জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের জন্মদিন আজ

আপডেট: মে ২৫, ২০২৪, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। তিনি বিদ্রোহী ও মানবতার কবি নামেও সমধিক পরিচিত।
কাজী নজরুল ইসলাম ভারতের পশ্চিমবাংলার বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া থানার অন্তর্গত চুরুলিয়া গ্রামে ১৩০৬ সালের (২৪ মে ১৮৯৯ খ্রি.) ১১ জ্যৈষ্ঠ মঙ্গলবার দুপুর বেলা জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ছিলেন ২০ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও সঙ্গীতজ্ঞ এবং দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশা-পাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ-ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য এবং তিনি ছিলেন বাঙালি মনীষার এক-তুঙ্গীয় নিদর্শন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ- ২ বাংলাতেই তার কবিতা ও গান সমানভাবে-সমাদৃত। তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টি-ভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী-কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়। তার-কবিতার মুল বিষয়-বস্তু ছিলো মানুষ’র ওপর মানুষের-অত্যাচার এবং সামাজিক-অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার-প্রতিবাদ।

বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তার কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তার প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তার প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে কাজেই “বিদ্রোহী কবি”, তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বছর উদযাপিত হয়ে থাকে।

নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াযজিন হিসেবেও কাজ করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন।

প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মতো কবিতা; ধূমকেতুর মতো সাময়িকী। জেলে বন্দি হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী, এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামা সংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩ তিন গান রচনা ও অধিকাংশে সুরারোপ করেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা “নজরুল গীতি” নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়।

মধ্যবয়সে তিনি পিক্স ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত ইচ্ছায় ১৯৭২ সালে তাঁকে সপরিবারে ঢাকায় আনা হয়। এসময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version