শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, জঙ্গি দমনের যুদ্ধে আছি, জঙ্গি দমনের যুদ্ধ চলছে। জঙ্গি দমনের মধ্য দিয়েই দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে, সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না, সুশাসন থাকবে, প্রত্যেকটা মানুষ ন্যায় বিচার পাবে। জঙ্গি দমনের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে চলচ্চিত্রের গুরত্ব অপরিসীম।
গতকাল সোমবার বেলা ৫টায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনকালে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেন। রাজশাহীর জেলা শিল্পকলায় অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপি এই ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটি ও ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি।
হাসানুল হক ইনু চলচ্চিত্রের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, শিল্পকলার যত মাধ্যম আছে তার মধ্যে চলচ্চিত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আমরা নিজেরা কথা বলে যা মানুষদের কখনো শেখাতে পারব না, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তা খুব সহজেই মানুষ শিখতে পারে। ইতিহাসের আবর্জনা দূর করতে চলচ্চিত্রের ভূমিকা অপরিসীম।
হাসানুল হক ইনু বলেন, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, পাকিস্তানি দোসর, বঙ্গবন্ধুর খুনিরা হচ্ছে ইতিহাসের আবর্জনা। এই আবর্জনাদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে জিয়াউর রহমান। তার হাত ধরেই এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার উত্থান। সেই সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে সাংস্কৃতিক চর্চার বিকল্প নেই। কারণ দৈহিকভাবে জঙ্গিদের মৃত্যু হলেও মনোজগতে জঙ্গিদের জীবাণু থেকে যায়। মনোজগত থেকে জঙ্গিদের জীবাণু দূর করতে চলচ্চিত্র শক্তিশালী মাধ্যম।
হাসানুল হক ইনু বলেন, শুধু জঙ্গিদের নির্মূল করলেই হবে না, জঙ্গির সঙ্গী-সাথী এবং পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে চিনতে হবে। এই পৃুষ্ঠপোষকরাই দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। বর্তমানে বাংলাদেশ একটি বাঁকে রয়েছে, এই বাঁক থেকে উত্তরণের মধ্য দিয়েই দেশ এগিয়ে যাবে। প্রতিষ্ঠা পাবে সাম্য, ন্যায় ও আইনের সমাজ। এইজন্য জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আমাদের এই যুদ্ধ। চলচ্চিত্র সেই যুদ্ধে শক্তিশালী অস্ত্র।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু করা হয়। এরপর বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা। এরপর শিল্পকলার মিলনায়তনে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন, রাজশাহী ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ডা. এফ এম এ জাহিদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা। স্বাগত বক্তব্য দেন, রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি আহসান কবীর লিটন।
সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের সময় এই রাজশাহীতে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। আজ সেই রাজশাহীতেই জঙ্গিবিরোধী চলচ্চিত্র উৎসব হচ্ছে। এর মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয় রাজশাহীর জনগণ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। সারাদেশে জঙ্গিবাদের যে জীবাণু বিরাজ করছে তা ভস্মিভূত করবে এই চলচ্চিত্র উৎসব।
সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে প্রচারণা চালাচ্ছে, রাজশাহীর জঙ্গিবিরোধী স্বল্পদৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্র জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সেই প্রচারণাকে এগিয়ে নেবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঝড় তুলবে। প্রকৃতপক্ষে রাজশাহীর নির্মাতারা চলচ্চিত্র নির্মাণের যে সক্ষমতা অর্জন করেছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তা আরো এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
তিন দিনব্যাপি চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম দিনে সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা নির্মিত ডকুমেন্টারি ও তারেক মাসুদ পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’ প্রদর্শিত হয়। দ্বিতীয় দিনে প্রদর্শিত হবে, রাকিবুল হাসান পরিচালিত ডকুমেন্টারি ‘আলো হাতে আঁধারের যাত্রী’ ও ‘জঙ্গিবাদ সর্বনাশা’, মাহমুদ হোসেন মাসুদের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আলোর দেখা’, শাহারিয়ার চয়নের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ফানুস’, এম আই মুন্নার স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘যদি সে জানতো’ ও শাহরিয়ার কবিরের ডকুমেন্টারি ‘দ্য আলটিমেট জিহাদ’।
উৎসবের তৃতীয় দিনে প্রদর্শিত হবে, আরিফ হোসেন হৃদয় পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুখোশ’, সীমান্ত রাজনের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ইন দ্য ডার্ক’ ও আবু সাইয়ীদ পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘অপেক্ষা’। এরপর বেলা সাড়ে ১২টায় সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন উৎসব শুরু হবে বেলা ১০টায়।