শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি হচ্ছে হুন্ডি অর্থায়ন। হুন্ডির মাধ্যমের সংগঠন চলানোর জন্য তারা অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নিজ দায়িত্বে তারা অর্থ সংগ্রহ করে। গুলশানের হলি আর্টিজান ট্রাজেডি থেকেই এই শিক্ষা পওয়া গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সোমবার দুপুরে মিরপুর সেনানিবাসের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ মিলনায়তনে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়ে বক্তৃতা করছিলেন।।
জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়টির প্রতি সবসময়ই নাগরিক সমাজের পরামর্শ ছিল যে, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় জঙ্গিদের অর্থ উৎসের সন্ধান জরুরি। এই অর্থায়নের সাথে যে, যারা বা যেসব প্রতিষ্ঠান জড়িয়ে আছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা। যদিও এখনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে সেভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। অর্থের উৎসপথ খোলা রেখে জঙ্গি দমনে সফলতা পাওয়া সম্ভব হবে না। বর্তমান সরকার অবশ্য রেসপথেই এগিয়েছে এবং এর সফলতাও মিলতে শুরু করেছে।
এটা স্বীকার্য বিষয় যে, পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে দেশকে পরিকল্পিত উপায়ে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক মিশন কাজ করেছে। তারা রাষ্ট্র শক্তিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে একটি মিনি পাকিস্তানে রূপ দেয়ার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ তারা গ্রহণ করেছিল। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে, আবার জামায়াতে ইসলামী পরিকল্পিত উপায়ে অসংখ্যা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে অর্থ সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছে। ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। সাহায্যের নামে বিদেশথেকে এসেছে প্রচুর অর্থ যা দেশকে অস্থিতিশীল করতে, নৈরাজ্য সৃষ্টিতে বিনিয়োগ হয়েছে। প্রগতিশীল চিন্তার মানুষদের হত্যা করা, ধ্বংসযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগ চালিয়ে দেশ জুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে চলেছে। জঙ্গি অর্থায়নে উৎসগুলোর প্রতি ব্যাপক নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। জঙ্গি সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আসা সমআভব হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের তদন্তে জানা গেছে, ঢাকার ৯০টি অবৈধ মানিচেঞ্জার জঙ্গিদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে। বিদেশি মুদ্রার বদলে তুলে দিচ্ছে বাংলাদেশি টাকা। যাতে জঙ্গিদের অচল টাকা ফের চলতে পারে। সড়কে বা বিমানে দেশে ফেরার সময় চেকিং হয় না। দেশ ত্যাগের আগে কাস্টমস দেখে, কী নিয়ে যাচ্ছে। দেশে পা দিলে যাত্রীরা নিশ্চিন্ত। কাস্টমস তল্লাশি চালায় না। মনে করে, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছে। যা আনে আনুক। এই উদাসীনতাই বিপদ ডেকে আনে। অবৈধ বিদেশি মুদ্রা নিয়ে ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। তাদের চেহারা দেখে জঙ্গি ভাবার উপায় নেই। এবার কিন্তু যাতায়াতে দু’দিকেই কড়া চেকিংয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অনিয়মের অভিযোগে ৩৬৮টি মানিচেঞ্জারের লাইসেন্স ইতোমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে।
অবশ্য নানা উপায়ে জঙ্গি অর্থায়ন হগয়ে থাকে। জটিল হল ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগ ঠেকানো। এমন ব্যক্তি অনেকেই আছেন। এই বিনিয়োগ যেমন ধনী ব্যবসায়ী- প্রতিষ্ঠান, মধ্যম মানের চাকরিজীবী, উচ্চ পদের চাকরিজীবীরা নিয়মিতভাবে অর্থ বিনোয়গ করে থাকে বলে অভিযোগ আছে। এগুলোকেও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা দরকার। এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনেয়োগ সাকুল্যে বিপুল অর্থের যোগান সৃষ্টি করে। যুদ্ধাপরাধীদের গড়া প্রাতিষ্ঠানের লোকবলের মাসিক চাঁদা আদায়ের অভিযোগ সত্যি হলে সেটাও বিপুল অর্থ-তহবিল সৃষ্টি করে। এসব অর্থউৎস ক্ষেত্রও যাচাই করে দেখা দরকার। কেননা জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদে এসব বিনেয়োগ খুবই নিরবে হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এই সমস্যা রয়েছে। আমরা এটি মোকাবেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সেমিনারে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কে এম আব্দুর রহমান।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন- সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ নূর উদ্দিন খান, বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউশন (বিইআই) এর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী সাবেক রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহানসহ আরও অনেকে।
টাকায় আটকেছে বাংলাদেশের জঙ্গিরা। সংগঠন চালাতে হিমশিম। এমন দুর্দিন আসবে ভাবেনি। যারা দিত, হাত গুটিয়েছে।
আকালের সন্ধানে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা ব্যর্থ। রক্ত ঝরছে না। ভয়ে মানুষ কাঁপছে না। নতুন প্রকল্পের কাজ থামাতে হচ্ছে না। দুর্বার গতিতে এগোচ্ছে উন্নয়ন। আতঙ্কিত জঙ্গিরা পালানোর পথ খুঁজছে। গোপন ডেরায় আস্তানা গেড়েও নিস্তার নেই। বিদেশ থেকে টাকা আনতে দেদার এনজিও খুলেছিল। সমাজ কল্যাণের নামে টাকা তুলত। তাও বন্ধ। কাজের মিথ্যে ফিরিস্তি দিতে গিয়ে ধরা পড়েছে। বেনামি এনজিও-তেও অর্থ আমদানি নেই। এখন এদেশ সেদেশ থেকে কুড়িয়ে বাড়িয়ে যা পারছে এনে জড়ো করছে। সেখানেও বাধা। বিদেশি মুদ্রা বাংলাদেশি টাকায় বদলাতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের নিয়মে একমাত্র ডলারের রূপান্তর সম্ভব। জঙ্গিদের হাতে মার্কিন ডলার কম। বেশি পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মুদ্রা। সৌদি আরবের রিয়াল, সিরিয়ার সিরীয় পাউন্ড পকেট ভর্তি করে এনেও ভাঙাতে পারছে না। মুশকিল আসানে এগিয়ে এসেছিল অবৈধ মানিচেঞ্জাররা। তাদের কাছে যে কোনও দেশের মুদ্রা বাংলাদেশি টাকায় ভাঙিয়ে দেয়াটা জলভাত। লাইসেন্সের পরোয়া না করেই দিব্যি ব্যবসা। এমন ভাবে দোকান সাজিয়ে বসে, বোঝার উপায় নেই বৈধ না অবৈধ।
ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সন্ধান পেলেই ধরছে অবৈধ মানিচেঞ্জারদের। উদ্ধার করছে অবৈধ মুদ্রা। তদন্তে জানা গেছে, ঢাকার ৯০টি অবৈধ মানিচেঞ্জার জঙ্গিদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে। বিদেশি মুদ্রার বদলে তুলে দিচ্ছে বাংলাদেশি টাকা। যাতে জঙ্গিদের অচল টাকা ফের চলতে পারে। সড়কে বা বিমানে দেশে ফেরার সময় চেকিং হয় না। দেশ ত্যাগের আগে কাস্টমস দেখে, কী নিয়ে যাচ্ছে। দেশে পা দিলে যাত্রীরা নিশ্চিন্ত। কাস্টমস তল্লাশি চালায় না। মনে করে, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছে। যা আনে আনুক। এই উদাসীনতাই বিপদ ডেকে আনে। অবৈধ বিদেশি মুদ্রা নিয়ে ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। তাদের চেহারা দেখে জঙ্গি ভাবার উপায় নেই। এবার কিন্তু যাতায়াতে দু’দিকেই কড়া চেকিংয়ের মুখোমুখি হতে হবে।
বেআইনি মানিচেঞ্জাররাও পার পাবে না। পুলিশ আর বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক মিলে ব্যবস্থা নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রানীতি, বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন আর ফরেন এক্সচেঞ্জ অপারেশন বিভাগ বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে- বৈধ মানিচেঞ্জারদের নাম ঠিকানা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে। তার বাইরে কারও সঙ্গে যেন লেনদেন করা না হয়। অবৈধ মানিচেঞ্জারদের যারা ঘর ভাড়া দিয়েছে, ঘর দখলমুক্ত করাটা তাদের কাজ। ঘর ছাড়তে না চাইলে তখন পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। নতুন কাউকে ভাড়া দিতে হলে লাইসেন্স দেখে নেয়াটা জরুরি।
অনিয়মের অভিযোগে ৩৬৮টি মানিচেঞ্জারের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। এখন বৈধ মানিচেঞ্জার ২৩৪। তার মধ্যে ঢাকায় ১৬৮, চট্টগ্রামে ২২, সিলেটে ১৫, খুলনায় ১৩, রাজশাহীতে ৬, রংপুরে ৪, বগুড়ায় ৪, বরিশালে ২। অবৈধ মানিচেঞ্জারদের অন্যতম ঠিকানা ঢাকার গুলশন। এত জায়গা থাকতে গুলশনকে কেন বাছল। ১ জুলাই গুলশন হামলায় অবৈধ মানিচেঞ্জারদের কি কোনও ভূমিকা ছিল। জঙ্গিরা কি ওদের কাছ থেকে টাকা পেয়েই অপারেশন চালিয়েছিল। তদন্তে তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। মতিঝিল, উত্তরা, ধানমান্ডি, শ্যামলীতেও ভুয়ো সাইনবোর্ড টাঙিয়ে অবৈধ মানিচেঞ্জররা ব্যবসা করছে। তাদের পাততাড়ি গুটনোর সময় এসেছে। মানিচেঞ্জারদের অফিসে ক্লোজ সার্কিট টিভি বসেছে। লেনদেন লেজারে রেকর্ড রাখতে হবে। অনলাইন রিপোটিং চলবে। মার্কিন ডলার ছাড়া অন্য কোনও বিদেশি মুদ্রা ভাঙালেই গ্রেফতার। পুলিশ আর বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের যৌথ তদারকিতে জঙ্গিদের অর্থ আমদানিতে নিশ্ছিদ্র বাঁধের ব্যবস্থা।- আনন্দবাজার পত্রিকা