রাবি প্রতিবেদক
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার প্রতি দায়বদ্ধ করতে ছাত্রজনতার অংশগ্রহণ ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে ছায়া সরকার গঠনের দাবিসহ ৩ দফা দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও রাজশাহী।
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও ছাত্র-জনতার অংশীদারিত্ববিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদে সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী নগরীর তালাইমারির বিজয় ২৪ চত্বরে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এই দাবি জানান তাঁরা।
তাদের অন্য দুইটি দাবি হলো- এককেন্দ্রিকতা বাদ দিয়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে আন্দোলনের সকল অংশীজনকে রাষ্ট্র গঠনে সমান সুযোগ দেওয়া এবং ছাত্রজনতার মতামত না নিয়ে কোন প্রক্রিয়ায় উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয় তার জবাবদিহিতা করা।
সমাবেশে ‘ঢাকা কেন্দ্রিক রাষ্ট্র গঠন, চলবে না চলবে না’, ‘উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলা, চলছে কেন অবহেলা’, ‘উপদেষ্টায় ওরা কারা, জবাব চায় বিপ্লবীরা’ ‘অপরাজনীতির কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘আমার ভাই কবরে, ফারুকি কেন সরকারে’, ‘আমাদের যুদ্ধ চলছে, চলবে’, ‘ক্ষমতা না জনতা? জনতা জনতা’, ‘আপোষ না সংগ্রাম? সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘দফা এক দাবি এক, ফারুকীর পদত্যাগ’, ‘শহীদদের স্মরণে ভয় করিনা মরনে’, ‘দালালি না রাজপথ? রাজপথ, রাজপথ’Ñনানা স্লোগান দিতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের।
বিক্ষোভ সমাবেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহাইর ইসলাম বলেন, আমরা এখনো বেঁচে আছি। আমরা মরে যায়নি৷ আমরা শহীদ ভাইদের রক্তের সাথে বেইমানি করতে পারি না। আমরা ৩০ হাজার আহত ভাইদের রক্তের সাথে বেইমানি করতে পারি না। যতদিন এই ছাত্রজনতার শেষ রক্তবিন্দুটুকু অবশিষ্ট থাকবে, ততদিন পর্যন্ত এই সোনার বাংলাদেশে কোনো ফ্যাসিবাদের জায়গা হবে না। এই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো দোসর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আজকে ছাত্রজনতার সাথে ও তাদের অংশীদারত্ববিহীন যে উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করতে হ।ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি। অথচ ইতোমধ্যে এই বাংলাদেশে বৈষম্য শুরু হয়ে গেছে। সোনার বাংলাদেশে সকল প্রকার বৈষম্য প্রতিহত করেই ছাড়বো।
আরেক সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মো. মেশকাত চৌধুরি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থাণসহ সব আন্দোলনে ছাত্ররা অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু বারবার ছাত্রদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এখন চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্রদের সঙ্গে আবার প্রতারণা করা হচ্ছে। সরকার গঠনে ছাত্রদের অংশদারিত্ববিহীন সিদ্ধান্তে ফ্যাসিবাদের দোসরদের ডেকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
এই দেশে পুনরায় স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার যে চক্রান্ত করা হচ্ছে, তা কখনো বাস্তবায়ন হবে না। নতুন এই দেশ গড়তে আমরা শহিদ ও আহত ভাইদের প্রতি দায়বদ্ধ। সরকার গঠনে একটি শহর বা একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিকতা দেখা দিয়েছে। এগুলো অতিদ্রুত বন্ধ করতে হবে। আমরা ছাত্রজনতা রাজপথে আছি। এগুলো বন্ধ করেই আমরা ঘরে ফিরব।’
সমাবেশের পরে তালাইমারি থেকে কাজলা গেট পর্যন্ত এক বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচিতে রাবিসহ রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও সাধারণ মানুষসহ শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।