বৃহস্পতিবার, ৮ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচন। গতকাল রোববার ছিলো নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন। রাত পোহালেই নির্বাচন। তাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মাহবুব জামান ভুলু এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার ব্যস্ত সময় পার করেছেন। মাহবুব জামান ভুলু তার নিজ প্রতীক তালগাছ এবং মোহাম্দ আলী সরকার আনারস মার্কায় ভোটারদের কাছে ভোটপ্রার্থনা করেছেন। দুই প্রার্থীই নিজের অবস্থান শক্ত করতে চেয়েছেন। আস্থা অর্জনের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভোটারদের। একটি গতিশীল এবং দুর্র্নীতিমুক্ত জেলা পরিষদ উপহার দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া জয়ের ব্যাপারে দুই প্রার্থীই সমানভাবে আশাবাদী।
এদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দুই প্রার্থীরই রয়েছে বেশকিছু ইতিবাচক দিক। সমর্থনের ক্ষেত্রে উভয় প্রার্থীই রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ এবং জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন পাচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে দুই প্রার্থীরই রয়েছে দুর্বলতা। আর এ দুর্বলতাগুলোর ধরন উভয় প্রার্থীর ক্ষেত্রে একই রকম বলে মনে করেন এ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং জনপ্রতিনিধিরা।
অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুব জামান ভুলু এবং মোহাম্মদ আলী সরকার উভয়েই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। তারা উভয়েই সাধারণ মানুষের মতামতকে খুব একটা আমলে নেন না। এমনকী মানুষের সঙ্গে মেশেন না। এক্ষেত্রে ভুলু এবং সরকারের ব্যক্তিত্বের মধ্যে মিল রয়েছে। আর এ কারণেই এ নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মধ্যে ভোটাররা গুনগত বিষয়টি একইভাবে দেখছেন।
তবে আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতাকর্মী বলছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোহাম্মদ আলী সরকারও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। একারণে নির্বাচনে কে জিতবেন- বিষয়টি তাদের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। কারণ, দুইজনের মধ্যে যেই জিতুন, তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গেই সম্পর্কিত। তাই হার-জিত নিয়ে নিয়ে খুব বেশি দুঃচিন্তা নেই বলে আওয়ামী লীগের একটি অংশের নেতাকর্মীরা মনে করেন।
জেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের উভয় প্রার্থীর ক্ষেত্রে কিছু বিশ্লেষণ রয়েছে। তারা বলছেন, কয়েকটি কারণে মোহাম্মদ আলী সরকার নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেন। মোহাম্মদ আলী সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বি মাহবুব জামান ভুলু আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ বিরোধী বিএনপি এবং জামায়াত সমর্থিত জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ ভোটারদের সমর্থন পেতে পারেন মোহাম্মদ আলী সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, জেলার নয়টি উপজেলা, ১৩টি পৌরসভা এবং ৭১টি ইউনিয়ন পরিষদে মোট ভোটারের সংখ্যা এক হাজার ৭১টি। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনে ভোটার ৩৯ জন, প্রতিটি উপজেলা পরিষদে তিনজন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে ১৩ জন করে ভোটার। এসব ভোটারের মধ্যে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ মেয়র আওয়ামী লীগ সমর্থক। মেয়র এবং চেয়ারম্যানদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক কম। কিন্তু সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদে বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থন বেশি। এসব জনপ্রতিনিধিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকারকে সমর্থন করবেন বলে তার সমর্থকরা মনে করছেন। আর এ কারণে তিনি বিজয়ী হবেন বলে তাদের মতামত।
অপরদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মোহাম্মদ আলী সরকার এবং তার সমর্থকদের যোগাযোগ হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক জনপ্রতিনিধিরা মোহাম্মদ আলী সরকারকে সমর্থন দেবেন বলে দাবি করছেন তার সমর্থকরা। এছ্ড়াা নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, মোহাম্মদ আলী সরকারের সঙ্গে ইতোমধ্যে রাজশাহী অঞ্চলের বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। গত শনিবার রাতেও নগরীর উপশহর এলাকায় বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন মোহাম্মদ আলী সরকার।
ওই সূত্র জানায়, বিএনপির শীর্ষ নেতারা মোহাম্মদ আলী সরকারকে সমর্থন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে বিএনপি নেতারা তাদের দলীয় জনপ্রতিনিধিদের মোহাম্মদ আলী সরকারকে সমর্থন দেয়ার জন্য ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিয়েছেন। তাছাড়া গতকাল রোববার মোহাম্মদ আলী সরকারের সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত সমর্থিত একজন ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। এ কারণে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা অনেকেই বলছেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিরেধিতার স্থান থেকে জামায়াত সমর্থক জনপ্রতিনিধিরা মোহাম্মদ আলী সরকারকে সমর্থন দেবেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাকর্মী মাহবুব জামান ভুলুর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনী প্রচারে তার পাশে রয়েছেন এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। লিটনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেেেছন। জনপ্রতিনিধিরা মাহবুব জামান ভুলুকে সমর্থনের অঙ্গিকার করেছেন।
এছাড়া ভুলু শিক্ষাজীবন থেকে রাজনৈতিক কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। একারণে আওয়ামী লীগে ভুলুর দীর্ঘ সময়ের বেশকিছু ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী রয়েছেন। তারা ভুলুর পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। এসব পুরনো রাজনৈতিক কর্মীরা ভুলুর জন্য ‘পজিটিভ রেজাল্ট’ নিয়ে আসবেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এছাড়া উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের জনপ্রতিনিধিরাই ভুলুকে সমর্থন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ভুলু ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী হবার কারণে তিনি বিজয়ী হলে জেলা পরিষদ গতিশীল হবে। বরাদ্দ বেশি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে উন্নয়নমূলক কর্মকা- সংঘটিত হবে বলে মনে করছেন তার সমর্থকরা।