মাহী ইলাহি:
২৮ অক্টোবর থেকে টানা হরতাল ও অবরোধ চলছে। বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলের ডাকা এই হরতাল-অবরোধে রাজশাহীতে ব্যবসায় ধস নেমেছে। ক্ষতির মুখে পড়েছেন সব ধরনের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, এভাবে হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে।
রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার। এখানে আছেন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীরাও এখানে ব্যবসা করছেন। স্বাভাবিক সময়ে এই রাস্তা দিয়ে পথচারিদের চলাচল করাই কঠিন। এখানকার দোকান ভাড়াও অন্য এলাকার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। তার সাথে আছে কর্মচারির বেতন ও বিদ্যুৎ বিলও।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা এক মাস থেকে হরতাল অবরোধ চলছে। এতে ব্যবসা বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে পথে বসতে হবে। এ অবস্থায় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যবসা বাণিজ্যকে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখার দাবি জানান সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে ফুল বিক্রেতা উজ্জল রায় বলেন, আমার ব্যবসা হয় শীতের সময়। এছাড়া বিভিন্ন দিবসে। তবে দোকান থেকে বেশি ফুল কিনে তরুণ-তরুণীরা। আমাদের এই ফুল আসে যশোর-ঝিনাইদহ থেকে। হরতাল অবরোধের কারণে ট্রাকও চলছে না চললেও ভাড়া বেশি নিচ্ছে। ফুলের ব্যবসা একেবারে নেই বললেই চলে।
এ অবস্থায় দোকান ভাড়া দিতে না পারায় ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। আর দেড় মাস ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকায় ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় বড় ব্যবসায়ীদের শঙ্কা ঋণ খেলাপি হওয়ার।
জিরোপয়েন্টের ভাসমান কাপড় বিক্রেতা নাজমুল হক বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আমাদের ব্যবসা করতে হয়। প্রতি সপ্তাহে তাদের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে। ব্যবসা নাই এই কথা তারা শুনতে চাচ্ছে না। তাও কষ্ট করে তাদের কিস্তি দিতে হচ্ছে।
নগরীর ফলের আড়ৎদার আবদুল হালিম বলেন, দেশের বাইরে থেকে আমদানিকৃত ফল বিক্রি করি। স্থলবন্দর দিয়ে আমাদের পণ্য আসে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পণ্য নিয়ে আসার সাহস পাচ্ছি না। খুচরা ব্যবসায়ীরাও ফল কিনতে পারছেন না। তারাও ফল কিনে বিক্রি করতে পারছে না।
সাধারণ ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে পারি। রাজনৈতিক নেতারা আলোচনায় বসে এই সমাধান করে তাহলে আমরা উপকৃত হবো।
পরিবহন সেক্টরের অবস্থা আরও খারাপ। মালিক ও শ্রমিকরা বলছেন, গাড়ি চললে ঋণ শোধ করা যায়। একটি গাড়ি কিনতে খরচ হয় সর্বনিম্ন ৫০ লাখ টাকা। এর বাইরে বিভিন্ন চ্যাসিস আছে। আবার কাউন্টার ভাড়া, কর্মচারিদের বেতনও আছে।
গ্রামীণ ট্রাভেলসের রাজশাহীর ব্যবস্থাপক হাসানুজ্জামান হাসান বলেন, সপ্তাহে চারদিন আমাদের গাড়ি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তিনদিন গাড়ি চালানো যাচ্ছে তাও যাত্রী হচ্ছে না। আমাদের ৩৬ সিটের গাড়িতে ২০ টিকিটও বিক্রি হচ্ছে না। এতে গাড়ির তেলের টাকাও উঠছে না।
তিনি বলেন, একটি গাড়ির পিছনে কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে। ব্যাংক লোনও নেওয়া আছে। গাড়ি না চললে সে টাকাও পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
চলমান পরিস্থিতিতে বেতন পরিশোধ করতে না পেরে কয়েকটি সেক্টরে শ্রমিক ছাটাই শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এর কারণ হিসেবে হরতাল অবরোধকে দোষ দিচ্ছেন তারা। ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করেছেন। তাদের দাবি মাসের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে তাদের আয়ের পথ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংক ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় মামলাসহ ঋণ খেলাপি হয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, পান-সিগারেটের দোকানিসহ বড় বড় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কোনো দেশেই হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয় না রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যতিক্রম। এতে করে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রাজনৈতিক সমস্যার জন্য আলোচনা করতে হবে। দেশের মানুষ ও ব্যবসায়ীরা কেন এর ভুক্তভোগী হবেন।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে যতগুলো বেসরকারি ব্যাংক আছে সেগুলোতেও লেনদেন কমে গেছে। যাদের ঋণ নেয়া আছে তারাও শোধ করতে পারছে না। নতুন করেও নিতে পারছে না। রাজনৈতিক আলোচনায় এর সমাধার করা দরকার।