রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিবেদক
‘আমি আজকে চ্যালেঞ্জ করলাম, চারুকলার যে কোনো একজন শিক্ষার্থী দাঁড়াবে, অন্যদিকে সুজন সেন দাঁড়াবে, যদি সুজন সেন তার থেকে ভালো ছবি আঁকতে পারে, তাহলে আমরা সকল প্রকার আন্দোলন প্রত্যাহার করব এবং তাকে আগের মতো ক্লাসে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।’ এভাবেই নিজের শিক্ষক ড. সুজন সেনের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের শিক্ষার্থী আবু রায়হান।
ড. সুজন সেনের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত ও অপসারণের দাবিতে রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তিনি। ড. সুজন সেনকে অযোগ্য, স্বৈরাচার, দূর্নীতিবাজ, দালাল ও চাটুকার আখ্যা দিয়ে বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে আবু রায়হান আরও বলেন, ড. সুজন সেনের বিভিন্ন অনিয়মের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমরা তদন্ত কমিটিকে নিরপেক্ষ তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা প্রশাসনকে বলে দিতে চাই, আপনাদের এ তদন্ত যদি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হয়, তাহলে এটা কোনোভাবেই আমরা মেনে নেব না। আমরা আরও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান বলেন, আমরা আজকে একটা অযোগ্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমি গত পাঁচ বছরে তাকে ক্লাসের কোনো কাজ শিখিয়ে দিতে দেখিনি। আমাদের বেশিরভাগ কাজ ব্যবহারিক। কিন্তু আমরা তাকে ব্যবহারিক কাজে কখনও দেখিনি। যারা সুজন সেনের পক্ষে দালালি করছে, আমরা তাদের হুশিয়ারি করে বলে দিচ্ছি, অযোগ্য কারোর পক্ষে দালালি করবেন না। এর ফল ভালো হবে না। আমরা শিক্ষার্থীরা এর সমুচিত জবাব দেবো। শিক্ষার্থীরা আপনাদের প্রতিপক্ষ না। আমি চাই প্রশাসন স্বচ্ছতার সাথে একটি সুন্দর তদন্ত করুক। তবে সুজন সেনের যতদিন পর্যন্ত চাকরিচ্যুতি না হচ্ছে, আমরা এই রাজপথ ছাড়বো না।
বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আসাদ সাদিক রাফি বলেন, ড. সুজন সেনের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের আজকে ১৮ দিন হলো। কিন্তু তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীদের সাথে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। আসলে কি তারা এসি রুমে বসে তদন্ত করতেছে? এ ধরনের তদন্ত আমরা মেনে নেবো না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী নৈতিকতার স্থলন ঘটলে তাকে অপসারণের সুযোগ আছে। আমরা চাই, এই আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে।
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কুয়াশা, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পরমা পারমিতা, চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবু রায়হান জনি, আসিফা পারভিন পুঁথি ও মো. সাকিবুল বক্তব্য দেন। এসময় বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, ড. সুজন সেনকে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট বিভাগ থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর গত মাসের ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা ও বিভাগের সভাপতির কাছে প্রমাণসহ প্রায় ২০০ পৃষ্ঠার এক লিখিত অভিযোগ জমা দেন তারা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৯ সেপ্টেম্বর এক জরুরি সভায় ড. সুজন সেনকে বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং তার অনিয়ম ও দূর্নীতি তদন্তে ১৮ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।