মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কায় বাংলাদেশের বিরোধিতার প্রেক্ষাপটে ভারত টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ‘আঙ্গিক পরিবর্তন’ করতে যাচ্ছে বলে সংসদে জানানো হয়েছে।
রোববার সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নয়া দিল্লির কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়ার কথা জানান।
নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী লিখিত উত্তরে বলেন, “সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে সফল আলোচনার ফলশ্রুতিতে ভারতের পরিকল্পিত টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব নিরূপনের জন্য একটি যৌথ সমীক্ষা পরিচালিত হচ্ছে।
“ভারত সম্প্রতি উক্ত প্রকল্পের আঙ্গিক পরিবর্তন হতে পারে মর্মে অবহিত করেছে। পরিবর্তিত তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করা হলে সমীক্ষা চূড়ান্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
তবে কী আঙ্গিক বদলাবে, উত্তরে তা স্পষ্ট করেননি মন্ত্রী।
মনিপুর রাজ্যে খরস্রোতা বরাক নদীতে বাঁধ দিয়ে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ভাটির দিকে আসামে সেচের জন্য টিপাইমুখ প্রকল্পের পরিকল্পনা দুই দশক আগে করেছিল ভারত।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ২০১১ সালে শুরু হলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। ওই বরাক নদীই বাংলাদেশে ঢুকে দুই ধারায় ভাগ হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা হয়। পরে আবার এক হয়ে মেঘনা নাম নেয়।
বাংলাদেশ সীমান্তের ২০০ কিলোমিটার উজানে টিপাইমুখে ওই বাঁধ নির্মাণ হলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং হাওর অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে বলে পরিবেশবিদদের আশঙ্কা।
টিপাইমুখে বাঁধ হলে শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে জলাধার থেকে পানি ছেড়ে দিলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
ঢাকার আপত্তির মধ্যে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু তারা করবে না; তবে প্রকল্পটি বাদ দেয়নি ভারত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সিলেটে তীব্র বিরোধিতার মধ্যে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদই দুই বছর আগে বলেছিলেন, টিপাইমুখে বাঁধে বাংলাদেশের উপকারই হবে।
তার বক্তব্য ছিল, “পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা প্রচলিত আছে। বাস্তব কথা হল, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ হলে বর্ষাকালে সিলেটে যে বন্যা হয়, তা আর হবে না। শীতকালেও পানি থাকবে।”
মন্ত্রী রোববার সংসদে বলেন, “ভারতের পরিকল্পিত আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে যাতে পরিবেশ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে, সে বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।”
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৭টি অভিন্ন নদী রয়েছে যার ৫৪টিই এসেছে ভারতের উপর দিয়ে।
গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ সম্পর্কে এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে পানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে ভারতীয় অংশে প্রভাব নিরূপণের জন্য দেশটির আট সদস্যের কারিগরি দল গত বছর বাংলাদেশ ঘুরে গেছে।
গঙ্গা ব্যারেজ হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১২৩টি আঞ্চলিক নদীতে পানি প্রবাহ অক্ষুণ্ন রাখা সম্ভব হবে জানান আনিসুল ইসলাম।- বিডিনিউজ