শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক:
ঐতিহ্যবাহী ব্রোঞ্জের গহনা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি জেলার দ্বিতীয় পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি অর্জন করল।
শুক্রবার (১২ জুলাই) গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গহনা নিবন্ধনের জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩ এর ধারা ১২ অনুসারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর কর্তৃক জার্নাল প্রকাশ করা হয়। এই স্বীকৃতি জেলার মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গহনার ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
এছাড়া ব্রোঞ্জের গহনা তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত কারিগরদের কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ব্রোঞ্জ শিল্পভিত্তিক অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। এলাকার আর্থ সামজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
এ অর্জনে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গহনার জিআই ভুক্তিকরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত জেলা প্রশাসন ও মুকসুদপুর উপজেলা প্রশাসনের সব কর্মকর্তা এবং ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের (ঊউঈ) কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
চলতি বছরের ১২ মার্চ জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গহনার জিআই পণ্যের স্বীকৃতি চেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোতে আবেদন করা হয়। ব্রোঞ্জ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও জলিরপাড় ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সুভাষ বৈদ্য বলেন, আমাদের ওয়ার্ডেই ব্রোঞ্জের গহনা তৈরির পল্লী প্রায় ১০০ বছর আগে গড়ে উঠে। পরে এটি সারা জলিরপাড় ইউনিয়নের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ পল্লীকে কেন্দ্র করে এখানে ব্রোঞ্জ মার্কেট প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গহনা সুখ্যাতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
দেশের গন্ডি পেরিয়ে এটি বিদেশের বাজারে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু এ শিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। তাই সম্প্রতিকালে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ব্রোঞ্জের গহনা আমাদের বাজারের প্রায় ৫০ ভাগ দখল করে নিয়েছে। তারপরও জলিরপাড়ের ব্রোঞ্জের গহনা তৈরি শিল্প স্বগৌরবে শতাধিক পরিবার টিকিয়ে রেখেছে। জলিরপাড় ব্রোঞ্জ মার্কেটে এখনও ৪৫টি দোকান রয়েছে। এসব দোকানে এখনও ব্রোঞ্জের গহনা বিক্রি করা হয়।
ব্রোঞ্জ গহনা প্রস্তুত কারক জলিরপাড় গ্রামের জগদীশ শীল বলেন, ব্রোঞ্জ গহনা তৈরির তামা, দস্তা ও পিতলের দাম বেড়েছে। সহজ প্রাপ্যতা কমেছে। ভারতসহ অন্যান্য দেশের ব্রোঞ্জ গহনার রং খুব চকচকা। আমাদের গহনার রং তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। দামি সুদৃশ্য, মনোহর ও শৌখিন গহনার বাজার ভারত ও চীনের দখলে চলে গেছে। তাই কানের দুল, হাতের বয়লাসহ যে-সব গহনার চাহিদা রয়েছে এমন সব গহনা আমরা তৈরি করি।
সরকার এ শিল্পকে আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও সব ধরনের সহযোগিতা করলে আমরা ব্রোঞ্জ গহনার শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারব। এখানও আমাদের মান সম্পন্ন কারিগর রয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সমন্বয়ে তাদের কাজে লাগিয়ে আমরাও দামি গহনা তৈরি করতে পারি। তাহলেই শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীরা অধিক উপার্জন করতে পারবেন। এ শিল্প দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ ও গতিশীল করবে।
ই-কমার্স ডেভলপমেন্ট সেন্টারের সভাপতি কাকলী তালুকদার বলেন, ব্রোঞ্জের পণ্য হিসেবে বাংলাদেশ এটাই প্রথম পণ্য যা বাণিজ্যিকরণ করা হচ্ছে। এই পণ্যটি জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় একদিকে যেমন বিলুপ্ত প্রায় কুটির শিল্পটি আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে। দেশবিদেশে এর সুনাম ও সুখ্যাতি ছড়ানো পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গোপালগঞ্জের রসগোল্লা জেলার প্রথম পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পায়।
তথ্যসূত্র: বাংলানিউজ