বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:১৮ মার্চ, ১৯৭১ : আজ মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক হয়নি। কিন্তু স্বাধীনতাকামী মানুষের স্বাধীনতার আন্দোলন নতুন নতুন মাত্রায় ফুঁসে উঠেছে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত একই ধ্বনি ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’ শত শত বড় মিছিল ঢাকা নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডিস্থ বাড়ির দিকে ধাবিত। সাধারণ বাঙালিদের সামরিক প্রশিক্ষণ দানের কাজও এগিয়ে এসেছিল।
বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবনের সামনে মিছিল করে আসা ছাত্র-নার্সদের এক সমাবেশে বলেন, ‘বাংলাদেশের সাত কোটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। আমাদের আঘাত করা হলে অবশ্যই আমরা প্রতিঘাত করবো, প্রতিহত করবো। নিজেদের অধিকার আদায় ও মুক্তি অর্জনের জন্য আন্দোলনকালে জনগণ যে রক্ত দিয়েছে তার সাথে আমরা কখনই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না। তিনি বলেন, আমাদের দাবি ন্যায়সঙ্গত। আল্লাহ আমাদের সহায়।’
বাসভবনের সামনে অপর এক সমাবেশে বিপুল জনতা স্বাধীনতার পক্ষে স্লোগান দিতে থাকলে তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা আপনারা পাবেন।’
সমবেত জনতা ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ গগনবিদারী স্লোগান দিতে থাকলে বঙ্গবন্ধু নিজেও সেøাগানের সাথে কণ্ঠ মিলান। ২ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত পূর্ব বাংলায় সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণ সম্পর্কে আগের দিন গঠিত তদন্ত কমিশন বঙ্গবন্ধু প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান অবস্থায় এ জাতীয় কমিশন করে কোনো লাভ নেই।’ স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ আজ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা বিশ্বের প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষের সমর্থন কামনা করি। তাই বিশ্বের সকল মানুষের কাছে বিশেষভাবে যে সব দেশে (আমেরিকা, চিন, রাশিয়া, ইরান) পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করছে তাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যেন তাদের দেয়া অস্ত্র মুক্তি সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে না পারে, তার জন্য পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বিশেষভাবে শ্রীলংকা সরকারকে পাকিস্তানি সৈন্যবাহী বিমানকে জ্বালানি গ্রহণের জন্য তাদের দেশে অবতরণের নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন জানাচ্ছি।’
সে সময় শ্রীলংকা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শ্রীমাভো বন্দরনায়ক। তিনি পাকিস্তানের বিমান চলাচলের ওপর কোনরূপ বিধি নিষেধ জারি করেন নি।