রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৯ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
মিলি রাণী নামের ৪৬ দিনের ছোট্ট শিশুকে নিয়ে নওগাঁর নজিপুর থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছিলেন তারা মা লিপি রাণী ও বাবা সুমন সাহা। এসে দেখেন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ। তারা টেনশনে অস্থির হয়ে পড়েন। তাদের ছোট্ট শিশুটির হার্টের অসুখ। তারা কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। চিকিৎসক নগরীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে তাদের বাচ্চার পরীক্ষা করে নিয়ে যেতে বলেছেন। অথচ ধর্মঘটের কারণে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রয়েছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা থেকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি শ্বাসতন্ত্র ও পেটের পীড়ায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন। ঢাকার প্রায় সব হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তাই বড় আশা করে কোলের ছোট্ট শিশু ও শ্বাশুড়িকে নিয়ে রাজশাহীতে এসেছেন চিকিৎসা নিতে। ঢাকার গাজীপুরে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কাজ করা ফরিদা বলেন, আমার জমানো ১০ হাজার টাকা ও স্বামীর ধার করে দেয়া পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছি। মঙ্গলবার সিরিয়াল নেয়ার পর ধর্মঘট শুরু হয়। এইজন্য বিকেলে সিরিয়াল থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসক দেখেননি। রাজশাহীতে থাকারও কোনো জায়গা নেই। যা কিছুই করছি সব টাকার ওপর দিয়ে। কাল থেকে এই পর্যন্ত আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে।
কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী থানা দৌলতপুরের প্রাগপুর থেকে গত মঙ্গলবার স্ত্রী ও শিশুসহ রাজশাহীতে চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছেন শাহিন সিদ্দিকী। তারা দুপুরে টাকা দিয়ে ডা. সুব্রত ঘোষ ও ডা. কফিল উদ্দিনের কাছে সিরিয়ালও নিয়েছিলেন। অথচ ধর্মঘটের কারণে চিকিৎসা নিতে পারেননি।
গত মঙ্গলবার থেকে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটের কারণে নগরীর সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ছিল। এইজন্য এইরকম অসংখ্য রোগি ও তার স্বজনরা চিকিৎসা নিতে এসে ধর্মঘটের কারণে চিকিৎসা নিতে পারেননি। চিকিৎসা নিতে না পেরে এদের অনেকেই ফিরে গেছেন। অনেকে হোটেলে ভাড়া দিয়ে থেকেছেন নগরীতে।
এদের এই দুর্ভোগের পর গতকাল বুধবার বিকেল থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিচালিত ভ্রাম্যামাণ আদালতের অভিযানের জের ধরে তিন দফা দাবিতে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ এই ধর্মঘট ডেকেছিলেন। তাদের দাবি ছিল, মঙ্গলবার অভিযানে গ্রেফতারকৃত দুই কর্মকর্তাকে নিশর্ত মুক্তি প্রদান, ১৯৮২ সালের আইন অনুযায়ী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করা ও অস্বাভাবিক ট্রেড লাইসেন্স ফি কমানো এবং সাইনবোর্ড ফি বাতিল করা।
গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসনের কক্ষে রাজশাহী বিভাগের স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ও জেলা সিভিল সার্জনের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির রাজশাহীর সহসভাপতি ড. ফয়সাল কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, বেলা একটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই কর্মকর্তাকে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা স্থগিত ও পরবর্তীতে সহনীয় পর্যায়ে জরিমানা আরোপের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে বিকেল তিনটা থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তবে কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, কোনো ধরনের শর্ত আরোপ ছাড়াই তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কারণ শর্ত আরোপের তো কিছুই নেই। তাদের ওপর যৌক্তিকভাবে জরিমানা করা হয়েছে।