শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
রাবি প্রতিবেদক:
প্রথম রোজা থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন সাহরির সময় বন্ধ থাকছে। রোজাদার শিক্ষার্থীদের সাহরির খাবারের একমাত্র ব্যবস্থা ছিল ডাইনিঙে। অস্পষ্ট অজুহাত দেখিয়ে সোমবার (২৫ মার্চ) থেকে সেটিও বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ। এতে রোজায় থাকা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে হলে অবস্থানরত কয়েকশত শিক্ষার্থী।
এদিকে ডাইনিং ও ক্যান্টিন বন্ধ রাখার যৌক্তিক কোনো কারণ বলতে পারছেন না ডাইনিং ও ক্যান্টিনের বাবুর্চি ও মালিক। যথাযথ উত্তর নেই হল প্রাধ্যক্ষের কাছেও। হলে শিক্ষার্থী না থাকায় লসের কারণে সাহরির খাবার একমাত্র অবলম্বন ডাইনিং বন্ধ করার কথা বলা হলেও স্বাধীনতা দিবসের খাবারের জন্য রান্না করা হচ্ছে ১ হাজার ৫০ পিস মুরগির রোস্ট! প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে হলে শিক্ষার্থী না থাকার অজুহাত দেওয়া হচ্ছে কেনো? আর এতো রোস্ট খাবে বা কে?
এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের দাবি, যেভাবেই হোক সাহরির খাবারের ব্যবস্থা করা উচিত। অন্যথায় রোজায় থাকতে চরম অসুবিধা হবে তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল রয়েছে ১৭টি। সকল হলের ডাইনিং-ক্যান্টিন বিষয়ে খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে, শিক্ষার্থীরা জানান, শেরে বাংলা হলের ক্যান্টিন একদম বন্ধ থাকলেও ডাইনিং সন্ধ্যায় ও সাহরিতে খোলা থাকছে। শাহ মাখদুম, ড. শামসুজ্জোহা ও শহীদ হবিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন দুপুর ও সন্ধ্যায় চালু থাকলেও সাহরিতে বন্ধ থাকে। আর ডাইনিং একদম বন্ধ রয়েছে। মেয়েদের বঙ্গমাতা হলের ডাইনিং-ক্যান্টিন সবসময় চালু থাকছে।
ডাইনিং-ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় হতাশা প্রকাশ করে শহীদ হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রেজাউল করিম বলেন, হলে এখনো অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। ডাইনিংটা আর কয়েকদিন খোলা রাখা উচিত ছিল। পরশুদিন (২৭ মার্চ) থেকে ক্যাম্পাস বন্ধ হলেও অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে বা, থাকবে। সবাই তো আর রান্না পারেনা বা, সবার রান্না করার ব্যবস্থাও নাই। তাহলে তারা সাহরিতে করবে কোথায়? আবার ডাইনিং বন্ধ থাকলেও অন্য হলের মত অন্তত ক্যান্টিনটা খোলা থাকলে ভালো হতো।
শোয়াইব হোসাইন শুভ নামে আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখনও হলে রয়েছে। তাদের কথা চিন্তা করে ডাইনিং না হলেও অন্তত ক্যান্টিন খোলা রাখা দরকার। হলে থাকা শিক্ষার্থীদের খাবারের ব্যবস্থা করাতো হল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। ইফতার সামগ্রী বাইরে থেকে কিনে আনা হয়। কিন্তু সাহরির খাবার কোথায় পাবো?
ডাইনিং বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা সাহরির খাবার কোথায় থেকে খাবে জানতে চাইলে শহীদ হবিবুর রহমান হলের ডাইনিংয়ের বাবুর্চি আব্দুস সামাদ বলেন, এবিষয়ে আপনারা প্রভোস্ট স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রতিবছরই ১৫ রোজা থেকে ডাইনিং বন্ধ করে দেওয়া হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবছরই এতো আগে বন্ধ করা হয়না। কিন্তু এবার ছুটির কারণে মূলত বন্ধ করা হয়েছে। ২৭ তারিখ থেকে ক্যাম্পাস ছুটি (আজ ২৫ মার্চ)। আমাদের হলে ছেলেপেলে ওইভাবে নাই। ডাইনিংয়ে খাওয়ার মত আমাদের হলে আনুমানিক একশত ছেলে পেলে আছে। কিন্তু বাইরের (অন্য হলের) ছেলেপেলেরা এসে আমাদের এখান থেকে খেয়ে যাচ্ছে।
এই একশত ছেলে কোথায় খাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগইতো কয়েকদিনের মধ্যে চলে যাবে। এই কয়দিন একটু নিজেরা কষ্ট করে খাবারের ব্যবস্থা করে নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, হল প্রশাসন আমাদের অনুমতি না দিলে কি আমরা বন্ধ করতে পারি? এখানে আরেকটা বিষয় হচ্ছে, সারাবছর আমাদের তেমন কোনো ছুটি নাই। এরকম ১০-১৫ দিন বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি থাকলে, তখন আমরা একটু আরাম পায়। বছরে একবার। তাছাড়া, আগামীকাল স্বাধীনতা দিবসের বিশেষ খাবারের জন্য ১ হাজার ৫০ পিস মুরগীর রোস্টের পাশাপাশি ডিমসহ অন্যান্য খাবার রান্না করতে হবে। দুইদিন এটা নিয়েই ব্যস্থ থাকবো। এখন কোনদিকে কি করবো?
আপনিই বলছেন ডাইনিংয়ে খাওয়ার মত হলে একশত ছেলে হলে আছে। ধরে নিলাম, আরো একশত শিক্ষার্থী আছে, যারা ডাইনিংয়ে খায়না। তাহলে দুইশত হচ্ছে। এখন আপনিই বলছেন ১ হাজারের বেশি পিস রোস্ট রান্না করা হবে। তাহলে, কথাটা দুইরকম হয়ে গেলো কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ১ হাজার পিস রোস্ট কে খাবে, সেটা স্যারেরা বলতে পারবে।
আগের বছরগুলোতে স্বাধীনতা দিবসের খাবারের পাশাপাশি রোজার সাহরির জন্য ডাইনিংও চালু ছিল। তাহলে এবার সমস্যা হচ্ছে কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলেছিল, এটা ঠিক। কিন্তু একটু কঠিন হয়ে যায় আমাদের জন্য।
শিক্ষার্থীরা সাহরির খাবার কোথায় খাবে জানতে চাইলে হলের ক্যান্টিন মালিক আলতাফ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা কোথায় খাবে, সে বিষয়ে আপনারা হলের প্রভোস্ট বা, সুপারভাইজারকে বলেন।
এবিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, ডাইনিং কর্মচারীদের লস হয়ে যাচ্ছে। এজন্য ওরা পারছেনা। তোমরা কয়েকজন দায়িত্ব নাও, ওরা রান্না করে খাওয়াবে।
রোববারও (২৪ মার্চ) সাহরির খাবারের ডাইনিং ভরতি ছেলেপেলে ছিল। তাহলে লস কিভাবে হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাতো বলতে পারবোনা। কিন্তু ডাইনিংয়ের ওরা আমাকে বলেছে যে, ‘স্যার লস হয়ে যাচ্ছে’।
ডাইনিঙের বাবুর্চির সঙ্গে কথা হয়েছে এবং তিনি লস হওয়ার দাবি করেননি জানালে প্রাধ্যক্ষ প্রশ্ন করেন, তাহলে তারা কেনো বন্ধ করলো?
বাবুর্চির বক্তব্য অনুযায়ী ছুটির (আরামের) জন্য এবং হল প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে তারা ডাইনিং বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানালে তিনি বলেন, এটা একদম ভুল তথ্য। আমি একটা জিনিস বলেছি যে, অন্য কোনো হলের ডাইনিং বন্ধ না হলে, আমার হলের ডাইনিংও বন্ধ হবেনা। তখন তারা বললো যে, স্যার অমুক অমুক হলের ডাইনিং বন্ধ হয়েছে। তখন আমি তাদের বলেছি যে, তাহলে ঠিক আছে। তাছাড়া, আমার কি স্বার্থ যে, আমি তাদের বন্ধের নির্দেশ দিবো? ছাত্ররা খেতে পারলেতো, আমাদের জন্যই ভালো।
ডাইনিং কর্মচারীরা নিজেদের স্বার্থে বন্ধ করার অনুমতি চাইলেই, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা না করে আপনি অনুমতি দিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ বলেন, আসলে তোমাদেরও একটা জিনিস বোঝা উচিত যে, বিশ্ববিদ্যালয় ২৭ তারিখ থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ওরাও একটু ছুটি চাই। এটা স্বাভাবিক। সারাবছর তারা ডাইনিং চালায়।
আর এক সপ্তাহ চালানো যেতো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিও তাদের সেটা বলেছি। কিন্তু তাদের বলছে, ‘স্যার, আমরা আর পারছিনা’। তাছাড়া, তারা যখন অন্য হলের রেফারেন্স দিলো, আবার আমি খোঁজ নিয়েও দেখলাম যে, তাদের তথ্য সঠিক, তখন আমি তাদের অনুমতি দিয়েছি। তাছাড়া, ডাইনিং-ক্যান্টিন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও সেরকম কোনো নির্দেশনা নাই।
তাহলে, শিক্ষার্থীরা রোজায় থাকবে কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য কোনো হলের ডাইনিং চালু থাকলে, একটু চালিয়ে নাও। তারপরও, আগামীকাল আমি এবিষয়ে আবার কথা বলবো সংশ্লিষ্টদের সাথে।
হলের সিট বা আবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭২৮ টি। হলের ও ডাইনিং-ক্যান্টিনের কর্মকর্তা-কর্মচারী আরো ৭২ জন ধরলেও, সংখ্যাটা হয় ৮০০টি। তাহলে, ১ হাজার ৫০ পিস মুরগীর রোস্ট কেনো রান্না করা হচ্ছে জানতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ বলেন, হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনাবাসিক কিছু ছেলেও আছে। এখন ওদের বাদ খাওয়া যায়না। আমরা বলেছি, আবাসিকদের রেজিস্ট্রেশন সাপেক্ষে খাবার দেওয়া হবে। কিন্তু যারা কারো রুমে গেস্ট হিসেবে অনাবাসিক আছে, ওদেরকেও দিতে হয়।
সার্বিক বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. একরামুল ইসলাম বলেন, সব হলের ডাইনিং বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থী উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হল প্রশাসন ও ডাইনিং কর্মচারীদের আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।
শহীদ হবিবুর রহমান হলে অন্তত চারভাগের তিনভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকলেও হলের ডাইনিং কেনো বন্ধ ঘোষণা করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম হলেতো ডাইনিং চলার কথা। তবে, ছাত্ররা সবাই হলে খাচ্ছে কিনা, সেটাও একটা বিষয়। এবিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ ভালো বলতে পারবেন।