বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, ১২ ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
৬ মার্চ, ১৯৭১ : আজও পূর্ব বাংলার সর্বত্র সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এ সময় ঢাকার রাজপথ জনতার মিছিলে মিছিলে একাকার হয়ে ওঠে।
পাকিস্তান সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করলো। চাখানা, অফিস-আদালত কিংবা আড্ডায় সর্বত্র একই আলোচনা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আগামীকাল (৭ মার্চ) রেসকোর্সের জনসভায় কী বলবেন- তা নিয়ে লোকজনের জল্পনা-কল্পনা শেষ নেই। ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষা আজ বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনকার।
এদিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসার ঘোষণা দিলেন। এ ঘোষণার উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডেকে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া থেকে বিরত রাখা। সে সময় এমনি এক ধারণা সবার মুখে মুখে ফিরছে।
ইয়াহিয়া খান এদিনের ভাষণে বাংলাদেশের বিক্ষুব্ধ মানুষকে ‘দুষ্কৃতিকারী’ আখ্যা দেন এবং জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বানের কথা ঘোষণা করেন। তবে পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ থেকে এটা বোঝা গেছে যে, ইয়াহিয়ার এই ঘোষণা ছিল এক ধরনের ভাওতাবাজি। বাঙালিদের গণহত্যার উদ্দেশ্যেই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আমদানির সময় নেয়ার জন্য ওই ঘোষণা দেয়া হয়। ইয়াহিয়া তার ভাষণে হুমকি দেন যে, যতদিন আমি সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে থাকবো, ততদিন আমি পাকিস্তানের পূর্ণ অখণ্ডতা রক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করবো। তাতে যা-ই ঘটুক না কেন, কিছুই যায় আসে না। এ সম্পর্কে কোন সন্দেহ বা ভুলের অবকাশ নেই। অথচ ইয়াহিয়ার ভাষণে পূর্ব বাংলায় সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্বিচারে হত্যা সম্পর্কে কোন অনুশোচনা বা সমবেদনা উচ্চারিত হয়নি।
ইয়াহিয়া খানের ভাষণের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভা গভীর রাত অবধি চলে।
ইয়াহিয়ার ভাষণের পর রাওয়ালপিন্ডি থেকে সেদিন রাতেই সংবাদ সংস্থা এপিপি একটি খবর পরিবেশন করে। এ খবর ছিল বাঙালি জাতির প্রতি প্রচণ্ড চপেটাঘাতের সামিল। খবরে বেলুচিস্তানের কসাই নামে খ্যাত টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়োগের কথা বলা হয়। এতে বাঙালিদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, সামনে দু’সময়। তার নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রতিকূল প্রক্রিয়া দেখা দিল। পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন বিচারপতি এবি সিদ্দিকী গভর্নর হিসেবে টিক্কা খানকে শপথ গ্রহণ করাতে অস্বীকার করেন।
আজকের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেট ভেঙে ৩৫০ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। নিরাপত্তা রক্ষীদের গুলি বর্ষণে ৭ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় ৩০ জন ধরা পড়ে ১৬ জন। দেশের অন্যান্য কারাগারগুলিতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে শুরু করলো।