বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিবেদক
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেছেন, ‘মুর্খদের রাজনীতির কারণে ‘৪৭ সালে দেশ বিভাজন হয়েছিলো। এর কারণ কেউ বলতে পারবে না। এরপর ‘৫২তে রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছিলো। মনে রাখতে হবে জনগণ যেখানে থাকে তার থেকে অনেক দূরে জনগণকে নিয়ে রাজনীতি হয়। তাই জনগণের সাথে বিচ্ছিন্ন রাজনীতিবিদদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখা উচিত নয়।’
শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস) আয়োজিত ‘বাঙালির আত্মপরিচয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার অন্তর্ভুক্তি : ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক।
পাকিস্তানকে বর্বর রাষ্ট্র উল্লেখ করে হাসান আজিজুল হক আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যা- তাই হয়েছিলেন আর জিন্নাহ যা নয়- তাই হয়েছিলেন। এই জায়গাতেই পাকিস্তান আর বাংলাদেশের পার্থক্য। এদেশকে যদি আমরা চাই হিমালয়ের মতো উচ্চতা দিতে পারবো। কেউ আর বাধা দিতে পারবে না। কিছু ট্যাস মার্কা লোক আছে যারা এদিকেও নাই ওদিকেও নাই। এদের সকলকে ঠেলে বাংলা ভাষা টিকে আছে। টিকে থাকবে। এখন পৃথিবীতে ৩০ কোটি লোক বাংলায় কথা বলে।’
গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এই বক্তৃতায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন। এসময় মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন বেলজিয়ামের ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ কোঅপারেশন-এর অন্যতম পরিচালক ড. তাজিন ম্যাহনাজ মুরশিদ।
মূল বক্তার বক্তব্যে ড. তাজিন ম্যাহনাজ মুরশিদ বলেন, ‘১৯৪০ এবং ৫০ এর দশকে, বিশেষত স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্ভবের পর, পূর্ব বাংলায় বাঙালির নিজস্ব পরিচয় গঠনের ইতিহাস খোঁজা হয়েছে। সামাজিক এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অথবা পরিচয়ক নির্মাণে বাংলাদেশের মুসলিম বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় নীতিগতভাবে সমজাতীয় ছিলেন না।’
তিনি আরো বলেন, ‘১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর বাঙালি মুসলমান ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় নিয়ে উভয় সংকটে পড়ে। যদি সে ধর্মকে গ্রহণ করে তবে সে ইসলাম কিরূপ সেটি নির্ধারনে মুসলিম লীগের অধিকার মেনে নিল; কিন্তু যদি সে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বেছে নেয় তবে সে বিদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত হয়। এই ধর্মীয় ধর্মনিরপেক্ষ উৎকণ্ঠা রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অংগনকে উত্তপ্ত করে তোলে এবং বাঙালি মুসলমানের পরিচয়ের সংকটকে তীব্র করে তোলে।’
আইবিএস এর পরিচালক অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর সনৎকুমার সাহা। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান।
অনুষ্ঠানে প্রফেসর সনৎকুমার সাহা বলেন, ‘মুসলিম স্বকীয়তাকে বাড়ানোর জন্যই পাকিস্তান রাষ্ট্র তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা ও পাকিস্তান একসঙ্গে থাকতে পারে না। কিন্তু আমরা কি সচেতনভাবেই ধর্মনিরপেক্ষ হয়েছি? পাকিস্তানের বিপক্ষে দাঁড়াতে পেরেছি? তিনি বলেন, যে দল ক্ষমতায় আসে, তারা নিজেদের দলভারী করতে সব মতাদর্শের সঙ্গেই হাত মিলাচ্ছে। তাই পাকিস্তান ভূত ও ধর্মের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
আইবিএস এর পিএইচডি ফেলো মো. জাহিদুল ইসলাম ও এমফিল ফেলো নিবেদিতা রায় বক্তৃতা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।