চির অম্লান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

আপডেট: ডিসেম্বর ১৬, ২০২২, ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ

মো. নূরল আলম:


বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে কয়েকশো বছর ধরে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে বসবাসকারী যে বাঙালি জাতি গড়ে ওঠে তা ছিল একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (Race)। অভিন্ন ভাষা ও সাধারণ আর্থ-সামাজিক জীবনধারার বিকাশের ফলে এবং শারীরিক, মানসিক ও মনস্তাত্বিক গঠনের সমরূপতায় এই নৃগোষ্ঠী স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও বহুক্ষেত্রে বিভিন্ন মণীষীর চিন্তা চেতনার নব নব বিন্যাসে একটি পূর্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর রূপ ধারণ করে। প্রায় তিন দশকের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর তা একটি জাতিতে পরিণত হয়। এই জাতিরই মূল নির্মাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই জাতি গঠনে নানা সময় ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখেন চর্যাপদের সিদ্ধসাধক, মধ্যযুগের কবি সাহিত্যিক, বাউল-বৈষ্ণব সাধক এবং কবিয়াল ও লোকজ সংস্কৃতির গুণিজন এবং আধুনিককালের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দি, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহসহ অনেকে।

জাতি অভিন্ন চেতনার ফল। জাতীয়তাবাদের সবগুলো বৈশিষ্ট্য বাঙালি জাতিসত্তার মধ্যে ছিল। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রথম অগ্রনায়ক দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ও শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক। এ চেতনা বিকশিত হয় মওলানা ভাসানী, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধু ছাড়া তারা কেউই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জনের দুর্লঙ্ঘ বাধা অতিক্রম করতে পারেন নি। কেবল বঙ্গবন্ধু তাঁর দেশ ও দেশের মানুষের জন্য গভীর ভালবাসা, অভূতপূর্ব সাংগঠনিক দক্ষতা, অনমনীয় সংগ্রামী সংকল্প ও সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষার জোরে জাতীয় চেতনা সৃষ্টির মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে সফল হয়েছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি।
বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতি বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহাসিক বিবর্তন ও ক্রমবিকাশমান ধারায় ভৌগোলিক সীমারেখায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালির হাজার বছরের লালিত আশা আকাক্সক্ষা, বেদনা বিক্ষোভ, সর্বোপরি আবহমান বাংলার বৈশিষ্ট্যকে তিনি নিজের জীবনে আত্মস্থ করেছেন। তাঁর কণ্ঠে বাঙালি জাতির সার্বিক মুক্তির আকাক্সক্ষা প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট লোকবিজ্ঞানী শ্রদ্ধেয় জনাব শামসুজ্জামান খান বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতির বিকশিত হয়ে ওঠা সম্পর্কে লিখেছেন,
“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক (Statesman), হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং তিনি বাঙালি জাতির পিতা। এ কথায় কারো কারো সংশয় থাকতে পারে, ভিন্নমতও থাকতে পারে। কিন্তু ইতিহাস ও দর্শনের তাত্ত্বিক বিচারে এসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়। কোনো ভৌগোলিক অঞ্চলের মানুষ শতসহ¯্র বছর ধরে বিভিন্ন উপাদান এবং নানা ক্ষেত্রের তাৎপর্যপূর্ণ অবদানে ধীরে ধীরে একটি জাতি হিসেবে বিকশিত হয়ে ওঠে; এবং কোনো এক সময়ে সেই জাতি তার সামাজিক-সাংস্কৃতিক-মনস্তাত্ত্বিক ও রাষ্ট্র চেতনার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। দেশের সর্বস্তরের ব্যাপক সংখ্যক মানুষের মনে এই সর্বোচ্চ চেতনার স্তর সৃষ্টিতে যে নেতার প্রধান ভূমিকা থাকে এবং সেই ভূমিকা সর্বজন স্বীৃকত হয়ে যখন তা একটা যুগ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, তখন সেটাই সেই জাতি বা জনগোষ্ঠীর মাহেন্দ্রক্ষণ। বাঙালি জাতির জীবনে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। আর সেই সর্বোচ্চ স্তরের ওপর দাঁড়িয়ে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” দীর্ঘকাল যাবত অধিকারবঞ্চিত, নিপীড়িত ও পাকিস্তানি শাসন-শোষণের অবিচার থেকে মুক্তির জন্য বাঙালি জাতি এই ঘোষণার অপেক্ষায় ছিল।
বঙ্গবন্ধু সেদিন পাক বাহিনীর ভীতিকর সামরিক আক্রমণের সম্মুখে দাঁড়িয়ে সাহস ও দৃঢ়তার সাথে গণমানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এমন ভয়ংকর জটিল পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে এতো অকুতোভয়ে স্বাধীনতার কথা উচ্চারণের সাহস করেন নি। ৭ মার্চের সেই অবিস্মরণীয় জনসভায় হাজার বছরের বাঙালি জাতির আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ধ্বনিত হলো। এ ভাষণ বঙ্গবন্ধুর অমর রচনা, বাঙালি জাতির মহাকাব্য যা বাঙালির হাজার বছরের সংগ্রামের ধারা ও স্বাধীনভাবে লালিত স্বপ্ন থেকে উৎসারিত। কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই এ মহাকাব্য রচনা সম্ভব হয়েছিল। কেননা তিনি এ ধারার সার্থক প্রতিনিধি। এ জন্যই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা, বাঙালি জাতির পিতা এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্রষ্টা।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের মহাকাব্যিক ভাষণ সম্পর্কে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীত বিভাগের পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক (অব.) সনৎ কুমার সাহা পান্ডিত্যপূর্ণ ভাষায় লিখেছেন, “ওই ৭ মার্চের তুঙ্গ মুহূর্তে এদেশের সকল মানুষের ক্রোধ-ক্ষোভ-আশা-আকাক্সক্ষা সবই তাদের শিখরবিন্দু স্পর্শ করে। পেছনে থাকে পাকিস্তানি অভিজ্ঞতার শোষণ-নিপীড়ন ও বঞ্চনার ধারাবাহিকতা। নগ্ন দখলদারি হামলায় তখন তার আড়ালটুকুও ঘুচে যায়। জনগণের আক্ষেপ ভাষা চায়। ভাষা সংহতি চায়। সংহতি দিক-নির্দেশনা চায়। দিক-নির্দেশনা কর্মসূচি চায়। কর্মসূচি প্রতিবাদে, প্রত্যাখানে, প্রতিরোধে ফেটে পড়তে চায়। মুক্তির ও স্বাধীনতার যৌথ কল্পনার স্বরূপ জানতে চায়।”
বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্রষ্টা এবং নব রাজনৈতিক জাতির পিতা তার তাত্ত্বিক ভিত্তির জন্য আমরা এ বিষয়ের শ্রেষ্ঠ ভাবুক জার্মান দার্শনিক হেগেল-কে স্মরণ করতে পারি। হেগেল বলেন, “সময়ের শ্রেষ্ঠ মানুষ তার যুগের ইচ্ছাকে ভাষায় রূপ দিয়ে থাকেন; এবং তিনি সেই যুগের প্রকৃত ইচ্ছা কী তা বলার সাথে সাথে সেই কাজটা সম্পন্ন করে থাকেন। যে কাজটা তিনি বাস্তবে রূপ দান করেন তা অবশ্যই তার যুগের হৃদয় ও অনুভূতির সাথে সম্পূর্ণভাবে সম্পৃক্ত।” বঙ্গবন্ধু তাঁর যুগের ইচ্ছা ও এষণাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি এবং বাঙালি জাতির পিতা।
ব্যক্তি ও রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন উদার গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, অসাস্প্রদায়িকতা এবং উচ্চ মাত্রার মানবতা বোধে সমৃদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের রাজনীতিতে একটি মাত্র লক্ষ্য ছিল। তা হলো অধিকারবঞ্চিত ও দরিদ্র সাধারণ মানুষের বঞ্চনা ও শোষণের অবসান এবং তাদের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। তিনি চেয়েছিলেন এমন এক কল্যাণকর রাষ্ট্র যেখানে ধনী ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য হ্রাস পাবে, দুর্নীতি দূরীকরণের মাধ্যমে দেশের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার সম্ভব হবে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও অধিকারের ক্ষেত্রে সর্বস্তরের মানুষের অভিগম্যতা নিশ্চিত হবে। বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাজনীতির বৃত্তের মধ্যে থেকে একজন রাজনীতিক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কিভাবে এতটা দরিদ্রবান্ধব হতে পেরেছিলেন তা নিয়ে দেশে বিদেশে অনেক পর্যবেক্ষক ও রাজনীতিবিদ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
হাজার বছরের শ্রেয়বোধ ও কল্যাণ চেতনা এবং জনগণের মৌলিক বিশ্বাস ও জীবন সাধনার উপাদানসমূহ চয়ন করে জনমানুষের আশা আকাক্সক্ষা রূপ লাভ করেছিল বঙ্গবন্ধুর চার রাষ্ট্রীয় মৌল নীতিতে। জাতীয়তাবাদ অর্থহীন ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া। সে অর্থে আধুনিক রাষ্ট্রের মূল বৈশিষ্ঠ্য ধর্মনিরপেক্ষতা। হাজার বছরের ইতিহাস বলে, বাংলাদেশ চিরদিনই শাস্ত্রগত সংস্কারমুক্ত। এর ফলেই এই ভূখ-ে স্বাধীনতার জন্য আকর্ষণও মৌলিক ও মজ্জাগত।
বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন ছিল এদেশের গণমানুষের সুখ-সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এক গভীর মানবিক সংগ্রামী দর্শন। এ দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল এক ঐতিহাসিক বিশ্বাস যে “কেবলমাত্র জনগণই ইতিহাস সৃষ্টি করে। বঙ্গবন্ধুর এই রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দর্শন অনুযায়ী গণমানুষের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য শেষ পর্যন্ত মুক্তি সংগ্রামের মধ্যে জন্ম হলো ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ বাংলাদেশ যেখানে সাংবিধানিকভাবেই প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।”
বঙ্গবন্ধুর দর্শনের মূল শক্তি তাঁর দ্বারা উদ্ভাবিত মুজিববাদ। ‘মুজিববাদ’ হলো বঙ্গবন্ধুর চর্চিত ও প্রচারিত রাজনৈতিক দর্শন বা মূল্যবোধের সমষ্টি। মুজিববাদ মূলত চারটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এগুলো হলো (১) জাতীয়তাবাদ, (২) গণতন্ত্র, (৩) ধর্মনিরপেক্ষতা ও (৪) সমাজতন্ত্র। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণীত হলে মুজিববাদের চারটি স্তম্ভ বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনার চার মৌল নীতি হিসেবে গৃহীত হয়।
বঙ্গবন্ধুর জীবনবোধ এবং সমাজ ও রাষ্ট্রদর্শন থেকে তাঁর উন্নয়ন চিন্তাচেতনার কিছু উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়। সামষ্টিক বিচারে বঙ্গবন্ধুর সমগ্র রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মূল অনুষঙ্গ হলো তাঁর দেশের মানুষ এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন। তাঁর সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখার ইতিকথা কেবল পাকিস্তান আমলের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময়ের নয়, তারও আগের। বঙ্গবন্ধু সর্বভারতীয় রাজনীতি অপেক্ষা বাংলার রাজনীতি, বাংলার ভাগ্য নিয়ে বেশি ভাবতেন। বাংলার দুঃখী মানুষের কথা তাঁর রাজনৈতিক কর্মে ও ভাবনায় কৈশর থেকেই স্থান করে নিয়েছিল। তাই বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ইতিহাস একাধারে বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং সমসাময়িক কালে প্রবিষ্ট ও বিকশিত।
বঙ্গবন্ধু গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু দেশের দরিদ্র জনমানুষের সার্বিক অর্থনৈতিক মুক্তির স্বার্থে তিনি সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক কর্মসূচির গুরুত্ব উপলব্ধি করতেন। সম্ভবত এ ধারণার বশবর্তী হয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চার নীতির মধ্যে সমাজতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক উৎপাদন ও প্রশাসন কাঠামোর পরিবর্তন এবং সমগ্র অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার আমুল সংস্কারের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের’ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এই দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম। তিনি এটাকে একদলীয় নয়, বরং জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে এক মঞ্চে বহুমতের মানুষের সমন্বিত ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বাকশালের দর্শনের মধ্যে ছিল প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সকল মানুষের অন্তর্ভুক্তিকরণ ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট উদ্ভাবনী নীতি ও কৌশল। বাকশাল নামের মধ্যেই নিহিত ছিল বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ স্বপ্নের মূল অনুষঙ্গ এদেশের কৃষক ও শ্রমিক।
তাঁর আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “আমি নিজে কমিউনিস্ট নই, তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ^াস করি না। একে আমি শোষণের যন্ত্র হিসাবে মনে করি। এই পুঁজিপতি সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে, ততদিন মানুষের ওপর থেকে শোষণ বন্ধ হতে পারে না।” গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সম্ভব কিনা সে সম্পর্কে তিনি অনেক আলোচনা পর্যালোচনা ও চিন্তা করেছেন। বিশ্লেষকরা বলেছেন, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য বঙ্গবন্ধুর ধারণা তাত্ত্বিক অর্থনীতির বিশ্লেষণ থেকে কিছুটা আলাদা। সম্ভবত বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে মাত্রাগত সমন্বয়ের কথা চিন্তা করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু মানুষকে ভালবাসতেন এবং তার কথা ও কর্মকান্ডে মানুষের প্রতিক্রিয়া তিনি বুঝতে পারতেন। দেশের মানুষও বঙ্গবন্ধুর কথা বুঝতে পারতেন। সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর- এই সুদীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক পথযাত্রায় বঙ্গবন্ধুর প্রধান লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি শাসন থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করা। বোধকরি এজন্যই বঙ্গবন্ধু সর্বভারতীয় রাজনীতি অপেক্ষা এদেশের রাজনীতিকে অগ্রাধিকার দান করেছেন।
সত্তর একাত্তরের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সেই উত্তাল দিনগুলোতে বঙ্গবন্ধু সবসময় দেশের মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে থেকেছেন। মুক্তি আন্দোলনের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু সত্তরের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই নির্বাচনে এদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে বিপুলভাবে বিজয়ী করেছিল। তা সত্ত্বেও ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি এক নতুন মাত্রা লাভ করে।
৩ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর আহুত অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচির যৌক্তিকতা সম্পর্কে জনৈক সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু অকপটে বলেছিলেন, “যে দেশকে তিনি দেখেছিলেন তা শেষ হয়ে গেছে। সেখানে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।” সম্ভবত সে সময়ে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা এবং তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা থেকে তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, পাক হানাদার বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং অদূর ভবিষ্যতের সম্ভাব্য জনযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য জাতিকে উদ্ধুদ্ধ করা ছাড়া পিছিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাঁর আত্মবিশ্বাস ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তাঁকে সেই জনযুদ্ধে বাঙালি জাতির বিজয়ী হওয়ার স¤া¢বনার বার্তা দিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
লক্ষ্য করার বিষয়, সমগ্র মুক্তিযুদ্ধকালীন যে সময়ে দুই অসম শক্তি এক ভয়াবহ নিষ্ঠুর সংগ্রামে লিপ্ত ছিল, সে সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন অনুপস্থিত। বঙ্গবন্ধু এবং শুধু বঙ্গবন্ধু একাই ছিলেন সেই প্রতীক যার চারদিকে নিঃসহায় এক উদ্দেশ্যের সমর্থকেরা একসঙ্গে কোনো ভুলবোঝাবুঝি ছাড়াই দ্বিধাহীনভাবে একত্রিত হয়েছিল।
বাঙালির উনিশ শতকের ঐতিহ্যে দুটি সুস্পষ্ট ধারা লক্ষ্য করা যায়। এ দুটি ধারা ছিল সমান্তরাল কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী। একদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষা, নতুন জাগতিক মূল্যবোধ, উদার মানবতা সব মিলে বাংলার নব জাগরণ। সামাজিক বিভাজনে কিছুটা পৃথক চিন্তা চেতনার মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত এই শ্রেণিগোষ্ঠি জাতীয়তাবাদের মূল ধারণার সাথে সর্বাংশে একাত্ম ছিল না। পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শোষণ ও নিপীড়ন থেকে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রশ্নেও তারা দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। অন্যদিকে অধিকারবঞ্চিত দরিদ্র গ্রামীণ কৃষক, শ্রমিক ও আপামর সাধারণ মানুষের খন্ড খন্ড প্রতিবাদ, প্রতিরোধ। এ দুয়ের সমন্বয়ের দুরূহ কাজটি সম্পন্ন হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা ও মানুষের জন্য অকৃত্রিম ও আন্তরিক ভালোবাসার সাথে বাঙালির ওপর ঔপনিবেশিক শোষণের সার্বিক রূপ তিনি তুলে ধরলেন সবার কাছে। যে প্রতিবাদ, বিদ্রোহ আগে ছিল খন্ড খন্ড এবং সে কারণে বিক্ষিপ্ত, সংকীর্ণ ও অগভীর, তা জমাট বেধে জন্ম দেয় অভিন্ন চেতনার, রূপ নেয় গণ-অভ্যুত্থানের। বিভাজিত ক্ষুদ্র ও সম্পর্কহীন বলয় থেকে শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়নকে তুচ্ছ জ্ঞান করে একটার পর একটা স্তর অতিক্রম করে জাতি গ্লানিমুক্ত ও শোষণহীন সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে যায়। জাতীয় জীবনে এক সঙ্গে এতগুলো ধাপ অতিক্রম করা এক অসাধারণ ঘটনা। এই ঘটনাতেই জনগণকে টেনে আনলেন বঙ্গবন্ধু।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টার্ন মিসিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লরেন্স জারিং ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অবস্থান কালে বাংলাদেশ সৃষ্টি সম্পর্কে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যাকে বৈপরিত্যের মোকাবেলা করতে হয়। গৃহযুদ্ধের আগুনে সৃষ্ট দেশ অসাম্প্রদায়িকতা গ্রহণ করে এবং নৃতাত্বিক ও সমন্বিত সংস্কৃতির বিকাশে জনগণকে সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। কল্যাণমুখি জাতীয়তার নিকট ইসলামী ভ্রাতৃত্ব নতি স্বীকার করে। ধর্ম পাকিস্তানের ঐক্য টিকিয়ে রাখতে পারেনি।” এ মন্তব্যে বঙ্গবন্ধুর কল্যাণমুখি জাতীয়তা এবং সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দর্শনের প্রকাশ দেখা যায়। বাংলাদেশকে স্বাধীন করাই আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধুর একমাত্র কৃতিত্ব নয়, সাম্প্রদায়িকতার অন্ধ প্রকোষ্ঠ থেকে, শতাব্দী-লালিত মূঢ়তা থেকে মুক্তির মন্ত্র ধ্বনিত হয়েছিল তাঁর কণ্ঠে।
১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করার পর তানজানিয়ার রাষ্ট্রপতি জুলিয়াস নায়েরে আবেগাপ্লুত হয়ে বঙ্গন্ধুকে তৃতীয় বিশ্বের নির্যাতিত ও বঞ্চিত মানুষের নেতা বলে অভিহিত করেন। এ জন্যই হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার শান্তির দূত নেলসন ম্যান্ডেলা বঙ্গবন্ধুকে “শোষিতের দূত” বলে আখ্যায়িত করেন।
বঙ্গবন্ধু মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ বসু এবং রবীন্দ্রনাথের দেশপ্রেম ও মানবপ্রেমের ভাবাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। সুভাষ বসুর সাথে বঙ্গবন্ধুর সাদৃশ্য রয়েছে। তবে সুভাষ বসু সর্বদা অভিজাত ছিলেন, অন্যদিকে মুজিব জনগণের ভাষায় কথা বলতেন, জনগণের ঘর্মাক্ত ও শক্ত হাত স্পর্শ করতেন। রাজনীতিতে সুভাষ বসুর বিপ্লবী দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মপন্থা বঙ্গবন্ধু গ্রহণ করেননি, কিন্তু তাঁর অদমিত রাজনৈতিক শক্তিমত্তা গ্রহণ করেছেন।
বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবদান মূল্যায়ন করে বিশিষ্ট লেখক জেমস. জে. নোভাক লিখেছেন –
“কঠোর পরিশ্রম বঙ্গবন্ধুর জীবনধারা গঠন করেছে। ক্লান্তিহীনভাবে তিনি দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে শহর, নগর, গ্রাম-গঞ্জে ভ্রমণ করেছেন। তিনি মানুষের সাথে মিশেছেন, কথা বলেছেন এবং তাদেরকে ভালবেসেছেন। জনগণ থেকে দূরে থাকাকালে তিনি তার অতি মানবীয় দৃষ্টিশক্তি দিয়ে প্রত্যেকটি ঘটনায় জনগণের প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারতেন। তিনি জানতেন- জনগণ তাকে বিশ্বাস করে। কেননা তিনি তাদের কথা বুঝতে পারতেন।”
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অসামান্য কীর্তি সম্পর্কে নোবেলজয়ী খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন মন্তব্য করেন, ‘সুচিন্তিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা যে সম্ভব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর প্রমাণ সমগ্র পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালির বন্ধু ও অধিনায়ক ছিলেন না, তিনি ছিলেন মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও মহাননেতা। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর উৎসাহ শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তিনি চেয়েছিলেন বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সভ্যতা, সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা, সব মানুষের মানবাধিকারের স্বীকৃতি। তাঁর সাবলীল চিন্তাধারার সঠিক মূল্য শুধু বাংলাদেশ নয়, সমস্ত পৃথিবীও স্বীকার করবে এ আশা আমাদের আছে এবং থাকবে।’
লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা বঙ্গবন্ধুকে ‘বাংলার মুকুটহীন সম্রাট’ বলেছে। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের কঠোর সমালোচক এন্থনি মাসকারেনহাসও তাঁর সততার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেছেন, “মুজিব দেশকে নিজের সম্পদ হিসেবে মনে করতেন। তাঁর অর্থের প্রয়োজন ছিল না। তিনি ক্ষমতার পেছনে ছিলেন। তাঁর সততা ছিল প্রশ্নাতীত।” প্রকাশ্যে স্বাধীনতা ঘোষণার একমাস আগে বঙ্গবন্ধু নিউজ উইকের লরেন জেন টিনস্কে একান্তে বলেছিলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। আমরা যে দেশকে জানি তা শেষ হয়ে গেছে।”বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, জনগণকে সামন্তবাদী ও সাম্প্রদায়িক ধ্যানধারণা থেকে মুক্ত করে জাতীয়তাবাদ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সে জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র নয়, তা হলো সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্থায়িত্ব আনতে হবে এ দেশের সার্বভৌমত্বের স্থায়িত্বের জন্য, কোনো দলীয় বা ব্যক্তি স্বার্থের জন্য নয়। আজ বঙ্গবন্ধুকে সম্মান দিতে গিয়ে আমাদের মনে রাখতে হবে, যে জাতীয় রাজনৈতিক ঐতিহ্যের তিনি অধিকারী ছিলেন, সেই ঐতিহ্য ইতিহাসের ফাঁকে ফাঁকে মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন পর্যায়ে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর মত মহান ও আদর্শবান নেতা বাংলাদেশে জন্মলাভ করেছিলেন। লেনিন, সুকর্নো, লুলুম্বা, হোচিমিন, জর্জ ওয়াশিংটন ও আব্রাহাম লিংকন আর আলেন্দের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম চিরকালের জন্য পৃথিবীর মানুষের মনে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে মানব প্রেমের মূর্ত প্রতীক হিসেবে।
বাঙালির আন্দোলন সংগ্রামের দীর্ঘ সময়ে বঙ্গবন্ধুর সাথী ছিলেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের অভিজ্ঞ ও যোগ্য নেতৃবৃন্দ। তবুও বাঙালি জাতির আশা আকাক্সক্ষা কেবল বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতো। জাতির জন্য একটি স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করেই বঙ্গবন্ধু তাঁর কর্তব্য শেষ করেন নি। স্বাধীন দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জাতি কিভাবে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করবে- বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনবোধ এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর নীতি আদর্শের মাধ্যমে সেই দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তি চরিত্র একটি অখ- সংগ্রামের ইতিহাস। তার রাজনৈতিক জীবন, ব্যক্তিগত জীবন ও ধারাবাহিক জীবন ছিল একটি দর্শন। বাঙালি জাতি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উপলদ্ধি করে তার আত্মপরিচয়ের মূল সুর। এই পরিচয় স্পষ্ট করে তোলার আপোসহীন সংগ্রামের অগ্রনায়ক বঙ্গবন্ধু।
২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার বাংলাদেশের আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য এদেশের সামনে কিছু আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এদেশের বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্ব গণমুখি, কল্যাণকর ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনার নীতিকৌশল গ্রহণ করলে সেই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করা সম্ভব হবে। এবং তখনই বঙ্গবন্ধুর “সোনার বাংলা” বিনির্মাণের আজীবন লালিত স্বপ্ন বাস্তব ও পরিপূর্ণ রূপ লাভ করবে ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তি চরিত্র একটি অখ- সংগ্রামের ইতিহাস। তার রাজনৈতিক জীবন, ব্যক্তিগত জীবন ও ধারাবাহিক জীবন ছিল একটি দর্শন। বাঙালি জাতি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উপলদ্ধি করে তার আত্মপরিচয়ের মূল সুর। এই পরিচয় স্পষ্ট করে তোলার আপোসহীন সংগ্রামের অগ্রনায়ক বঙ্গবন্ধু।
জনৈক গবেষকের ভাষায় : ‘বঙ্গবন্ধুকে আজ আমরা পেয়েছি এই ইতিহাসের পাদপীঠে-যেখানে তাঁর আশা-আকাক্সক্ষায়, ভালোবাসা-বেদনায় আর কর্মের প্রবাহে তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন আবহমান বাংলা ও বাঙালিকে। বঙ্গবন্ধুকে আমরা হারিয়েছি এই মর্মান্তিক কথাটি কখনো আমাদের অন্তরে সত্য হতে পারে না। বাংলাদেশের আপামর জনমানুষের ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঞ্জয় হয়ে আছেন। কালের চিরন্তন বেলায় তাঁর নীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ তাঁকে দিয়েছে অমরত্বের গৌরব।
লেখক: প্রফেসর, অর্থনীতি (অব:) ও, প্রাক্তন চেয়ারম্যান, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড