টেকসই উন্নয়নে আইনের শাসন নিশ্চিতের সুপারিশ

আপডেট: ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক



টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, সমতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, উন্নয়ন এখন আর প্রবৃদ্ধি নির্ভর নয়। যারা প্রবৃদ্ধির সূচকের ভিক্তিতে উন্নয়ন মাপেন তারা পিছিয়ে আছেন। বাংলাদেশের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।  এই চ্যালেঞ্জ অর্জন করতে হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, সমতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।
গত শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে জাতিসংঘের ব্যবসা বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা ইউএনসিএডির (আঙ্কাড) প্রতিবেদন প্রকাশকালে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর পক্ষ থেকে সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিপিডির বিশেষ রিসার্চ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। ড. দেবপ্রিয় বলেন, উন্নয়ন হতে হবে সবার জন্য। যেখানে সবার অংশগ্রহণ থাকতে হবে। বঞ্চনা কমাতে হবে। আইনের শাসন ও মানুষের জন্য সমৃদ্ধি আনতে হবে। একইসঙ্গে পরিবেশের সুরক্ষা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, যারা ‘গণতন্ত্র আগে না উন্নয়ন আগে’ বলে বিতর্ক করছেন তারা উন্নয়নের আধুনিক ধারা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। কেননা, সমতা যদি না থাকে তাহলে সেটা উন্নয়ন নয়।
সিপিডির এই গবেষক জানান, বিশ্বের বহু দেশ এখন এলডিসি থেকে বের হয়ে যেতে চাচ্ছে। এর পিছনে দুটি কারণ রয়েছে। একটি হলো- এলডিসিভুক্ত দেশগুলো যে পরিমাণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল তা পায়নি, পেলেও ব্যবহার করতে পারেনি। এতে তারা হতাশ। অন্যদিকে, যেসব দেশ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাদের মধ্যেও অবসাদ (ফ্যাটিং) এসেছে। দ্বিতীয়টি হলো- এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অনেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাজনৈতিক কৃত্তিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশও একটি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, মাথাপিছু আয়ের হিসেবে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে গেছে। এর পরের স্তর হচ্ছে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। এই স্থরে পৌঁছাতে হলে মাথাপিছু আয়কে ৪ হাজার ডলারে নিয়ে যেতে হবে। অথচ বাংলাদেশ যে মধ্যম আয়ের দেশের কথা বলছে, তার আন্তর্জাতিক কোনো মানদ- নেই। এটা বাংলাদেশেরই তৈরি।
দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশকে পুষ্টি, শিক্ষা, সাক্ষরতা বৃদ্ধি, শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে উন্নতি করতে হবে। প্রবৃদ্ধির দিকে নজর না দিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিতে হবে। মানবসম্পদ উন্নত হলেই উৎপাদনশীলতা বাড়বে আর উৎপাদনশীলতা বাড়লে প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু কতটুকু উন্নয়ন গতি নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে সেটা দেখতে হবে। শ্রমঘন শিল্পায়ন, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, তৈরি পোশাক ছাড়াও কর্মসংস্থানের নতুন খাত সৃষ্টি হয়েছে কিনা সেটা দেখতে হবে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিবেশের ভারসাম্যতা দেখতে হবে। কৃষি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। মূল প্রবন্ধে জাতিসংঘের ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থা ইউএনসিটিএডি (আঙ্কটাড)-এর প্রতিবেদন থেকে জানানো হয়, ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ বিবেচিত হবে। ২০২৪ সালে এই তালিকা থেকে বের হয়ে আসবে। আর ২০২৭ সাল পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের ৪৫তম বার্ষিকী পালনের পরের দিনই এ সুসংবাদটি দিয়েছে জাতিসংঘের ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়ন সংস্থাটি।