সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জননী নার্সিং কলেজে শিক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষার্থীদের উপর নিপিড়নের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর মৎস্য ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বর্ণালী মোড় ঘুরে জননী নার্সিং ইনস্টিটিউটে এসে শেষ করে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন রাজশাহী মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাদিম সিনা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা মঞ্চের আহ্বায়ক রাকিন আবসার অর্নব, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জের সভাপতি সামীউল আলীম।
পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পরের দিনের কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে যান। তার আগে প্রতিষ্ঠানটির তালা খুলে দেওয়া হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানের ভেতরে আটকে থাকা শিক্ষক-কর্মচারী বেরিয়ে আসলে আবার তালা দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন বছর মেয়াদী জননী নার্সিং ইন্সটিটিউটের শনিবার তিন বর্ষেরই পরীক্ষা ছিল। তারা পরীক্ষা বয়কট করে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে অধ্যক্ষ নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামো, ল্যাব সুবিধাসহ একাধিক দাবি পূরণের দাবি করছেন তারা।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের এই প্রতিষ্ঠানের মাত্র তিনজন নিয়মিত শিক্ষক রয়েছেন। ছয় মাস ধরে কোনো অধ্যক্ষ নেই। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে। তিন বর্ষে শিক্ষার্থী প্রায় ১০০ জন। এই তিন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে। তাদের পর্যাপ্ত ল্যাব নেই। ল্যাব যে কয়েকটি আছে, সেখানে কোনো যন্ত্রপাতি নেই। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ভবন নেই। যে ভবনে প্রতিষ্ঠানটি সেখানে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুম, কমন রুম, হোস্টেল সুবিধা নেই। ক্লাস চালানো হয় ভাড়া করা অদক্ষ শিক্ষক দিয়ে। কোনো ক্লাসে অনুপস্থিত হলে কোনো কারণে ২০০ টাকা জরিমানা দিতে হয়। সেই টাকার কোনো রশিদ দেয় না। সেই টাকার কোনো হিসাব না দিয়ে প্রশাসন খরচ করে। কোনো টাকার রশিদ দেওয়া হয় না। এই অনিয়ম বন্ধ করা না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বানী বলেন, তাদের কোর্স শেষ না করেই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। অদক্ষ শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করানো হয়। রশিদ ছাড়াই টাকা নেওয়া হয়। এগুলোর প্রতিবাদ করলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরিফুল ইসলাম ডেকে নিয়ে গিয়ে শাসায়। তাঁরা কৃষক পরিবারের সন্তান। টাকা দিয়ে পড়ছেন। তারা কোনো অনিয়ম মানবেন না।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আরিফুজ্জামান আসেন। সাজেদুর রহমান বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে দক্ষ শিক্ষক দিয়েই চালানো হয়। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কোনো অনিয়ম নেই। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে বেশি। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করতে জরিমানার টাকা বেশি করা হয়েছে। খুব দ্রুতই প্রিন্সিপাল নিয়োগ দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো তারা পূরণ করার চেষ্টা করবেন।
কর্মসূচি শেষ করার আগে ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট নার্সেস ইউনিয়ন রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি বিপ্লব হাসান বলেন, তারা আজকের মতো কর্মসূচি শেষ করেছেন। বিএনএমসি, রাজশাহী জেলা প্রশাসক, দুদকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্মারকলিপি দিবেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিরের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. নাসির উদ্দিন (উপসচিব) বলেন, শিক্ষার্থী যেসব বিষয়ে আন্দোলন করছেন, তা যদি সত্য হয় তারা ব্যবস্থা নিবেন। তিনি দ্রুতই সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলবেন।