মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভাষার জন্য জীবন দিলেও রাজশাহী জেলার প্রাইমারি স্কুলগুলোতে নেই শহিদ মিনার। পাঠ্যসূচিতে ভাষা শহিদ ও শহিদ দিবসের তাৎপর্য থাকলেও স্কুলের শিক্ষার্থীদের নেই এ সম্পর্কিত জ্ঞান। শুধু একুশে ফেব্রুয়ারিতে স্কুল থেকে শহিদ দিবস পালন করা হয়। তা-ও গৎবাধা। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই শহিদ দিবসের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানে না।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, প্রাইমারি লেভেলেই শিশুদের শিক্ষার ভিত গড়ে ওঠে। এই বয়সে শিশুদের যা শেখানো হয় তা পরবর্তীতে তাদের প্রাত্যহিক জীবনে কাজে লাগে। এইজন্য এই বয়সে শিশুদের দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে হয়। জানানো হলে তাদের দেশের প্রতি মমত্ববোধ বাড়ে। আর যেসব শিশু দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে বড় হয় তারা কখনো জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক হাজার ৪৪টি। এইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিকের সঙ্গে সংযুক্ত আছে শুধু সেই সব প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার আছে। এছাড়া অবশিষ্ট বিদ্যালয়গুলোতে শহিদ মিনার নেই। এর মধ্যে নগরীতে বিদ্যমান ৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শুধু একটিতে রয়েছে শহিদ মিনার। তা-ও স্থানীয়রা ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন, বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা অফিসার মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, নগরীর হোসেনীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া কোনোটিতেই শহিদ মিনার নেই। হোসেনীগঞ্জের নির্মিত শহিদ মিনার স্থানীয়রা তৈরি করে দিয়েছেন।
নগরীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শহিদ মিনার তৈরির কোনো নির্দেশনা আছে কি না জিজ্ঞেস করলে সানাউল্লাহ বলেন, এ সম্পর্কিত কোনো নির্দেশনা নেই।
গত কয়েকদিন নগরীর বেশকিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তাদের বেশিরভাগেরই শহিদ মিনার, ভাষা শহিদ ও শহিদ দিবস সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই। শুধু একুশে ফেব্রুয়ারিতে যে ফুল দেয়া হয় সেটা শুধু জানে তারা। বেশকিছু শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে, একুশে ফেব্রুয়ারির শহিদ মিনার সম্পর্কে ধারণা নেই। শুধু জানে ওই দিন বিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস হয় না। এইজন্য তারা বিদ্যালয়েও যায় না।
নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদুন নবী কামরান বলেন, শহিদ দিবস উপলক্ষে স্কুলে পতাকা উত্তোলন করে পতাকা অর্ধনমিত করা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা এবং মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।’ প্রভাতফেরি হয়েছিল কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘স্কুলে শহিদ মিনার নেই। এছাড়া স্কুলের দুই পাশেই রাস্তা। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে বের হওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তাই স্কুলের ভেতরেই ছোট একটা র্যালি করেছিলাম। শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুল দেয়া হয়নি।’ শহিদ দিবসে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কেমন ছিল জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, স্কুলে মোট শিক্ষার্থী ৫৬৮ জন। এর মধ্যে তিন থেকে চারশ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।’ ছোট বাচ্চারা তো আসতে চায় না। এছাড়া খুব ভোরে প্রভাতফেরি হয়।
রাজশাহী জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূর আক্তার জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমার জানা মতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার তৈরির ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। তবে অফিস আওয়ার হলে জেনে নিয়ে বলতে পারতাম।
সাংস্কৃতিক কর্মী মনিরা রহমান মিঠি বলেন, স্কুলে শহিদ মিনার থাকাটা দরকার। কারণ শহিদ মিনার থাকলে দেখে শিশুরা কৌতূহলী হয়, শহিদ মিনার সম্পর্কে জানতে চায়। এর মাধ্যমে তাদের একটা প্রাথমিক শিক্ষাও হয়ে যায়। তবে শুধু শহিদ মিনার থাকলে চলবে না, তা সংরক্ষণ করেও রাখতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি বিদ্যালয়ে না থাকলেও পাশাপাশি তিন-চারটি বিদ্যালয় মিলে হলেও একটি শহিদ মিনার থাকা উচিত। এতে শিশুদের মধ্যে ভাষা শহিদ ও শহিদ দিবস সম্পর্কে ধারণা তৈরি হবে। কারণ এসব বিষয় বইয়ে পড়ে শেখার চেয়ে হাতেকলমে শিক্ষা হলে তা কাজে লাগে। আর ছোটবেলা থেকে এই শিক্ষাটা দেয়া গেলে তাদের মনে বিষয়টি গেঁথে যায়। তারা সঠিক ইতিহাস জানতে পারে।