শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মাদক ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসিত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আর এ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর খড়বোনা এলাকায় মাদক ব্যবসা পরিত্যাগকারীদের পুনর্বাসন অনুষ্ঠানে রাজারহাতা এলাকার ষষ্ঠী দাস (৫০) বলেন, ‘মাদকের ব্যবসা করতাম। আত্মীয়-স্বজন কেউ বাড়িতে আসতো না। সবাই ঘৃণা করতো। পুলিশ সৎ পথে আয়ের সুযোগ করে দেয়ায় মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিলাম। জীবনে আর মাদক ছুঁয়েও দেখবো না।’
অনুষ্ঠানে ছিলো বড় মঞ্চের সামনে কানায় কানায় ঠাসা মানুষ। মঞ্চে বসে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ষষ্ঠী দাসের মতো একপর্যায়ে মধ্যবয়সি শেফালি বেগম মঞ্চে উঠে এলেন। মাইকের সামনে গিয়ে ঘোষণা দিলেন, ‘আমি ভুল করেছি। আমি আর মাদক বেচতে চাই না। আমি নিজে বাঁচতে চাই, সমাজকে বাঁচাতে চাই।’
নগরীর খড়বোনা এলাকায় মাদক ব্যবসা পরিত্যাগকারীদের পুনর্বাসন অনুষ্ঠানে শেফালি বেগম এমন ঘোষণা দেন। রাজশাহীর মহানগর পুলিশের (আরএমপি) বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ষষ্ঠী দাস ও শেফালি বেগমসহ মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেয়া মোট ২০ জন নারী-পুরুষকে পুনর্বাসিত করা হয়। ফলে অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে যাত্রা শুরু করলেন তারা।
সম্প্রতি পুলিশের পক্ষ থেকে মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে ওই এলাকায় একটি সচেতনতামূলক সভা করা হয়। ওই দিন এলাকার বেশকিছু মাদক ব্যবসায়ী ব্যবসা ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তারা পুলিশের কাছে নিজেদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছিলেন। এরপরই এই পুনর্বাসন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে চারজন নারীকে দেয়া হয় একটি করে সেলাই মেশিন। আর এক ব্যক্তিকে দেয়া হয় একটি ভ্যান। এ ছাড়া বাকি ১৫ নারী-পুরুষকে দেয়া হয় পাঁচ হাজার করে নগদ টাকা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম তাদের হাতে এসব তুলে দেন।
অন্ধকার ছেড়ে আলোর পথে যাত্রা শুরু করা এসব মানুষগুলোর মধ্যে ১৪ জনের নামেই মাদকের মামলা আছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে আরএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, মামলা তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। তবে তারা যদি মাদক থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে সক্ষম হন, তবে আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁশুলিকে বিষয়টি জানানো হবে। আদালত তখন তাদের বিষয়টি বিবেচনা করতেও পারেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষকে ভালো হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি। সবাই মাদক ব্যবসা ছেড়ে ভালো হয়ে গেলে কোনো কথা নেই। কিন্তু যদি মাদক ব্যবসা না ছাড়েন, অভিযান জোরদার হবে। শিক্ষানগরীতে কাউকে মাদক ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। কোনো মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তিনি যেন স্বল্প সময়ের মধ্যে জেল থেকে বের হতে না পারেন, সে ব্যবস্থায় করা হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বারিন্দ মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামসুদ্দিন। অনুষ্ঠানে শেফালি বেগম তার ছেলের জন্য পুলিশের কাছে যে কোনো ধরনের একটি চাকরির আবদার করলে মো. শামসুদ্দিন তার ছেলেকে একটি চাকরি দেয়ার আশ্বাস দেন। এ ছাড়া আরও এক মাদক ব্যবসা পরিত্যাগকারীর এসএসসি পাস সন্তানকে এসএ টেলিভিশনে একটি চাকরি দেয়ার ঘোষণা দেন চ্যানেলটির রাজশাহী ব্যুরো অফিসের ইনচার্জ জিয়াউল গণি সেলিম।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, আরএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) একেএম নাহিদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন, বোয়ালিয়া থানার ওসি শাহাদাত হোসেন খান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম-উল-আযীম, আরএমপির অতিরিক্ত কমিশনার সরদার তমিজ উদ্দিন আহমেদ, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি, পরিচালক মাসুদুর রহমান রিংকু, রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান প্রমূখ।