চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সঙ্কট II সরকারের গর্ভনিরোধ পদ্ধতি বাধাগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা

আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২৪, ৭:৫৩ অপরাহ্ণ


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাজুড়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সরকারের কর্মসূচির চলমান প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিনামূল্যে সরকারি সেবা না পেয়ে গর্ভনিরোধ পদ্ধতি ব্যবহারে বিমুখ হতে পারেন বলে ধারণা করছেন জেলার সচেতন মহল। সংশ্লিষ্টরা বলছে জন্মনিরোধ সামগ্রী সরবরাহ না থাকায় গুদামে এসব পণ্যের সঙ্কট হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রজনন নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে সক্ষম দম্পতিদের কাছে খাবার বড়ি, ইনজেকশন, কনডম, আইইউডি (ইন্ট্রা ইউট্রাইন ডিভাইস), লাইগেশনসহ আরও অন্য সামগ্রী সরবরাহ করে থাকেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। প্রয়োজনের সময় বিবাহিতদের এসব সামগ্রী দিতে পারছেন না প্রতিষ্ঠানটির মাঠকর্মীরা। এতে করে জেলার মানুষ বিনামূল্যের এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি সেবার এই অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে জেলার জনসংখ্যার ওপর বিরূপ প্রভাবের ঝুঁকি আছে বলে ধারণা করছেন জেলার সাধারণ মানুষ।

সরকারের ওয়েবসাইট সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টালে তথ্য অনুযায়ী- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাজুড়ে গর্ভনিরোধ ওষধ ইনকেজটেবল, ইম্প্লানন, অক্সিটোসিনসহ সেনাটারি নেপকিন প্যাড সঙ্কট চরমে। এসব সামগ্রী কোন উপজেলায় সরবরাহ নেই। এছাড়া জেলার গোমস্তাপুর ছাড়া অন্য কোন উপজেলায় কনডম নেই। সুখী বড়ি গোমস্তাপুর আর ভোলাহাট ছাড়া অন্য তিন উপজেলা, ইসিপি খাবার পিল ভোলাহাট ছাড়াসব উপজেলায় সঙ্কট রয়েছে। নরমার ডেলিভারি কিট চারটি উপজেলায় থাকলেও মোটেও নেই ভোলাহাটে।

শিবগঞ্জের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েকদিন ধরে যোগাযোগ করছি কনডম নেয়ার জন্য। অফিসের গুদামে নাকি তাদের কাছে মজুদ নেই। তাই তারা মানুষকে কনডম দিতে পারছেন না।

স্কুল শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান গুণগত মান আর বিনামূল্যে জন্মনিয়ন্ত্রণে সরকারি সামগ্রী ব্যবহার করে দাম্পত্য জীবনে মানুষ সচেতন হয়ে গিয়েছিলো। যার কারনে অনেক হারে প্রজনন কমে গেছে। গত মাস ধরে গর্ভনিরোধ সামগ্রীর মজুদ না থাকায়, মাঠ পর্যায়ে সেবা বন্ধ রয়েছে। শিগগির এসব সেবা চালু করা না গেলে, জেলার জনসংখ্যায় বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে।

তিনি আরও বলেন, দ্রব্য মূল্যে ঊধ্বগতিতে মানুষ আগেই পেটে খাবার দেয়ার চেষ্টাটাই আগে করবে। এ সময়ে নিম্নআয়ের মানুষরা বাজার থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কিনে ব্যবহার করবে না।

পরিবার পরিকল্পনায় সেবাদানকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- তাদের কাছে কনডম, ইনজেকশনসহ অনান্য জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। সময়ের মধ্যে এসব সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে কর্মসূচির চলমান প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারির মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জেলায় অনেক জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সঙ্কট শুরু হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এসব সামগ্রীর মজুদ কমে গিয়ে চরম সঙ্কট সৃষ্টি হয়। সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় সরকারি কোন কনডম, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সরবরাহ নেই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পরিবার পরিকল্পনার উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কমডম, ইনজেকশনসহ অন্যসব সামগ্রী সরবরাহ নেই। যার কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এসব সঙ্কটের নিরসন হয়ে যাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫টি উপজেলা। এরমধ্যে সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় জনসংখ্যার দিক দিয়ে অনেক বেশি। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সেবা গ্রহণ করে থাকেন গড়ে এ জেলার ৭৮ শতাংশ মানুষ।