নিজস্ব প্রতিবেদক:
শিক্ষার্থীদের কাছে পণ্য বিক্রি করে জীবিকা চলে বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরাই মূলত এই বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে থাকেন। দীর্ঘদিন পড়াশোনার সুবাদে শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যবসায়ীদের সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু সম্প্রতি তুচ্ছ ঘটনায় সেই সম্পর্কে ভাটা পড়েছে, রূপ নেয় সংঘর্ষে।
সরেজমিনে শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় বিনোদপুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আগের মতো শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই বাজারে। অনেকটাই ফাঁকা ফাঁকা। বেশিরভাগ দোকানপাট খোলা রয়েছে। তবে এখনও স্বাভাবিক হয়নি বিনোদপুর বাজার।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিনোদপুর বাজার পুরোটাই রাবির শিক্ষার্থীনির্ভর। শুধু বিনোদপুর বাজার নয়, রাবির স্টেশন বাজার ও কাজলা বাজারও একই অবস্থা। এই তিনটি বাজারের মূল ক্রেতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ব্যবসায়ীরা বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া ব্যবসায়ীদের কাজ নয়। অন্যেও কৃতকর্মেে ফল তাদেরকে বইতে হয়। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের সাথে তাদেরও সম্পর্ক ভালো ছিল। তবে ১১ মার্চে ঘটে যাওয়া ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বিনোদপুর বাজারের বিকল্প হিসেবে স্টেশন বাজারে কেনাকাটা করছেন।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হল ও আশেপাশের মেসগুলোতে থাকা বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বিনোদপুরে বাজারে কেনাকাটা করে থাকেন। তবে সংঘর্ষের দিন থেকে তারা বিনোদপুরে বাজারে যাচ্ছেন না। অনেকেই বিনোদপুর বাজারকে বয়কটের ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তারা কেনাকাটার জন্য বেছে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের স্টেশন বাজার। অনেক শিক্ষার্থী আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কাঁচাবাজার বসানোর চিন্তাভাবনা করছেন। বিনোদপুর বাজারে দুই শতাধিক দোকান আছে। এর মধ্যে বাজারের অলিগলিতে এখনো অনেক দোকান বন্ধ। খোলা দোকানগুলোর মধ্যে অধিকাংশই সবজি, মাছ ও মুরগির। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর বাজারে না যাওয়ায় বেচাকেনা নেই দোকানিদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিনোদপুর বাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, রক্রতা হিসেবে ব্যবসায় দেও প্রথম লক্ষ্য শিক্ষার্থীরা। বিনোদপুর মূলত চলে শিক্ষার্থীদের জন্যই। সেই শিক্ষার্থীদের সাথে খারপ ব্যবহারের প্রশ্নই উঠেনা। তার পরেও কিভাবে এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো আমরা জানিনা।
বিনোদপুর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী শাহিন বলেন, দুই দিন থেকে দোকান খুলছি। তবে ক্রেতা কম। গত শুক্রবারের তুলনায় শনিবার একটু ক্রেতা বেড়েছে। তবে আগের মতো ক্রেতা আসছে না। আশা করছি আগামিতে আরও ক্রেতা বাড়বে। মুরগি ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের সাথে কখনও শিক্ষার্থীদের ঝামেলা হয় না। শিক্ষার্থীদের নিয়েই আমাদের ব্যবসা চলে। আমরা কেনো তাদের সাথে খারাপ আচরণ করবো?
গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষার্থী সোহানুর রহমান বলেন, সংঘর্ষের দিন থেকে আমরা বিনোদপুরে বাজারে যাচ্ছি না। আমরা কেনাকাটার জন্য বেছে নিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের স্টেশন বাজার। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কাঁচাবাজার বসানোর চিন্তাভাবনা করছেন। আমাদের ইচ্ছে আছে তাদের থেকে বাজার করার।
অপর শিক্ষার্থী মারুফ হাসান বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আমাদের সাথে যে ঝামেলা করেছে তারপরে তাদের থেকে জিনিসপত্র কেনার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের মধ্যে সকল ধরনের পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করছে। আমরা এখন থেকে সেখান থেকেই কেনাকাটা করবো। আমরা বিনোদপুর বাজারকে বয়কট করেছি।
বিনোদপুর বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন বলেন, আমাদের সাথে শিক্ষার্থীদের আগে থেকে কোন রেশারেশি ছিল না। আমরা তো ছাত্রদের নিয়ে ব্যবসা করি। শুধু দোকানপাট নয়, অনেক বাড়ি ঘরও করা হয় তাদের জন্য। তাদের ছাত্রবাস হিসেবে ভাড়াও দেওয়া হয়। আমাদের এসব এলাকায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে কারবার। শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা উগ্র আচরণ করি না বললেই চলে। এটাতো আমাদের ব্যবসয়ীদের কোন সমস্যাই না। তবে ঘটনা কিভাবে ঘটে গেল আমরাও বলতে পারবো না।
বিনোদপুর বাজার সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করছি। তাদের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমেই এটা সমাধান করতে হবে। শিক্ষার্থীরাই এ বাজারের প্রাণ। তাদের সঙ্গে আমাদের আগের সম্পর্ক ফিরে আসুক এটাই প্রত্যাশা।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল আলম বলেন, বিনোদপুর বাজার স্বাভাবিক হয়েছে। আর সংঘর্ষের ঘটনায় হওয়া মামলায় নতুন করে কেউ আটক বা গ্রেফতার নেই।
প্রসঙ্গত, গত ১১ মার্চ রাতে রাবি সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে তুচ্ছ ঘটনা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। সংঘর্ষের সময় বিনোদপুর বাজারের ৬০টি দোকান ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এমন ঘটনার এক সপ্তা পরেও তেমন স্বাভাবিক হয়নি বিনোদপুর বাজার। তবে তুলনামূলক কম শিক্ষার্থী আসছে বিনোদপুর বাজারে। এতে করে বিক্রিতে ভাটা পড়েছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি।