জাহানারা জামান আর নেই

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৭, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক



মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাতীয় নেতা শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামানের স্ত্রী জাহানারা জামান আর নেই (ইন্নালিল্লাহে…রাজেউন)। গত রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানী ঢাকার গুলশানে তিনি নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে ও চার মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার বড় ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রও তিনি।
এদিকে জাহানারা জামানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে নগরীতে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে নেমে আসে শোকের ছায়া। মৃত্যুর খবর শোনার পরই আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে খোঁজ নিতে শুরু করেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। তারা জানার চেষ্টা করেন জাহানারা জামান কতদিন থেকে অসুস্থ ছিলেন, তিনি কোথায় মৃত্যুবরণ করেছেন, কোথায় জানাজা হবে, দাফন কখন। এসব বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতুহল ছিলো দিনভর।
লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক মীর ইশতিয়াক লিমন জানান, জাহানারা জামান দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। গত রোববার রাতে অসুস্থ হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি জানান, জাহানারা জামানের ছোট ছেলে এইচএম এহশানুজ্জামান স্বপন দেশের বাইরে রয়েছেন। তবে এরই মধ্যে তিনি জিম্বাবুয়ে থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম বুলবুল জানান, জাহানারা জামানের মরদেহ রাজশাহীতে আনার জন্য রোববার রাতেই তার বড় ছেলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন  পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
তিনি জানান, সোমবার বাদ আসর বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর গুলশান আজাদ মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে মরদেহ রাজশাহীতে নেয়া হবে। বাদ জোহর রাজশাহীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে মরহুমার দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর নগরীর কাদিরগঞ্জ পারিবারিক গোরস্থানে শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামানের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে বলে জানান তিনি।
জাহানারা জামানের স্বামী রাজশাহীর কৃতী সন্তান এএইচএম কামারুজ্জামান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে অপর জাতীয় তিন নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সঙ্গে নিহত হন।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে বন্দি থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগরে গঠিত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামান মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ তাদের স্মরণ করে চার জাতীয় নেতা হিসেবে।
জাহানারা জামান বগুড়া জেলার দুপচাচিয়া উপজেলার চামরুল গ্রামের প্রখ্যাত জোতদার আশরাফ উদ্দিন তালুদকারের জ্যেষ্ট কন্যা। ১৯৫১ সালে এএইচএম কামারুজ্জামানের সাথে তিনি বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। এএইচএম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান ছয় সন্তানের জনক জননী। দুই ছেলে ও চার মেয়ে। বড় ছেলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ( জন্ম ১৯৫৯) রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক সফল মেয়র। তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য। ছোট ছেলে এহসানুজ্জামান স্বপন (১৯৬১) বাটা কোম্পানিতে ( জিম্বাবুয়ে) কর্মরত আছেন। চার মেয়ে যথাক্রমে ফেরদৌস মমতাজ পলি (জন্ম ১৯৫৩), দিলারা জুম্মা রিয়া (জন্ম ১৯৫৫), রওশন আক্তার রুমী (জন্ম ১৯৫৭) এবং কবিতা সুলতানা চুমকি (জন্ম ১৯৬৪)।
১৯৭০ সালে রাজশাহী থেকে সাপ্তাহিক ‘সোনার দেশ’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটির শিরোনামের নিচে লেখা হতো ‘গণতান্ত্রিক জীবনবোধের মূল্যায়ণ সাধনায় নিয়োজিত প্রগতিশলি সাপ্তাহিক মূখপত্র’। এই পত্রিকাটির প্রকাশক ছিলেন জাহানারা জামান। পত্রিকাটি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকার ডিক্লারেশন বাতিল করে এবং পাক আর্মিরা সোনার দেশের অফিস পুড়িয়ে দেয়।
জাহানারা জামানের নামে বগুড়ায় ‘জাহানারা কামারুজ্জামান কলেজ’ রয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ