ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে রাণীনগরের ইটভাটা

আপডেট: মে ২৪, ২০২৪, ৪:২১ অপরাহ্ণ


আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:


জেলার রাণীনগর উপজেলায় সরকারি অনুমতি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর চলছে ইটভাটা। অনেক ভাটার চিমনি ছোট হওয়ার কারণে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে ভাটার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি। দ্রুত অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সচেতন মহলের।

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় মোট ২০৪টি ইটভাটা রয়েছে; যার মধ্যে ২১টি ভাটার বৈধ কাগপত্র রয়েছে। বাকি কোনো ভাটারই বৈধ কাগজপত্র নেই। এর মধ্যে রাণীনগর উপজেলায় রয়েছে ১১টি ইটভাটা, যার একটিরও বৈধ কাগজপত্র নেই।

এসব ইটভাটা রাণীনগর-আত্রাই সড়কের পাশে জনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে অবস্থিত। আনুমান প্রতি এক কিলোমিটারের মধ্যে দুটি করে ভাটা অবস্থিত। ফলে ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভাটার আশেপাশের জমিতে ফসলের উৎপাদন কমার সাথে জনস্বাস্থের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের প্রার্দুভাবও বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপজেলার চকমনু গ্রামের রইচ উদ্দিন বলেন, গ্রামের আশেপাশে দুটি ইট ভাটা রয়েছে। ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে বছরের পর বছর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ভাটার ধোঁয়ার কারণে বিভিন্ন ফলজগাছের ফলন কমেছে। জমিতে ফসলের উৎপাদন কমেছে। এছাড়া মানুষসহ অন্যান্য গবাদিপশুর বিভিন্ন রোগ-বালাই লেগেই আছে। আবার ভাটার বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দিলে ভাটার আশেপাশে থাকা জমির সব ফসল পুড়ে যায়। প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়নি।
বাহাদুরপুর গ্রামের আরিফ হোসেন বলেন, গ্রামীণ জনপদে দিনে ও রাতে ভাটার মাটি বহনের ট্রাক্টরের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। এছাড়া প্রতিদিনই ভাটার পেটে যাচ্ছে ফসলি জমির মাটি। মাটি খেকোদের পাল্লায় পড়ে তিন ফসলি জমির টপ সয়েল হারিয়ে চাষাবাদের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে। দ্রুত পরিবেশের ক্ষতিকারক এই সব অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরিবেশবান্ধব ভাটা স্থাপন কিংবা রূপান্তর করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলার দ্বীপ ভাটার মালিক আব্দুস ছাত্তার শাহ বলেন, আমি ভাটা ব্যবসায় নতুন। এই জগতে এসে দেখছি যে ভাটার কাগজপত্র করা খুবই জটিল কাজ। বিভিন্ন অফিসে গেলে হয়রানির শেষ থাকে না। তবুও আমি ভাটার বৈধ কাগজপত্র করার প্রসেস অব্যাহত রেখেছি।
উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিডিসিও ইটভাটার মালিক সাইদুর রহমান বলেন ভাটার ছাড়পত্র নিতে নানা জটিলতার সম্মুখিন হতে হয়। ২০১৭ সালের পর থেকে কোনো ভাটারই কাগজপত্রা নবায়ন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আবার অনেকেই নবায়ন করার আবেদনও দিয়ে রেখেছে। তবে আমরা নিয়মিত সরকারকে ভ্যাট দিয়ে আসছি। সমিতির পক্ষ থেকে সকল ভাটা মালিককে বৈধ কাগজপত্র সংগ্রহ করার জন্য তাগাদা প্রদান করা হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো. মলিন মিয়া বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় স্থাপিত অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভাটা গুড়িয়ে দিয়েছি। পাশাপাশি মালিকদের অর্থদণ্ডও প্রদান করা হয়েছে। যে ভাটার বৈধ কাগজপত্র নেই সেই ভাটার বিরুদ্ধে আবারো অভিযান পরিচালনা করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এই ধরণের অভিযান সব সময় অব্যাহত রাখা হবে বলেও তিনি জানান।