন) অন্য দেশের বিষয়ে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের জড়াতে চায় না।”
সিএনএন লিখেছে, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর বিপরীতে চিন সৌদি আরবকে একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতির প্রস্তাবও করে। গত বছর রিয়াদে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের যুগান্তকারী সফরে তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছিল।
ফালটন বলেন, একে অপরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সম্ভাবনা কারোরই নেই। কারণ, কোনো পক্ষই অন্যের জন্য তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেইসঙ্গে উভয় দেশের মূল আগ্রহের জায়গা অন্যদের অগ্রাধিকার বিষয়গুলোর বাইরে।
সার্বিক পরিস্থিতি সৌদি আরবের পক্ষে ভালো হতে পারে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাইডেন প্রশাসন ও কংগ্রেসের ব্যাপক সমালোচনা পাচ্ছে। অন্যদিকে চিনের লাভ হতে পারে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর এবং অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি বেইজিংয়ের আচরণের বিষয়ে সৌদি আরব নীরব থেকে যাবে।
মার্চে সৌদি-ইরান ঐতিহাসিক চুক্তি ঘোষণার পরে বাইডেন প্রশাসন এক্ষেত্রে চিনের ভূমিকাকে খাটো করে দেখাতে চাইছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কারবি বলেছিলেন, ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি কার্যকর প্রতিরোধসহ অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চাপ শেষ পর্যন্ত ইরানকে টেবিলে নিয়ে এসেছে।
সৌদি আরব ও ইরানের আলোচনার টেবিলে চিনের মধ্যস্থতা তার মধ্যপ্রাচ্য নীতি পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় নয় বলে মনে করেন ফালটন।
তিনি বলেন, এটি আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে একটি আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি। কেননা এই অঞ্চলের নেতারা দেখছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম নয়।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ