জননেতা আতাউর রহমান

আপডেট: জানুয়ারি ১২, ২০১৭, ১২:০১ পূর্বাহ্ণ

ওয়ালিউর রহমান বাবু



১২ জানুয়ারি বহুগুণে গুণান্বিত বৃটিশ শাসক বিতাড়ন আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বায়ত্বশাসনের দাবির আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণতান্ত্রিক আন্দোলন, প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখা মুক্তিযুদ্ধের প্রথমসারির অন্যতম সংগঠক জননেতা আতাউর রহমানের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। সম্ভ্রান্ত জোতদার পরিবারের মানুষটি সবসময় সমাজের বঞ্চিত খেটেখাওয়া নিপীড়িত সাধারণ মানুষের জন্য সোচ্চার ছিলেন।
স্কুলে পড়া অবস্থায় তিনি বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে কারাবরণ করেন। কিন্তু কিশোর অবস্থাতেও তাকে আদর্শ থেকে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয় নি। সে সময় মুসলিম লীগের নাম করা নেতা আইনবিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মাদার বখ্শ আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা এবং নানা গুণ দেখে ¯েœহের হাত বাড়িয়ে দেন। জননেতা এম আতাউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের খুব কাছাকাছি হয়ে গেলেন। তাঁরা জননেতা আতাউর রহমানকে উৎসাহ দিতে থাকলেন।
জননেতা আতাউর রহমান রাজশাহীতে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা বন্ধে ভূমিকা রেখে সকলের সম্প্রীতি রক্ষায় জনমত সৃষ্টি করেছিলেন। জানা যায়, পাকিস্তান ভারত সৃষ্টির সময় পাকিস্তান কী ধরনের রাষ্ট্র হবে তা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা করে প্রস্তাব উচ্চমহলের নেতাদের কাছে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তিতে পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তান ও বাঙালিদের প্রতি সুনজর না রাখলে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ক্ষোভের কথা বলেছিলেন।
উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশে রাজনৈতিক চিন্তাভাবনায় নতুন ধারার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কখনো আদর্শচ্যুত হন নি। বাম রাজনৈতিক নেতা আতাউর রহমানের ভূমিকায় মুগ্ধ হয়ে মুসলিম লীগ নেতা মাদার বখ্শ তাঁর একমাত্র কন্যা মনোয়ারা রহমানের সাথে বিয়ে দেন।
মনোয়ারা রহমানের অনুপ্রেরণায় আতাউর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনকে আরো বেশি সাহসী করে তুলেছিলেন। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে কারাগারে থেকে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জননেতা আতাউর রহমান ভিন্ন রাজনীতি করলেও তাদের সম্পর্ক ছিলো খুব কাছের। সাহসী আতাউর রহমান পরবর্তিতে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন।
পাকিস্তান সরকারের লৌহমানব খ্যাত ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ছাত্রদের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণতান্ত্রিক অধিকার আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিলো প্রথমসারিতে। সমস্ত রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে স্বাধীনতা আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে বন্দি রেখে নির্যাতন চালায়। তাদের হত্যা তালিকায় জননেতা আতাউর রহমানেরও নাম ছিলো। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্পণের আগমুহূর্তে তাঁকে ছেড়ে দেয়।
স্বাধীনতা অর্জনের পর জননেতা আতাউর রহমান বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকার নিয়ে সকলকে ভূমিকা রাখতে উৎসাহ উদ্দীপনা যুগিয়েছিলেন।
রাজনীতিবিদ, আইনবিদ, ক্রীড়া সাংস্কৃতিক অনুরাগী আতাউর রহমান সাংবাদিকতাতেও অবদান রেখেছিলেন। ভিন্ন আদর্শের হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করলে তাঁকে রাজশাহীর গভর্নন নিযুক্ত করেছিলেন। দেশের স্বার্থে তিনি এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। ৭৫’র পট পরিবর্তনের পর তাঁকে বিভিন্নভাবে প্রস্তাব দেয়া হলেও তিনি তা অগ্রাহ্য করেছেন। এজন্য তাঁকে নানাভাবে প্রতিহিংসার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু তিনি তাঁর আদর্শ থেকে সরে যান নি। বর্তমান সময়ে জননেতা আতাউর রহমানের মত মানুষের বড় অভাব। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় যে ভূমিকা রেখে গেছেন সেই আদর্শ বাস্তবায়নে সকলের ঐকমত্যে আসা উচিৎ।
লেখক :  মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংগ্রাহক