ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক পারাপারে শিক্ষার্থীরা, সড়কে নেই স্পিড ব্রেকার, বাজে হর্ন, কমে না যানবাহনের গতি

আপডেট: ডিসেম্বর ৬, ২০২৪, ১১:০১ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


সড়কে জেব্রাক্রসিং থাকলেও নেই স্পিড ব্রেকার। সার্বক্ষণিক হর্ন বাজলেও কমে না যানবাহনের গতি। এমন বাস্তবতায় রাজশাহীতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের সড়ক পারাপার হতে হয় শিক্ষার্থীদের।
অভিভাবকরা বলছেন, কিছু কিছু স্কুলের সামনে জেব্রাক্রসিং রয়েছে। কিন্তু যানবাহনের চালকরা জেব্রাক্রসিং মানে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনের সড়কে হর্ন বাজানো নিষেধ বা কত গতিতে যানবাহন চালাচল করবে এমন সাইনবোর্ডও নেই। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে এগুলো রাখার দাবি করছেন- শিক্ষার্থী, অভিভাক ও শিক্ষকরা।

অপরদিকে, রাজশাহীতে বেশকিছু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে; যেগুলোর সামনে নেই শিক্ষার্থীদের অবস্থানের জায়গা, নেই মাঠও। বিদ্যালয়ের সামনে ফুটপাত ও সড়ক। এমন বাস্তবতায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আশা করে কমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। ফলে ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনাও।
সরেজমিনে ছুটির আগে ও পরে কয়েকটি বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পারাপার হতে দেখা গেছে। কয়েকটি স্কুলের সামনে জেব্রাক্রসিং দেখা গেছে। তবে বিভিন্ন যানবহনের চালকদের এই জেব্রাক্রসিঙের আগে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়নি।

গত ১ ডিসেম্বর রাজশাহীর খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক পার হতে গিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস নামের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রাইভেটকারের ধাক্কায় আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার জেরে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।

বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের সামনে কোন মাঠ নেই, খোলা জায়গাও নেই। এমন অবস্থায় বিরাজ করছে গত কয়েক বছর আগে থেকে। স্থানীয়রা জানায়, আগে বিদ্যালয়ের সামনে কিছুটা ফাঁকা জায়গা ছিল। কিন্তু কয়েক বছর আগে শহরের তালাইমারী-কল্পনা হলের মোড় সড়কটি সম্প্রসারণ করতে গিয়ে জায়গা অধিগ্রহণ করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। তারপর সড়ক সম্প্রসারণ হয়, বিদ্যালয়টি এসে দাঁড়ায় একেবারে সড়কের ওপর। তবে বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কথা বলতে রাজি হয়নি।

এমন অবস্থা শুধুমাত্র খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়- নগরে কুমারপাড়ার মুন্নুজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাদিরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেলওয়ে স্টেশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একই অবস্থা।

রাফিয়া ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ভয় লাগে সড়ক পার হয়ে স্কুলে আসতে। সব সময় গাড়ি চলে। প্রতিদিন আম্মু রাস্তা পার করে দেয়। না হলে ভাইয়া স্কুলে রেখে যায়। ছুটির পরে দাঁড়িয়ে থাকি। অন্যদের (সহপাঠী) অভিভাবকরা আসলে তাদের সঙ্গে সড়ক পার হই।

আশরাফুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, স্কুলগুলোর সামনে পা ফেলার মত জায়গা নেই। স্কুলের সঙ্গেই ফুটপাত। তার পরে সড়ক। সাধরণত স্কুলগুলো সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্লাস চলে। এই সময়ে সড়কগুলো প্রচুর যানবাহন চলাচল করে। কয়েকদিন আগে সড়ক পার হতে গিয়ে খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক ছাত্রী আহত হয়। পরে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে।
তিনি বলেন, বিদ্যালয়গুলোর সামনে নামেই জেব্রাক্রসিং দেওয়া আছে। বেশির ভাগ যানবাহন চালকই জেব্রাক্রসিং এর নিময় জানে না। স্কুলের সামনে জেব্রাক্রসিং যানবাহনের গতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার কথা থাকলেও কোন চালক মানে না। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া রিকশা ও অটোরিকশার চালকেরা।

কুমারপাড়ার মুন্নুজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুর্তুজা বলেন, বিদ্যালয়ের সামনে তেমন জায়গা নেই। বিদ্যালয় থেকে বের হলেও সড়ক। বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে স্পিড ব্রেকার ছিল। সেটি তুলে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম আনোয়ার হোসেন বলেন, চাইলেই তো একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় একটি বিদ্যালয় নিয়ে যাওয়া যায় না। দুর্ঘটনা কারও কাম্য নয়। তিনি খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কোন শিক্ষার্থী যে গেটের বাইরে না যায়। স্কুলে যাওয়া আসার সময়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনা রোধে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে। স্কুলে অভিভাবক সমাবেশ করতে বলা হয়েছে। এ সমাবেশে দুর্ঘটানরোধের করণীয় বিষয়গুলো উঠে আসবে। ১ ডিসেম্বর দুর্ঘটনার বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। জেলা প্রাশাসকের সঙ্গে মিটিং রয়েছে- সেখানে স্পিড ব্রেকার দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে এই শিক্ষা কর্মকর্তা জানান।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, দুর্ঘটনা রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। অনেকেই ট্রাফিক সিগনাল মানে না। বিভিন্ন কর্মশালায় চালকদের সচেতন করা হয়। এছাড়া সড়কে স্পির্ড ব্রেকার দিলে চুরি, ছিনতাই সহ সমস্যা বিভিন্ন সমস্যা হয়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ