নিজস্ব প্রতিবেদক:৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের সাথে মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, ইভিএম দিয়ে সব নির্বাচন করতে পারলে আমরা খুশি হতাম। তবে আমাদের ইভিএম এর এত সক্ষমতা নেই। এখন যে ভালো ইভিএমগুলো আছে সেগুলো দিয়ে আমরা ইলেকশন গ্রহণ কাজে লাগাতে চেয়েছি।
সেক্ষেত্রে প্রতি বিভাগের ক্ষেত্রে দুটি করে জেলায় ইভিএম ইলেকশন পাচ্ছি। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে আমরা সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় ইভিএমএ নির্বাচন করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেখানে ইভিএমে নির্বাচন হবে সেখানে সব পর্যায়ে ইভিএম হবে। আর যেগুলো ব্যালট হবে সেখানে সব পর্যায়ে ব্যালাটে হবে।
মঙ্গলবার (২ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন-২০২৪ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনে যে স্ট্যান্ডার্ড তৈরি হয়েছে তার নিচে আমরা আর নামতে দিতে চাই না, বরং আরো উপরে উঠতে চাই। আসছে উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা আসবেন। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিতভাবে প্রয়োগ করবেন এবং বাইরে গিয়ে যাতে তারা বলতে পারেন, আমার ভোটটা আমি দিয়েছি। এই ভোটের অধিকার নিশ্চিত করাটাই নির্বাচন কমিশনার দায়িত্ব। সেই পরিবেশ তৈরি করাও নির্বাচন কমিশনেরই দায়িত্ব।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারের উপজেলা নির্বাচনও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত করাই নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য বলে মন্তব্য করে ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন, আমাদের জাতীয় ইলেকশন একটা পর্যায়ে চলে গেছে। মানে উপজেলায় ভোটারের ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যে ক্ষেত্রটা সেটা চলে গেছে। আমরা চাই আমাদের জাতীয় ইলেকশনে যে একটা পর্যায়ে তৈরি হয়েছে, একটা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি হয়েছে। আমরা সেটা থেকে কোন ক্রমেই নিচে নামতে চাই না। সেটা থেকে আরও উপরে উঠে যেতে চাই। আমাদের দেশে যাতে নির্বাচনে একটা পরিবেশ সব সময় তৈরি হয় এবং বিরাজ করে সেটা আমরা কমিশন চাই।
তিনি আরো বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনে আসার পরে দেশে সব ভোট উপজেলায় অবাধ সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেই। যাতে ভোটাররা তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারেন। ইচ্ছামত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এ কথা আমরা সবাই বলেছি। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নির্বাচন কমিশনের পক্ষে একাই সম্ভব নয়। জেলায় জেলায় যে সকল নির্বাচন কমিশনের অফিস আছে তাদের কর্মকর্তা নিয়েও এটা করা সম্ভব না। কাজ করতে হবে সকল বাহিনীকে নিয়ে।
সকল বাহিনীকে একসাথে একধারায় নিয়ে যাওয়াটাই এখন নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ। উপজেলায় যাতে কাজগুলো তারা সুষ্ঠুভাবে করতে পারেন। সমন্বয় ছাড়া কখনো এরকম মহাযোগ্য করা সম্ভব নয়। আমরা জানি জাতীয় ইলেকশন সারা বাংলাদেশে একসাথে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন একসাথে না হলেও ধাপে ধাপে হবে কিন্তু সেটিও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নির্বাচন দেশের ও দেশ গঠনের জন্য একটি অসম্ভব জরুরি বিষয়’।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার বলেন, জামানতের ক্ষেত্রেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর জন্য জামানত দিতে হবে এক লাখ টাকা। অনেকেরই প্রশ্ন এটা বৃদ্ধি কেন করা হলো। এটা অনেক আগের মত ২০-৩০ বছর আগের। ২০-৩০ বছর আগে যেটা প্রচলন ছিল সেটা এখনো থাকবে এটা বাস্তবসম্মত না। আমরা কিন্তু এই বাস্তবতা মেনে এই জামানত বৃদ্ধি করেছি। আমরা আর একটু বিষয় সংশোধন করেছি। আগে একজন স্বতন্ত্রপ্রার্থীর আড়াইশো জন ভোটারের স্বাক্ষর লাগতো। আমরা এটা সংশোধন করেছি। কারণ এটা সাংবিধান সাংঘর্ষিক। একটা ভোটার আগে থেকেই একজনের পক্ষে হয়ে যাবে, মানুষ জেনে যাবে তিনি তার পক্ষের লোক। এটা ভোটারের গোপনীয়তা থাকে না তাই আমরা এটা তুলে ফেলেছি।
রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন-কর্মকর্তার কার্যালয় আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিভাগীয়-কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ফয়সাল মাহমুদ, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হেমায়েতুল ইসলাম ও রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিভাগের সকল জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।