‘জ্ঞানের আলো এক্সপ্রেস’ থামে ‘কলকাকলি স্টেশনে’

আপডেট: নভেম্বর ১১, ২০২৪, ১১:০১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


নেই ট্রেন লাইন, নেই ট্রেনের ইঞ্জিন। আছে শুধু কয়েকটি বগি (কোচ)। সঙ্গে যাত্রী বেশে শিশু শিক্ষার্থীরা। ট্রেনের একেকটি বগি একেকটি ক্লাস রুম। এমন ক্লাস রুমগুলোতে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কোমলমতিদের পাঠদান করেন শিক্ষককরা। তবে ট্রেনের বগির আদলে ক্লাস রুমের রঙ করা নিয়ে বেশ সাড়া পড়েছে জেলাজুড়ে।

বলছিলাম রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার ধাদাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা। বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে ১৯৬৭ সালে। এরপরে ২০০০ সালে কয়েকটি ক্লাসরুম নির্মাণ করা হয়েছে প্রয়োজনের তাগিদে। তবে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরানো ভবন অন্তঃনগর ট্রেনের বগির আদলে রঙ করা হয়েছে। যা দূর থেকে দেখে মনে হবে ট্রেনের কয়েকটি বগি থেমে আছে ধাদাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে অংশে ট্রেনের বগির রঙ করা হয়েছে তার আলাদা আলাদা নাম দেওয়া হয়েছে। এখানে ট্রেনের নাম ও স্টেশনের আলাদা আলাদা নাম রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়- কোথা থেকে কোথায় যাত্রা করবে তাও নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টেশনের নাম ‘কলকাকলি স্টেশন’। ট্রেনের নাম ‘জ্ঞানের আলো এক্সপ্রেস’। গন্তব্য দেওয়া হয়েছে বিদ্যালয়-টু-মহাকাশ। এখানে বিদ্যালয় বোঝানো হয়েছে ‘ধাদাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান আহরণ করে যাবে মহাকাশে। তাই মহাকাশ দূরত্ব অর্থে বোঝানো হয়েছে। কোমলমতি শিশুরা তাদের জীবনের যাত্রা শুরু করবে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। এই যাত্রাতে পৃথিবীর জ্ঞান অর্জন করে সুদূর মহাকাশ পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণের লক্ষ্যে ধাবিত হবে।

জানা গেছে, এই বিদ্যালয়ে ৩০৯ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তারমধ্যে ছাত্র ১৩৮ ও ছাত্রী ১৭১ জন। ছাত্রের তুলনায় ৩৩ ছাত্রী শিক্ষার্থী বেশি। প্রাক-প্রাথমিকে ১৫ জন ছাত্র ও ২৯ জন ছাত্রী পড়াশোনা করে। প্রথম শ্রেণিতে, ২৩ জন ছাত্র ও ২৫ জন ছাত্রী, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৪ জন ছাত্র ও ২৩ জন ছাত্রী, তৃতীয় শ্রেণিতে ২৭ জন ছত্র ও ৩৮ জন ছাত্রী, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৪ জন ছত্র ও ২৭ জন ছাত্রী এবং পঞ্চন শ্রেণিতে ১৫ জন ছাত্র ও ২৮ জন ছাত্রী পড়াশোনা করে। তাদের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণিতি একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্রী পড়াশোনা করে।
শিক্ষার্থী রাফিয়া জানায়, তাদের এই ট্রেন গাড়িতে ক্লাস করতে ভালো লাগে। আমাদের স্কুলের মতো ট্রেন গাড়ি কোনো স্কুলে নেই। আমাদের আপারা ট্রেন গাড়ি সমন্ধে বলেছেন। ট্রেন গাড়ির একটা নাম থাকে। স্টেশন থাকে। কোথায় থেকে যাবে। কোথায় থামবে।

শুধু তাই নয়, ‘ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে সক্ষম হয়েছে এমন বিদ্যালয়’ ক্যাটাগরিতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২২ এ ধাদাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ‘প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২২’ পেয়েছেন। সৃজনশীলতা দিতে সততা স্টোর, মহানুভবতার দেয়াল, কলম ব্যাংক, দেয়ালিকা, হাতেখড়ি উৎসব, চালু হয় মিড ডে মিলসহ শিক্ষা ও আনন্দের এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন।

বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রতনা খাতুন বলেন, বিদ্যালয়ের পাশাপাশি দুটি ভবন। মাঝে খেলার মাঠ। পশ্চিমের ভবনে ২০০০ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার সময়ের ভবনের অবস্থা তেমন ভালো না। তাই শিক্ষার্থীরা এখানে ক্লাস করতে চাইতো না। আমরা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন রূপ দিতে রঙ করার পরিকল্পনা করি। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম বিভিন্ন ডিজাইন করার বিষয়ে। পরবর্তিতে প্রধান শিক্ষক বললেন- আমরা এমন কিছু করবো যাতে করে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান আহরণ করতে পারে। তারই অংশ হিসেবে ট্রেনর বগির আদলে ক্লাস রুমের সামনের দেওয়াল রঙ করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিলরুবা খাতুন বলেন, আমরা চাচ্ছিলাম শিক্ষার্থী অন্যরকম কিছু উপহার দিতে। আমাদের চিন্তাভাবনা ছিল ক্লাসরুমটা এমন করা যাতে শিক্ষার্থীদের ভালো লাগে। সেই চিন্তা ধারা থেকে ট্রেনের বগির আদলে রঙ করা হয়েছে। এই ট্রেনের বগিগুলো শুধু বগি না। এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে। যেমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট কোড, সারদা পুলিশ অ্যাকাডেমির কোর্ড, পুঠিয়ার কোর্ড ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পড়াশোনা ও স্কুলে আসার প্রতি মনোযোগী হয়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের লেখাপাড়া ও পাসের হার ভালো। আমার কাছে প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল শিক্ষার্থীদের স্কুলে আনা। আমরা সেটা পেরেছি। শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে সবধরনের বিনোদন পায় পড়াশোনা করে। এখানে ৯ জন শিক্ষক রয়েছেন। তারমধ্যে একজন পুরুষ ছাড়া বাকিরা নারী শিক্ষক।
এবিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবিএম ছানোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই এবিষয়ে তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version