শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
এবছর অনুষ্ঠিত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড রাজশাহীতে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ৩২ হাজার ৩৮৯ জন। প্রতিদিন গড়ে অনুপস্থিত ছিল চার হাজার ৩০০ জন পরীক্ষার্থী। সে হিসেবে অনুপস্থিতের হার ছিল দুই শতাংশ। এতে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তারা বলছেন, সরকার যেখানে সর্বস্তরের মানুষের দোরগড়ায় শিক্ষা পৌঁছে দিতে কাজ করছেন, সেখানে জেএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের এই অনুপস্থিতির হার শিক্ষার সার্বজনিনতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, প্রধানত অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতার অভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই অনুপস্থিতি দেখা গেছে। এছাড়া বাল্যবিবাহ ও দরিদ্রতার কারণেও শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত ছিলো। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে জেএসসি পরীক্ষা নিয়েও দোটানা কাজ করেছে। জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে কি হবে নাÑএই নিয়ে দোটানায় ছিল পরীক্ষার্থীরা।
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্রে অনুপস্থিত ছিল ৪ হাজার ৮৩৮ জন, বাংলা ২য় পত্রে ৪ হাজার ৮৯৩, ইংরেজি ১ম পত্রে ৪ হাজার ২৯৫, ইংরেজি ২য় পত্রে ৪ হাজার ৩৪১ জন, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ে ৪ হাজার ২৫৪ জন, গণিতে ৪ হাজার ৩৫২ জন, কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষায় ৪ হাজার ২৯৫ জন, বিজ্ঞানে ৪ হাজার ৩০০ জন, চারু ও কারুকলায় ৪ হাজার ৩২৮ জন, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে ৪ হাজার ২৭৫ জন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে ৪ হাজার ২৪৩ জন, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষায় ৪ হাজার ২৫২ জন এবং কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, আরবি, সংস্কৃত ও পালি বিষয়ে অনুপস্থিত ছিল ৪ হাজার ৩২৪ জন পরীক্ষার্থী। এদের মধ্যে রাজশাহী জেলায় অনুপস্থিতির হার ছিল গড়ে ৯০০। সবচেয়ে কম ছিল জয়পুরহাট জেলায়, গড়ে ৬০ জন।
এদের মধ্যে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাটোরের লালপুরে শুধুমাত্র বাল্যবিবাহের কারণে ৮৫ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে নি। এদের সবাই ছাত্রী। অধিকন্তু ৩৫ জন বিবাহিত ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে, যাদের পরীক্ষার পর আর পড়াশুনা চালানো সম্ভব হবে না বলে সংশয় প্রকাশ করেছে তারা। নাটোরের লালপুরেরর ইয়াকুব আলীর মেয়ে খাদিজা এবছর জেএসসির পরীক্ষার্থী ছিল। কিন্তু বিয়ের কারণে সে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে নি। খাদিজা জানায়, বাবা-মায়ে বিয়ে দিয়ে দিছে, এখন তো সংসার করতে হবে। পড়ালেখা করে কী করব?
নগরীর বুধপাড়া এলাকায় মাকে নিয়ে বসবাস করে ইদ্রিস। ইদ্রিস বলেন, বাবা দুই বছর হচ্ছে মারা গেছেন। এক বোন ছিল বিয়ে হয়ে গেছে। এখন মাকে নিয়ে থাকি। কাজ করে সংসার চালাতে হয়। স্থানীয় একটা স্কুলে এবছর এইট পর্যন্ত পড়েছি। পরীক্ষাও দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষা দেয়া হয় নি। সাহেববাজারে একটা কাপড়ের দোকানে কাজ করছি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড রাজশাহীর উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ফরিদ হাসান বলেন, সচেতনতার অভাবে অনেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে নি। এছাড়া দরিদ্র্যতা, বাল্যবিবাহের কারণে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির হার বেড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে কি না তা নিয়ে দোটানায় ছিল। অনেকে পরীক্ষা হবে না মনে করে প্রস্তুতি নেয় নি।