রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৯ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
দেশের প্রাচীনতম জুবিলী ব্যাংক লিমিটেডে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল (অব.) ফারুক ও কর্ণেল আব্দুর রশীদের (অব.) শেয়ার রয়েছে।
এরা কী ভাবে ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডার হলেন তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকটির অনিয়ম, দুর্নীতি এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের নামে ব্যাংকের শেয়ার থাকার অভিযোগ তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
এছাড়াও অপর খুনি মেজর (অব) বজলুল হুদারও শেয়ার ছিল এই ব্যাংকে। তিনি ১৯৯০ ও ১৯৯১ দুই বছর ব্যাংকটির পরিচালকও ছিলেন। ব্যাংকের ১৯৯২ সালের বিবরণীতে তাঁকে আর পরিচালক উল্লেখ করা হয়নি। তাঁর শেয়ারের কী হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড ১৯১৩ সালে কুষ্টিয়ার খোকসায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি দেশের প্রাচীনতম ব্যাংক। এ ব্যাংকের অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে দেশের কোথাও এর কোন শাখা নেই। ব্যাংকটির একটি ওয়েবসাইট থাকলেও সেখানে তাদের কর্মকা-ের বিস্তারিত কিছু উল্লেখ নেই। এর আগে ২০১২ সালে একবার অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে ব্যাংকটি দখলের চেষ্টাও হয়েছিল।
১৯৯১ সালের ২৩ জানুয়ারি জুবিলী ব্যাংকের দাখিল করা ১৯৯০ সালের বার্ষিক মূলধন বিবরণী অনুযায়ী, এর অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা, যা ২৫ টাকার মোট ৪০ লাখ শেয়ারে বিভক্ত। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি কর্নেল (অব.) ফারুক ও কর্নেল (অব.) আব্দুর রশিদ পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৯২ সালের বার্ষিক মূলধন বিবরণী অনুযায়ী, ১০ কোটি টাকা মূলধনের ৪০ লাখ শেয়ারের (প্রতিটি ২৫ টাকার) মালিকানা ছিল ১৬৫ জনের। ১৯৯৫ সালের হিসাবে দেখানো হয়েছে, অনুমোদিত মূলধন আট কোটি টাকা, যা ৩২ লাখ শেয়ারে (প্রতিটি ২৫ টাকার) বিভক্ত। শেয়ারধারী দেখানো হয় ১৬৯ জন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের বিবরণীতে শেয়ারের সংখ্যা অপরিবর্তিত। মালিকানা ১৮১ জনের।
সূত্র জানায়, জুবিলী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি কর্নেল (অব.) ফারুক ও কর্নেল (অব.) আব্দুর রশিদের নামে ৮৫ হাজার শেয়ার রয়েছে। এগুলো বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ব্যাংকটিতে বিভিন্ন সময়ে কাদের মালিকানা ছিল, পরিচালনা পর্ষদে কারা ছিলেন, খুনিদের শেয়ারের কী অবস্থা- এসব জানানোর জন্য সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) ১৯৯০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জুবিলী ব্যাংকের বার্ষিক মূলধন বিবরণী যাচাই করে। তারা জেনেছে, ব্যাংকটিতে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি মেজর (অব.) বজলুল হুদারও শেয়ার রয়েছে।
সূত্র জানায়, আরজেএসসি’র যাচাই প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালের বার্ষিক মূলধনের বিপরীতে মেজর (অব.) বজলুল হুদাকে জুবিলী ব্যাংকের পরিচালক দেখানো হয়। কিন্তু সে সময় তার কী পরিমাণ শেয়ার ছিল তার উল্লেখ নেই। কর্নেল (অব.) ফারুক ও কর্নেল (অব.) আব্দুর রশিদের নামে কী পরিমাণ শেয়ার ছিল, তার তথ্যও ব্যাংক থেকে আরজেএসসি-কে জানানো হয়নি। ১৯৯২ সালের বিবরণীতে পরিচালকের তালিকায় বজলুল হুদার নাম নেই। এরপর পরিচালকের তালিকায় ঘন ঘন পরিবর্তন এসেছে।
কোম্পানিটি ১৯১৩ সালের ১৫ এপ্রিল ‘খোকসা জানিপুর জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’ নামে আরজেএসসিতে নিবন্ধিত হয়। নিবন্ধন নম্বর : সি-২৩৭৩। ১৯৮৭ সালের ২৬ জানুয়ারি নাম পরিবর্তন করে ‘জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’ করা হয়। নিবন্ধনের পর থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এটির হিসাব আরজেএসসির রেকর্ডপত্রে নেই। ১৯৯০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত হিসাব আরজেএসসিতে দাখিল করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে সাজা ঘোষণার পাশাপাশি খুনিদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। এরই প্রেক্ষিতে জুবিলী ব্যাংকে থাকা দুই খুনির শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার জন্য গত ২৯ জুন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এটি পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত না থাকায় বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে অপারগতা জানিয়ে গত ২৬ জুলাই মন্ত্রণালয়কে ফিরতি চিঠি দেয় বিএসইসি। জুবিলী ব্যাংক দেশের কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয়। ফলে ওই সব শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এরপর ব্যাংকটিতে থাকা বঙ্গবন্ধুর দুই খুনির শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়। যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধককেও (আরজেএসসি) এ সংক্রান্ত নির্দেশ দেয়া হয়।- রাইজিংবিডি