ডাবলু সরকারের বহিষ্কার দাবিতে মানববন্ধন, সাধারণ সম্পাদকের আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস ইস্যুতে মহানগর আওয়ামী লীগ

আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৩, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


সাধারণ সম্পাদকের আপত্তিকর ভিডিও ফাঁস ইস্যুতে এবার মাঠে নামল রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন। প্রথমবারের মতো সমাবেশ করে সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বহিষ্কারের দাবি করেছেন।

সোমবার (২৭ মার্চ) সকালে নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচি ও সমাবেশ পালিত হয়। এতে মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদে থাকা নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

এই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোজাফফর হোসেন। পরিচালনা করেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, এই ঘটনার পর কেন্দ্র কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, সেই অপেক্ষায় তারা এত দিন বসে ছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না দেখে তারা মাঠে নামলেন।

এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি ডাবলু সরকারের একটি আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিও কলে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যায় তাকে। ডাবলু সরকার দাবি করেন, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির শরীরের ওপরের অংশ তার। তবে নিচের অংশ তার নয়। ভিডিওটি সম্পাদন করা দাবি করে তিনি থানায় মামলা করেন।

এই ভিডিও ইস্যুতে ডাবলুর বহিষ্কার দাবিতে প্রথম মাঠে নামেন কিছু নেতা-কর্মী। দলীয় কোনো পদে না থাকা এসব নেতা-কর্মীরা ‘সচেতন রাজশাহীবাসী’ ও ‘তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী’ ব্যানারে সোচ্চার হন। তারা ডাবলু সরকারের বহিষ্কারের দাবি জানান। এ ইস্যুতে প্রথম গত ২ মার্চ ‘সচেতন রাজশাহীবাসীর’ ব্যানারে মানববন্ধনের আয়োজন করা হলে ডাবলু সরকারের ভাই শাহনেওয়াজ সরকার সেডু ও জেডু সরকারের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। তারপরও একই দাবিতে কয়েক দিন কর্মসূচি পালিত হয়। তবে এসব কর্মসূচিতে ছিলেন না মহানগর আওয়ামী লীগের পদে থাকা নেতারা। এই ভিডিও নিয়ে তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলছিলেন না, মাঠেও নামছিলেন না। অবশেষে সোমবার (২৭ মার্চ) তারা প্রথমবারের মতো মাঠে নামলেন।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, ‘ডাবলু সরকার আমার কাছে অনুরোধ করেন, আমি যেন পুলিশ কমিশনারকে বলি ভিডিওটি ছড়ানো ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমি বলেছি, আগে কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিং দাও, মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তিনি মিটিং না দিয়ে নিজের গা বাঁচাতে ভিডিও মিথ্যা দাবি করে মামলা করলেন। এটা মহানগর আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত নয়। এমন আপত্তিকর ভিডিও সামনে আসার পরে তার উচিত ছিল পদ ছেড়ে দিয়ে আগে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ হয়ে আসা। তাহলে আমাদের মুখ রক্ষা পেত। এখন লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না।’

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, ‘রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সারা দেশের মধ্যে খুবই শক্তিশালী সংগঠন। কিন্তু এখন এই ভিডিও দেখে মানুষ আমাদের ধিক্কার জানাচ্ছে। ছিঃ ছিঃ করছে। আমরা লজ্জায় রাস্তায় বের হতে পারছি না। এখনো সময় আছে। নেতৃবৃন্দকে বলব, সবাই মিলে দলের রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল ও সভাপতিম-লীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে চলেন। বিষয়টি তাদেরকেই সুরাহা করে দিতে বলেন।’

কর্মসূচিতে অন্য বক্তারা ডাবলু সরকারের বহিষ্কার দাবি করে বলেন, সামনে সিটি নির্বাচন। এরপর জাতীয় নির্বাচন। ডাবলু সরকারের নৈতিক স্খলনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। তাই ডাবলু সরকারকে এখনই বহিষ্কার করতে হবে। আর ভিডিওর ব্যাপারে তিনি থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ ফরেনসিক পরীক্ষা করুক। পরীক্ষায় যদি আসে যে এই ভিডিও সম্পাদন করা তাহলে ডাবলু সরকার সসম্মানে রাজনীতিতে ফিরে আসুক। আর ভিডিও সত্য হলে তার মতো নেতার দরকার নেই।

কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, শাহাদাৎ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকার, শামিমা ইয়াসমিন শিখা, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, আইন বিষয়ক সম্পাদক মুসাব্বিরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. এফএমএ জাহিদ, প্রচার সম্পাদক দিলীপ ঘোষ, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার শরিফ, নির্বাহী সদস্য ইউনুস আলী, নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লির সদস্য সভাপতি আরিফুল হক কুমার, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আক্তার নাহান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মইনুল ইসলাম মোস্তফা, বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান কালু, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুজ্জামান রতন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ, রাজপাড়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান বাবু প্রমুখ।

এছাড়াও অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদমহানগর আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সোহেল, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুম মবিন সবুজ, সাবেক সভাপতি নাঈমুল হুদা রানা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজীব, রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাসিক দত্ত, নগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ, সাবেক ছাত্রনেতা আবু রায়হান মাসুদ, শ্রমিক নেতা আলাউদ্দিন শেখ ভুলু, অ্যাডভোকেট রাশেদুন নবী প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ডাবলু সরকারের একটি অশ্লীল ভিডিও নেট দুনিয়ার ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও বিভিন্ন লোকজনের কাছে হোয়াটসঅ্যাপেও পাঠানো হয় ভিডিওটি। এ ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় ডাবলু সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন।

মামলার এজাহারে তিনি দাবি করেন, একটি অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক পেজে কে বা কারা তাঁকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে এডিটিংয়ের মাধ্যমে মিথ্যা, অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে ডাবলু সরকারের সম্মানহানি করার চেষ্টা করছে।
ডাবলু সরকারের অশ্লীল ভিডিও ভাইরালের পর থেকে তাকে দল থেকে বহিস্কারের দাবি উঠে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে। এর আগে তিন দফায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে তাকে বহিস্কারের দাবি জানানো হয়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ