রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
মান্দা প্রতিনিধি
দীর্ঘ ১০ বছরের দাম্পত্য জীবনে সন্তান হয় নি। মা হওয়ার আশায় চিকিৎসকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ব্যর্থ হয়েছেন। অবশেষে আশা নিয়ে এসেছেন নওগাঁর ঠাকুরমান্দা রঘুনাথ মন্দিরে। গত বুধবার সকালে তাকে মন্দির প্রাঙ্গনে শাড়ির আঁচল পেতে বসে থাকতে দেখা যায়। পরিচয়ে জানা গেল তিনি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট গ্রামের পলি রানী। পলি রানী জানান, ঠাকুরের আশির্বাদে সন্তান পাবার আশায় মানত করতে এসেছেন। শুধু পলি রানী নয় সাথী রানী, টুলটুলী রানী, শ্রীমতি আলোসহ আরো অনেক নারী সন্তানের আশায় শাড়ির আঁচল পেতে বসেছিলেন রঘুনাথ মন্দিরের সামনে।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার ঠাকুরমান্দায় অবস্থিত মন্দিরটি প্রায় তিনশ বছরের ঐতিহ্য বহন করে আসছে। প্রতিবছর চৈত্র মাসের নবম শুক্লা তিথিতে রামনবমীর মেলা উপলক্ষে দেশ-বিদেশের ভক্তদের আগমন ঘটে এখানে। মন্দিরটি ঘিরে কিংবদন্তি রয়েছে এখানে মানত করে বন্ধ্যা নারীরা সন্তান লাভ করে, দৃষ্টি শক্তি ফিরে পায় অন্ধরা। আরো অনেকে আসেন বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ থেকে আরোগ্য পেতে।
বুধবার রাত ৩ টা ৪৫ মিনিটে রামচন্দ্রের বিগ্রহে পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে এ বছর উৎসবের শুরু হয়েছে। নয় দিনব্যাপী এ ধর্মাচার ও উৎসব চলবে আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। উৎসব ঘিরে লক্ষাধিক ভক্ত ও দর্শনার্থীর সমাবেশ ঘটেছে।
মান্দা উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে ঠাকুরমান্দা জনপদে অবস্থিত এই মন্দিরটি হিন্দুদের অন্যতম তীর্থস্থান। পুন্ড্রবর্ধনের অন্যতম প্রাচীন জনপদ হিসেবে ঠাকুরমান্দার ঐতিহাসিক পরিচিতি রয়েছে। পাল আমলের বিভিন্ন প্রতœ নিদর্শন এই জনপদ থেকে আবিষ্কৃত হয়।
প্রায় ২০ বছর ধরে মন্দিরটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন চন্দন কুমার মৈত্র। তিনি জানান, ঠাকুরমান্দা রঘুনাথ মন্দির উত্তরাঞ্চলের অন্যতম তীর্থস্থান। এ তীর্থ দর্শনে প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে লাখ-লাখ ভক্ত দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। অনেকে মনোবসনা পুরনের লক্ষ্যে মন্দিরে মানত করে। মন্দিরের উৎসবকে ঘিরে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মিলনমেলা হয়।
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক সত্যেন্দ্রনাথ প্রামানিক জানান, মন্দিরের আবাসন সমস্যা দীর্ঘদিনের। হাজার হাজার ভক্ত মন্দিরে মানত করতে এসে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করেন। সম্প্রতি ভারত সরকারের দেওয়া অনুদানে একটি আবাসন তৈরি করা হচ্ছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
বুধবার ভোরে রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাইকমিশনার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, তার সহধর্মিনী পত্রালিকা চট্টোপধ্যায় ও নওগাঁ-১ আসনের সাংসদ সাধন চন্দ্র মজুমদার, নওগাঁ পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক (বিপিএম, পিপিএম), ইউএনও নুরুজ্জামানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মন্দির পরিদর্শন করেন।