বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ, ১২ ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিস্ময়কর জয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতিবাচক অনেককিছুর আশঙ্কার কথা অনেকে বললেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমেরিকার নীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আবাসন ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারের শুরুর দিকেই অভিবাসন ও মুক্ত বাণিজ্যসহ আমেরিকার বিভিন্ন নীতেতে পরিবর্তন এবং মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের কথা বলে সমালোচিত হন; এ বিষয়গুলো বাংলাদেশের সঙ্গেও সরাসরি সম্পর্কিত।
বুধবার ভোটের ফল আসার পর বিশ্বনেতাদের মধ্যে প্রথম যারা ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছেন, তাদের মধ্েয বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন। সেই অভিনন্দন বার্তায় ট্রাম্পের নেতৃত্বগুণের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, আগামীতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা করছেন।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন মনে করছেন, ট্রাম্প ওভাল অফিসের দায়িত্ব নেয়ায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির খুব একটা হেরফের হবে না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আসলে, পররাষ্ট্রনীতি রাতারাতি বদলে যায় না; এতে সময় লাগে। আর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এমন কোনো পক্ষ নয় যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক স্বার্থ জড়িত।”
ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের আলোচিত অনেক বক্তব্যই শেষ পর্যন্ত ‘কথার কথা’ হিসেবে থেকে যাবে বলে সাবেক এই কূটনীতিবিদের ধারণা।
“তিনি (ট্রাম্প) মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর দেয়াল তুলে দেয়ার কথা বলেছেন। এটা কি সম্ভব? আমি তা মনে করি না। অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ইস্যুতে তার সিদ্ধান্ত সিনেটরদের ভেটোর মুখে পড়তে পারে। প্রেসিডেন্ট যা করবেন বলে ভাবছেন তারা তার বিরোধিতা করতে পারেন। তাই, এটা সহজ নয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থাকেও অভিবাসন ইস্যুতে রক্ষাকবচ হিসেবে দেখছেন তৌহিদ হোসেন।
“(যুক্তরাষ্ট্রের) বিচার ব্যব্স্থা স্বাধীন, যেখানে একজন অবৈধ অভিবাসীও আইনের আশ্রয় নিতে পারে। এমনকি একজন অবৈধ অভিবাসীরও সেখানে একটি আইনি স্বীকৃতি রয়েছে যে তিনি ‘অবৈধ’।”
যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অভিবাসীদের দেশ’ হিসেবে বর্ণনা করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও বলেছেন, ট্রাম্পের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি একেবারে বদলে যাবে বলে তিনি মনে করছেন না।
বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আগেও (যুক্তরাষ্ট্রের) বিভিন্ন সরকার হস্তক্ষেপ করে অভিবাসন নীতি পরিবর্তনের চেষ্টা করেছে, কিন্তু তারা পারেনি। এবারও কিছুই ঘটবে না।”
বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ জানিয়েছেন একজন ব্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় তিনি আনন্দিত। কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্েযর শুল্কমুক্ত সুবিধা বন্ধ করে দেয়ার প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বারাক ওবামার আট বছরে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কিছুই পাইনি। তাই আমাদের হারানোরও কিছু নেই। ফলে ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে বাণিজ্যের বিচারে বাংলাদেশের সামনে একটি নতুন সূচনার সুযোগ হয়েছে মনে করছেন নিটল-নিলয় গ্রুপের প্রধান মাতলুব।
“এখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য কূটনীতি বাড়ানোর উদ্েযাগ নিতে হবে আমাদের। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদের ছয় মাসের মধ্েযই বাংলাদেশের বিষয়টি তার সামনে তুলে ধরতে হবে। তিনি একজন ব্যবসায়ী। আমার ধারণা, তার কাছ থেকে আমরা কিছু পেতে পারি।”
ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়েও দুশ্চিন্তার তেমন কিছু দেখছেন না এফবিসিসিআই সভাপতি।
“ভোটের প্রচারের সময় রাজনীতিবিদরা অনেক ধরনের কথা বলেন। কিন্তু ক্ষমতায় এলে তারা হুবুহু সব কিছু করতে পারেন না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ভোটের সময় বাংলাদেশ নিয়ে অনেক কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখন বাস্তবতা পুরো উল্টো। এমনকি অনেকদিন ধরে আটকে থাকা অনেক জটিলতাও তিনি সমাধান করেছেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডেমোক্রেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের জয়ী হতে না পারার খবার বাংলাদেশ সরকারের অনেকের জন্যও স্বস্তি নিয়ে এসেছে, কেননা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আপত্তি তুলেছিল বারাক ওবামার বর্তমান ডেমোক্রেট সরকার। ওই নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
তাছাড়া ২০৯-২০১৪ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে মুহাম্মদ ইউনূসের অপসারণ নিয়েও তিক্ততা তৈরি হয়। ক্লিনটন পরিবারে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ইউনূস বয়স সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও ওই দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
অধিকাংশ জনমত জরিপে হিলারিকে এগিয়ে রাখা হলেও সব হিসাব উল্টে দিয়ে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্েয দুশ্চিন্তার কিছু দেখছেন না সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান। “মন্তব্য করার সময় এখনও আসেনি। তবে আমি আশাবাদী। বাংলাদেশ নিয়ে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য তিনি কখনও করেননি। সুতরাং আমাদের ভয় কীসের?”
আশফাকুর রহমান বলেন, “হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী আর হিলারির সম্পর্কের মধ্েয ইউনূস একটি বিষয় বলে ধারণা চালু আছে। কিন্তু রিপাবলিকানদের সঙ্গে তো সরকারের এরকম কোনো সমস্যা নেই।
এক সময় ওয়াশিংটনে দায়িত্ব পালন করা সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ট্রাম্প চাইলে তার নির্বাহী আদেশে অভিবাসন নীতি বদলে ফেলতে পারেন। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিরা জটিলতায় পড়তে পারেন। আর অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আগেই শুল্কমুক্ত কোটা থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিয়েছে। সুতরাং সেখানে নীতি আরও কঠোর হলেও বাংলাদেশের ওপর নতুন করে নিরূপ প্রভাব পড়ার কিছু নেই।
হুমায়ুন কবির বলেন, সাধারণত রিপাবলিকানরা মুক্ত বাণিজ্যকে উৎসাহিত করে। কিন্তু ট্রাম্প এর বিরোধিতা করেছেন। এখন তিনি কোন পথে যাবেন- সেটাই দেখার বিষয়।- বিডিনিউজ