শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ, ২০২৪। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে মাছ চাষের সমৃদ্ধি নজরকাড়া। মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও স্বীকৃত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার রিপোর্ট ২০২২ অনুযায়ী বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ তৃতীয়। বদ্ধজলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে ৫ম; সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টসিয়া উৎপাদনে ৮ম এমং ফিনফিস উৎপাদনে ১১তম স্থানে রয়েছে। ইলিশ আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১ম এবং তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে ৪র্থ ও এশিয়ায় ৩য়। সম্প্রতি বাংলাদেশ চিনকে টপকিয়ে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয় হয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের ৫০টিরও অধিক দেশে বাংলাদেশ মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে। বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্ত্বেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭৭ হাজার ৪০৮ টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার ৪৯৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ।
২০৪১ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ লাখ মেট্রিক টন অর্জন করতে খামার যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় মৎস্যচাষ প্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রতিটি পর্যায়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। নদী-নালা, খাল-বিলে পোনা অবমুক্তকরণ, মৎস্য হ্যাচারি আধুনিকায়ন, খাঁচায় মাছ চাষ প্রযুক্তি ও অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-দিঘি, ডোবা-নালা, হাওর-বাঁওড়। মানুষের খাদ্য তালিকায় মাছ একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। আমরা যে পরিমাণ প্রাণিজ আমিষ গ্রহণ করি তার শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ আসে মাছ থেকে। এ ছাড়াও জাতীয় আয়ের শতকরা চার ভাগ ও রফতানি আয়ের প্রায় ১১ ভাগ আসে মৎস্য সম্পদ থেকে। কেবল খাদ্য হিসেবে নয়, আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং বেকার সমস্যা সমাধানে মৎস্য সম্পদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবুও দেশের মাছের উৎপাদনের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাছের চাহিদা বেড়েই চলছে।
আনন্দের কথা যে, বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পুনরুদ্ধারে কাজ করছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর গবেষকরা। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক গবেষণায় ২৩ প্রজাতির মাছের পোণা উৎপাদন এবং চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবনে সাফল্য পেয়েছেন গবেষকরা। দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষায় আরো উদ্যোগি ভূমিকা দরকার। যেসব কারণে দেশি মাছের প্রাকৃতিক পৃজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তার নিরসন হওয়া উচিত। মা মাছের নিধন পুরোদমে চলছে। এর বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া বাঞ্ছনীয়।
দেশের মৎস্য সম্পদের সমৃদ্ধি দেশের মানুষকে উৎসাহিত করছে। মৎস্যখাতের সমৃদ্ধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে এটাই প্রত্যাশিত।