মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা কমিটি গঠন নিয়ে রাজশাহীর বিএনপি নেতাদের মধ্যে অস্থিরতা চলছে। নেতৃত্ব পেতে রাজশাহীর অন্তত ১১ নেতা কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কেন্দ্রে গিয়ে তারা একে অপরের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কানভারি করছেন হাইকমান্ডের শীর্ষ নেতাদের। এ কারণে তাদের ওপর চরম ক্ষুব্ধ দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। পাশাপাশি পদ পেতে জেলার নেতাদের লড়াইয়ে বিধ্বস্ত বিএনপি। রাজশাহী বিভাগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এসব নাম প্রকাশের না শর্তে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তারা জানান, নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে রাজশাহী থেকে বিএনপির উপদেষ্টা সাবেক প্রতিমন্ত্রী কবির হোসেন, জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি নাদিম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল মনির, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রায়হানুল আলম রায়হান, মহানগর বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মার্শাল, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবু সাঈদ চাঁদ, দফতর সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, আবদুল গফুর, অ্যাডভোকেট এনামুল হক ও সৈয়দ মহসিন আলী চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, এসব নেতাদের কেউ কেউ কেন্দ্রে গ্রুপিং করে প্রত্যাশিত পদ পেতে চাইছেন। কেউ কেউ আবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে নিজের গুণগান গাইছেন। তবে তারা সবাই চেয়ারপারসনের কাছে একে অন্যের নামে অপপ্রচার করতেও দ্বিধাবোধ করছেন না। বিষয়টি নিয়ে বেগম জিয়া তাদের ওপর দারুণ ক্ষুব্ধ। এ কারণেই জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণায় দেরি হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েক দফা আলাদাভাবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব করা হলেও কারও ব্যাপারেই সম্মতি দেননি তিনি।
কেন্দ্রের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী জেলা বিএনপিতে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে। একে অপরের বিরুদ্ধে নালিশ নিয়েই ব্যস্ত সবাই। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ আসায় কমিটির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে গুঞ্জন শুরু হলে এখানকার শীর্ষ নেতারা তৎপর হয়ে ওঠেন।
সূত্র জানায়, জেলার নতুন কমিটিতে প্রথমেই বিএনপির উপদেষ্টা সাবেক প্রতিমন্ত্রী কবির হোসেনকে সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করার প্রস্তাব ওঠে। কিন্তু এমন খবর পেয়েই গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে দলের চেয়ারপারসনের কাছে কবির-মন্টুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন কয়েকজন নেতা। এ তালিকায় রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক শামীমুল ইসলাম মুন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক রোকনুজ্জামান আলম, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক রেজাউল ইসলাম ফিটু ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রায়হানুল আলম রায়হান। তাদের অভিযোগের কারণে থমকে যায় প্রস্তাবিত ওই কমিটি।
এরপর জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি সাবেক সাংসদ নাদিম মোস্তফাকে আবারও সভাপতি করার পাশাপাশি নিজেই সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন রায়হানুল আলম রায়হান। কিন্তু বিরোধী গ্রুপের অভিযোগের কারণে এই পরিকল্পনাও থেমে যায়।
তাই তাদের রেখে দলের হাইকমান্ড মহানগর বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক ভিপি সাইফুল ইসলাম মার্শালকে সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটির রূপরেখা চূড়ান্ত করে। এ খবর জানাজানি হলে ঢাকায় ছুটে যান জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ।
তার সঙ্গে ছিলেন জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি ও পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম জুম্মা, নওহাটার পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন, বাগমারা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা শাখার যুগ্মসম্পাদক ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়া এবং জেলার দফতর সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন।
তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মার্শাল-মন্টুসহ পদপ্রত্যাশী অন্য নেতাদের কঠোর সমালোচনা করেন। এ সময় তারা আবু সাঈদ চাঁদকে সভাপতি ও গোলাম মোস্তফা মামুনকে সাধারণ সম্পাদক করারও প্রস্তাব দেন। এরই মধ্যে জেলার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল মনির দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে সভাপতি হওয়ার ইচ্ছার কথা জানান।
তাদের বাইরে জেলার সভাপতি পদের তালিকায় রয়েছেন সাইফুল ইসলাম মার্শাল, আবদুল গফুর, অ্যাডভোকেট এনামুল হক ও সৈয়দ মহসিন আলী। তবে প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও কেউ কাউকে মানতে না পারায় রাজশাহীর বিএনপি নেতাদের ওপর চরম নাখোশ হয়েছেন খালেদা জিয়া। জেলার নেতাদের মধ্যে চরম দ্বন্দ্বের বিষয়টি সরাসরি দেখে তিনি কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন।
বিএনপির রাজশাহী বিভাগের একজন নেতা জানান, পদ প্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন চেয়ারপারসন। কিন্তু নিজেদের মধ্যে দলাদলি মিটিয়ে আসতে না পারায় রাজশাহীর নেতাদের প্রতি চরম নাখোশ তিনি। এরপরেও গুলশান কার্যালয়ে যারা যাচ্ছেন, সবার কথাই শুনছেন চেয়ারপারসন। তাদের মধ্যে খোলামেলা আলাপও হচ্ছে। তিনি অবস্থা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে এ ধরনের গ্রুপিংয়ে থাকলে নাদিম মোস্তফাই ফের সভাপতি হয়ে ফিরবেন বলে দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র আভাস দিয়েছে। যদিও নাদিম মোস্তফার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, বছরের বেশিরভাগ সময়ই তিনি ঢাকায় অবস্থান করেন। এরপরও গত কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজশাহীতে বিএনপির প্রার্থী দিতে মনোনয়ন বাণিজ্য করে বহু টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, একাধিক প্রার্থী থাকায় কমিটি গঠন নিয়ে টানপোড়েন চলছে। কিন্তু কেন্দ্রে গিয়ে নেতারা একে অপরের অপপ্রচার করছেন এমন অভিযোগ সঠিক নয়। তবে যে কেউ নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে পদ পাওয়ার চেষ্টা করতেই পারেন।
কমিটি গঠনের বিষয়ে রাজশাহী বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত বলেন, রাজশাহী থেকে পদপ্রত্যাশী অনেক নেতাই গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেছেন। তবে সবার কথা শুনে চেয়ারপারসন নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। এ জন্য একটু দেরি হচ্ছে। তবে শিগগিরই জেলা বিএনপির কমিটি গঠন হতে পারে বলে জানান তিনি।