বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সেলিম রেজা, সাপাহার(নওগাঁ)প্রতিনিধি:
সীমান্ত ঘেঁষা জেলা নওগাঁর সাপাহার উপজেলা। এ উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জবই বিল বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম একটি বৃহৎ ও প্রাচীন বিল।
মৎস্য, প্রাকৃতিক ও পর্যটন সম্ভাবনাময় এ বিলটিকে ঘিরে এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংসদ ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার একটি ইকো-ট্যুরিজম পার্ক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। বর্তমানে খাদ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বিলটিকে পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নান্দনিক কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জবই বিলের সৌন্দর্যবর্ধনে, বিলে ব্রিজ ও ব্রিজের রাস্তা ধরে দুই পার্শ্বে সারি সারি পিলারগুলো সংস্কারকরণ এবং লাল হলুদ ও সাদা রঙের ছোঁয়ায় রাঙিয়ে তোলা হয়েছে। যার ফলে বিলের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিলের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা রাস্তার দুই ধারে দর্শনার্থীদের বসার জন্য দৃষ্টিনন্দন বিশ্রামাগার নির্মাণ এবং প্রবেশ মুখে কনক্রিটের উপর ইসপাত খচিত ‘জবই বিল’ লেখা দৃষ্টিনন্দন ফলক স্থাপনের মধ্যে দিয়ে বিল এলাকা সুসজ্জিত করা হয়েছে। যাতে করে দর্শনার্থীরা বিল পাড়ে বসে থেকে বিলের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে এবং বিল পাড়ে বসে বিশ্রাম নিতে পারে।
এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে বিল এলাকায় বসানো হয়েছে বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র। জবই বিলে ইউএনওর নান্দনিক উদ্যোগগুলো বিভিন্ন মহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও জবই বিলের নান্দনিক উদ্যোগুলো নিয়ে প্রশংসা হতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন নামের ফেসবুকে ঘুরছে জবই বিলের নতুন নতুন ছবি।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে ‘জবই বিল’ ফলকের সামনে বা পাশে দাঁড়িয়ে আবার কেউ কেউ বিল পাড়ে বিশ্রামাগারে বসে বা দাঁড়িয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে শেয়ার দিচ্ছেন। সেখানে স্থানীয় সাংসদ ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার কে এবং উপজেলা প্রশাসন (ইউএনও) কে ধন্যবাদ জানিয়ে বিভিন্ন ক্যাপশন লিখে পোস্ট দিচ্ছেন অনেকেই।
জানা যায়, ২০২১ সালের এপ্রিলে সাপাহারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পদে যোগদান করেন মো. আব্দুল্যাহ আল মামুন। তখন করোনা মহামারির প্রকোপ চলমান। সীমান্তবর্তী উপজেলা হিসাবে সাপাহারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ছিল চ্যালেঞ্জিং। ইউএনওর নেতৃত্বে তার টিম করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সাপাহার উপজেলার শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখা সহ মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছেন। তার নান্দনিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে নতুনরূপে জবই বিল কে সাজানো। তার নান্দনিক উদ্যোগের ফলে আরও আকর্ষণীয় রূপ ধারণ করেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেঘেরা ঐতিহ্যের প্রতীক জবই বিলটি।
এছাড়াও তাৎক্ষণিক মানবিক আবেদনে তিনি সাড়া দিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশংসিত হয়েছেন। চাকরি সূত্রে অনেকে এসেছেন এ উপজেলায়, দায়িত্ব পালন শেষে আবার চলে গেছেন। হাতেগোনা কিছুসংখ্যক উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজও সাপাহারবাসীর হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছেন। তারা ব্যতিক্রম ও নান্দনিক উদ্যোগের মাধ্যমে সাপাহারের সুনাম উজ্জ্বল করেছেন। এমনই একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর রুটিন কাজের পাশাপাশি সাপাহারকে অনন্য উচ্চতায় নিতে নান্দনিক কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছেন।
এর মধ্যে অন্যতম উপজেলার জবই বিল কে দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলার মত নান্দনিক উদ্যোগগুলো প্রশংসিত হয়েছে। করোনাকালীন সেবা ও তাৎক্ষণিক বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নজির সব শ্রেণির মানুষের কাছে সুনাম কুড়িয়েছেন। সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত গতিশীল উপজেলা প্রশাসন বাস্তবায়নে জিরো টলারেন্স নীতি পালন করেছেন তিনি।
জবই বিল জীববৈচিত্র্য ও সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ বলেন, দেশি ও পরিযায়ী পাখিদের নিরাপত্তা বিধানে বন বিভাগের ভূতকুড়ি বিলকে সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। ইতোমধ্যে আমরা বন বিভাগ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হাতে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা হলে পাখির অভাধ বিচরণ, বংশবিস্তার, মা মাছ রক্ষা ও গবেষণা কাজ করা যাবে এবং পর্যটকদের আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
সাপাহার মডেল প্রেসক্লাব সভাপতি সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান ইউএনও দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৃহীত তার নন্দিত উদ্যোগগুলো সমাদৃত হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী জবই বিল কে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সেই লক্ষে কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করণ অন্যতম।
সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, জবই বিল কেন্দ্রিক পর্যটন আর্কষন বৃদ্ধির লক্ষে বিভিন্ন স্থাপনা ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে। এবং কিছু স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিলে পাখির অভয়ারণ্য তৈরির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে ঐতিহ্যবাহী জবই বিলের সুস্বাদু মাছ, পরিযায়ী পাখি এবং পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে সারা দেশে পরিচিতি পাবে এটাই আমার প্রত্যাশা।