শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
এক সময় বাংলায় এত বেশি রেশম উৎপাদিত হতো যে সেটা স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর বিদেশেও রফতানি হতো। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কালের আবর্তে রেশম শিল্প টিকিয়ে রাখায় দুরুহ হয়ে উঠেছে। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বেসরকারি উদ্যোক্তারা। আর জনবল সংকটসহ অব্যবস্থাপনার চোরাবালিতে রেশম উন্নয়ন বোর্ড।
রেশম বোর্ড ও আওতাধীন সংস্থায় অনুমোদিত ৫৮১ পদের মধ্যে ৪২৯টি শূন্য থাকার সংবাদ অনভিপ্রেত। বিপুলসংখ্যক পদ খালি থাকায় রেশম বোর্ড, রেশম নার্সারি ও রেশম কারখানাসহ সহায়ক প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া প্রতি মাসেই বিদ্যামান জনবল থেকে অবসর নেয়া কর্মী সংখ্যাও বাড়ছে। যা মোটেই কাম্য নয়।
উদ্বেগের বিষয় হলো- জনবল সংকটের পাশাপাশি রেশম উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বিভিন্ন রেশম কারখানা ও নার্সারির দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিকদের সাত মাসের বেতনও বকেয়া পড়েছে। এ অবস্থায় শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধসহ বিদ্যমান সংকট, বিশেষ করে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। অন্যথায় রেশম শিল্প চোরাবালিতেই হারিয়ে যাবে।
একটা সময় ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পের যৌবন ছিলো এ অঞ্চলেই। বাণিজ্যকুঠি স্থাপনের মধ্য দিয়ে যাত্রা করে একটা সময় ইউরোপীয় বণিকরা বাংলার বস্ত্র শিল্পের ওপর আধিপত্য বিস্তার করলেও ১৮৭০ এর দশকে মহামারি আকারে রেশম কীটের রোগবিস্তার ও কারিগরি দিক থেকে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে বাংলার রেশম শিল্প বিদেশের বাজার হারায়। বিশ শতকের প্রথম দিকে দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে বাংলার রেশম বস্ত্রের কদর কমে গিয়ে সেখানে কাশ্মীর ও মহীশূর সিল্কের চাহিদা তৈরি হয়।
এ ধারাবাহিকতায় ১৯৩০ সালের দিকে চীন ও জাপানের সিল্ক বাংলার রেশমের স্থান দখল করে। এসব সিল্ক পোশাক এখনও আমাদের দেশে আসছে। এমনকি দেশীয় সিল্কের ধুকিয়ে চলার সুযোগে বিদেশি সিল্কই রাজত্ব করছে।
জানা যায়, পাকিস্তান সরকারের তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না শিল্ক নিয়ে। আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রেও কোনো সংরক্ষণমূলক শুল্কনীতি ছিল না। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর রেশম শিল্পের উন্নয়নের জন্য অধিকতর সুসংবদ্ধ নীতি গৃহীত হয়। ১৯৭৪ সালে নাটোরের উত্তরা গণভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজশাহীর রেশম গুটি ও বস্ত্র দেখে চমৎকৃত হন এবং রেশম শিল্প বিকাশে স্বতন্ত্র একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। তারই ফসল হিসাবে পরবর্তী সময়ে ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড গঠিত হয়। কিন্তু রেশমের উদ্ভাবনসহ নানা আশা জাগানিয়া সংবাদের মধ্যেও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না দেশীয় রেশম শিল্প। অপার সম্ভাবনার এই শিল্পকে টিকেয়ে রাখতে এখনই কার্যকরি উদ্যোগ নিতে হবে। সংকটগুলো কাটিয়ে উঠতে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে।